Microplastics in Car

গাড়ি থেকে শরীরে ঢুকছে দিনে ৬৮ হাজার প্লাস্টিকের কণা? প্রতি শ্বাসে ঘনাচ্ছে বিপদ, বাঁচার উপায় কী?

গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, বাড়ির ভিতরে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে প্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা প্রায় ৫২৮, কিন্তু গাড়ির ভিতরে তা বেড়ে হচ্ছে প্রায় ২,২৩৮।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ১৪:৪৮
The study found that the air in cars had around 2,238 particles per cubic metre

গাড়ির ভিতরে বাতাসে প্লাস্টিক, সারা দিনে কতটা ঢুকছে শরীরে? ফাইল চিত্র।

বৃষ্টিভেজা দিনে গাড়ি চেপে লং ড্রাইভে যাচ্ছেন। ভিতরে চলছে পছন্দের কোনও গান। মন বেশ ফুরফুরে। বিপদ কিন্তু ঘনাচ্ছে তলে তলে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রটি যতই উচ্চমাত্রায় চলুক না কেন, তাতে গাড়ির ভিতরের বাতাস কিন্তু বিশুদ্ধ হচ্ছে না। অজান্তেই শরীরে ঢুকছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্লাস্টিকের কণা। খাদ্যবস্ত বা জলের বোতল বা প্লাস্টিকের চায়ের কাপ থেকে শরীরে প্লাস্টিকের গুঁড়ো বা মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকছে, তা জানা ছিল। তাই বলে গাড়ির ভিতরেও মাইক্রোপ্লাস্টিক?

Advertisement

‘প্লস ওয়ান’ জার্নালে ফরাসি বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। যেখানে দাবি করা হয়েছে, গাড়ির ভিতরে ও বাড়ির ভিতরের বাতাস থেকেও প্লাস্টিক ঢুকছে শরীরে। সব মিলিয়ে প্রতি দিনে কম করেও ৬৮ হাজার প্লাস্টিকের কণা ফুসফুসে ঢুকে পড়ছে। এদের আকার ১০ থেকে ৩০০ মাইক্রোমিটার অবধি। আর সেই সব প্লাস্টিকের গুঁড়ো এতটাই বিষাক্ত যে তারা ফুসফুসের কোষ ধীরে ধীরে নষ্ট করছে। রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে শরীরের যত্রতত্র। আর যেখানেই পৌঁছচ্ছে, সেই জায়গাকেই বিষাক্ত করে তুলছে।

গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, বাড়ির ভিতরে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা প্রায় ৫২৮, কিন্তু গাড়ির ভিতরে তা বেড়ে হচ্ছে প্রায় ২,২৩৮। কখনও তারও বেশি। অর্থাৎ, প্রতি দিন যাঁরা গাড়ি চাপছেন, তাঁদের শরীরে কী পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকছে, তা বলাই বাহুল্য।

প্লাস্টিকের এই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণাগুলি কিন্তু ভারী বিপজ্জনক। এরা চট করে রক্তে মিশে যায় এবং সটান মস্তিষ্কে গিয়ে জমতে থাকে। আবার লিভার ও কিডনিতে গিয়েও সেঁধিয়ে যায়। ফলে এখন যে নানা রকম লিভারের রোগ, ক্রনিক কিডনির রোগ বা স্নায়বিক রোগের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে, তার নেপথ্যে কিন্তু একটিই কারণ, এই মাইক্রোপ্লাস্টিক। অনেককেই বলতে শুনবেন, তিনি সুষম ডায়েট করেন, শরীরচর্চাও করেন, সিগারেট-মদ ছুঁয়েও দেখেন না, তার পরেও ক্যানসার হয়েছে বা স্মৃতিনাশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নেপথ্যের কারণটি এই প্লাস্টিক-সমৃদ্ধ বিষাক্ত বাতাস।

তা হলে বাঁচার উপায় কী?

গাড়ির ভিতরের বাতাস পরিশোধিত রাখতে ভাল মানের কেবিন এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করা উচিত। এই ফিল্টার বাইরে থেকে আসা ধুলোধোঁয়া, মাইক্রোপ্লাস্টিক ছেঁকে বাতাস শুদ্ধ করতে পারে।

গাড়ির ভিতর নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। বিশেষ করে ড্যাশবোর্ড, সিট নিয়ম করে মুছতে হবে।

গাড়ির জন্য তৈরি পোর্টেবল এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন, যা মাইক্রোপ্লাস্টিক শুষে নিতে পারে।

গাড়ির ভেতরে প্লাস্টিকের বোতল বা অন্যান্য প্লাস্টিকের জিনিসপত্র কম ব্যবহার করুন। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলি ক্ষয়ে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে।

কিছু আধুনিক গাড়িতে কেবিন ফিল্টারের সঙ্গে অ্যাক্টিভেটেড কার্বনের একটি স্তর থাকে। এই কার্বন স্তরটি শুধুমাত্র দূষিত কণা নয়, বরং দুর্গন্ধ এবং কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক গ্যাস (যেমন ওজ়োন, সালফার ডাইঅক্সাইড) শোষণ করে বাতাসকে আরও বেশি পরিশুদ্ধ রাখে।

Advertisement
আরও পড়ুন