Breast Cancer Recurrence

ফের ক্যানসারে আক্রান্ত আয়ুষ্মান-ঘরনি তাহিরা, সেরে যাওয়ার কত বছর পর ফিরতে পারে স্তন ক্যানসার?

স্তন ক্যানসার সেরে গেলেও ফিরে আসে অনেক সময়েই। কাদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা থাকে, কত বছর পরে আবারও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে, সে বিষয়ে মতামত দিলেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৫৮
Tahira Kashyaps breast cancer has relapsed after 7 years, What is the average time for recurrence

কত বছরের মধ্যে স্তন ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে? ফাইল চিত্র।

স্তন ক্যানসার অত সহজে রেহাই দেয় না। চিকিৎসায় সেরে হয়তো গেল, কিন্তু আবারও তার ফিরে আসার ঝুঁকি থেকেই যায়। ঠিক যেমন ভাবে দ্বিতীয় বারও স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানার স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপ। রোগমু্ক্তির পরেও নিষ্কৃতি পেলেন না। সাত বছর পরে আবারও কর্কট রোগ জাঁকিয়ে বসল তাঁর শরীরে। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রায়শই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অনেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে।

Advertisement

কত বছর পরে ফিরতে পারে ক্যানসার?

‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’-থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, রোগ সেরে যাওয়ার ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে সেই একই জায়গায় অথবা ভিন্ন জায়গায় ক্যানসার কোষ আবারও মাথাচাড়া দিতে পারে। অন্তত ২৫ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে ক্যানসার ফিরে আসার।

অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি স্তনের ক্যানসার সেরে যাওয়ার অন্তত ৬ বছর পরে অন্য স্তনে ফের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি হয়েছে। ‘আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি’-র গবেষণা তেমনই বলছে। সে ক্ষেত্রে বারংবার রেডিয়োথেরাপির প্রয়োগে ক্যানসার নির্মূল করার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।

কেন ফিরে আসে স্তন ক্যানসার?

ক্যানসার ফিরে আসা অনেকটাই নির্ভর করে পারিবারিক ইতিহাসের উপর। এই পুনরাবৃত্তিরও আবার রকমফের আছে। এই বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের মত, সাধারণত তিন রকম জায়গায় আবার ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে—

১) যে জায়গায় ক্যানসার হয়েছিল, সেখানেই।

২) যে জায়গায় আগে টিউমার তৈরি হয়েছিল, তার সংলগ্ন এলাকায়।

৩) রক্তের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ বাহিত হয়ে দেহের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানসার ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট’। জিনগত কারণেও ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। আবার শরীর থেকে ক্যানসার কোষ সম্পূর্ণ ভাবে দূর না হলে, সেখানে ফের অনিয়মিত বিভাজন শুরু হয়ে যায়। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে নেওয়া জিনগত বিন্যাসের নমুনা বার করে দেখা গিয়েছে, টিপি৫৩, পিআইকে৩সিএ, ইএসআর১— এই তিনটি জিনে মিউটেশন বা রাসায়নিক বদল হলে ক্যানসার ফিরে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে এক বার ক্যানসার আক্রান্ত হলে সেই রোগীর জেনেটিক পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। তাতে যদি ক্যানসার ফিরে আসার উপসর্গ দেখা দেয় বা জিনের মিউটেশন ধরা পড়ে, তা হলে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।

‘ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসার’-এর রোগীর ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা ২৫-৩২ শতাংশ। প্রতি ১০০ জন রোগীর মধ্যে ২০ জনেরই ক্যানসার ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল, এমনটাই জানালেন ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, "ক্যানসারের চিকিৎসা চলার সময়ে কেমোথেরাপিতে যে কোষগুলি নষ্ট হয় না, সেগুলির ফের অনিয়মিত বিভাজন হতে পারে। সকলের ক্ষেত্রেই যে ক্যানসার ফিরে আসবে সে সম্ভাবনা নেই। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণে ও হরমোনের তারতম্যে ক্যানসার ফিরতে পারে। সাধারণত, যে স্তনে আগে ক্যানসার ধরা পড়েছিল, সেখানেই ফের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি। "

দ্বিতীয় বার ক্যানসার হয়েছে কি না, তা কিছু শারীরিক লক্ষণেও প্রকাশ পেতে থাকে—

১) স্তনে ব্যথা,

২) স্তনের আকারে বদল

৩)সর্দিকাশি না হওয়া সত্ত্বেও শ্বাসকষ্ট

৪) স্নায়ুজনিত সমস্যা দেখা দেওয়া।

মেটাস্ট্যাটিক স্তন ক্যানসার মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দৃষ্টিও ঝাপসা হওয়া শুরু হয় রোগীর। এমন সব সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন