Covid-19 JN.1 Variant

করোনার নতুন রূপ কি বিপজ্জনক? কেন দ্রুত ছড়াচ্ছে? কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে মতামত দিলেন চিকিৎসকেরা

দিল্লি, তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র, এমনকি বাংলাতেও করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। লোকজনের মনে একটাই চিন্তা, তা হলে কি আরও এক বার করোনার ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে? ভয়ের কারণ সত্যিই আছে কি না,তা নিয়ে মতামত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৫ ১২:৫৭
What is the JN.1 Variant, what makes Covid JN.1 variant different from previous variants

কতটা ছোঁয়াচে নয়া অবতার? ভয়ের কারণ আছে কি? ফাইল চিত্র।

আবার সে এসেছে ফিরিয়া। তবে সেই পুরনো রূপে, না কি নতুন কোনও অবতারে? ক্রমাগত নিজেকে বদলে নিত্যনতুন প্রজাতির জন্ম দিচ্ছে কোভিড। তার আরও কিছু নতুন রূপ ও উপরূপ চলে এসেছে ইতিমধ্যেই। চারপাশে লোকজন আক্রান্তও হচ্ছেন। আর তা নিয়ে আতঙ্কও বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, শুক্রবার অবধি দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। চার জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে। দিল্লি, তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র, এমনকি বাংলাতেও করোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। মানুষের মনে একটাই চিন্তা, তা হলে কি আরও এক বার করোনার ঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে? ভয়ের কারণ সত্যিই আছে কি না, সে নিয়ে মতামত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

করোনার নতুন রূপ জেএন.১ আসলে কী?

দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ-এর রিপোর্ট বলছে, জেএন.১ ওমিক্রনেরই বিবর্তিত রূপ। এর নাম ‘পিরোলা’। ওমিক্রনের বিএ.২.৮৬ প্রজাতির বিবর্তন ঘটে এই উপরূপের জন্ম হয়েছে। ২০২৩ সালেও জেএন.১ সাবভ্যারিয়ান্ট বা উপরূপের নাম শোনা গিয়েছিল। ফের এই প্রজাতির আগমন ঘটেছে বলেই জানাচ্ছেন গবেষকেরা।

এ বছরের মে মাসে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের বিভিন্ন জায়গায় করোনার জেএন.১ উপরূপটি খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। বহু মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় সে সময়ে। যদিও এ দেশে তখনও কোভিডের প্রাদুর্ভাব তেমন ভাবে দেখা যায়নি। ধীরে ধীরে জেএন.১ উপরূপটি বিবর্তিত হয়ে আরও দুই প্রজাতি তৈরি করে ফেলে, যাদের নাম এলএফ.৭ ও এনবি.১.৮। এখন শোনা যাচ্ছে, জেএন.১-এর সঙ্গেই নতুন রূপ দু’টিও ঢুকে পড়েছে এ দেশে।

কতটা ছোঁয়াচে নয়া অবতার?

করোনার জেএন.১ উপরূপটি খুব তাড়াতাড়ি বিবর্তিত হতে পারে। এর স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন (জিনের রাসায়নিক বদল) খুব দ্রুত ঘটতে পারেন বলেই জানালেন চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। করোনার এই অবতার খুব বিপজ্জনক না হলেও, তার ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা খুব বেশি। এর কারণই হল সেই স্পাইক প্রোটিন। করোনাভাইরাসের (সার্স-কোভ-২)-এর যে ছবি দেখা যায় তার আকার গোলাকার, বাইরেটা কাঁটার মতো শুঁড় রয়েছে। ওই শুঁড়গুলিই হল স্পাইক। করোনা আরএনএ ভাইরাস। কাজেই এর আরএনএ জিনোমকে বেষ্টন করে আছে লিপিডের স্তর। তার বাইরে মেমব্রেন বা পর্দা। এর মধ্যে তিন ধরনের প্রোটিন থাকে— ১) মেমব্রেন প্রোটিন (এম) ২) এনভেলপ প্রোটিন (ই) ও ৩) স্পাইক প্রোটিন (এস)। এই স্পাইক প্রোটিন ১১৬০ থেকে ১৪০০ অ্যামাইনো অ্যাসিড নিয়ে তৈরি, যাদের মধ্যে বদলটা ঘটে। ফলে প্রোটিনের স্তরে মিউটেশন হয় ও নতুন নতুন ভাইরাস প্রজাতির জন্ম হয়। জানা যাচ্ছে, জেএন.১ উপরূপের স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে, ফলে দ্রুত বংশবিস্তার করছে এই ভাইরাস।

করোনা নিয়ে ভয় কতটা?

বাংলায় এখনও অবধি ৬২২ জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এক জনের মৃত্যুর খবরও মিলেছে। তবে এই মৃত্যু যে কেবল করোনার কারণেই হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না বলেই মত চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের। তিনি বলেন, “করোনার তিনটি ধরন আছে— ছোঁয়াচে, রোগ সৃষ্টিকারী ও মারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। এখন যে প্রজাতি ছড়াচ্ছে, তা এই তিনটির মধ্যে কোনটি সেটা এখনও বলা যাচ্ছে না। করোনা আক্রান্তদের শরীর থেকে নেওয়া নমুনার জিনগত বিশ্লেষণ করে, তা বোঝার চেষ্টা চলছে। কাজেই এখনই এই করোনাকে বিপজ্জনক বলা যাবে না। তবে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ” একই মত চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলেরও।

ভাইরাস বদলালে নতুন প্রজাতি তো আসবেই, এ নিয়ে এত মাথাব্যথার কিছু নেই। গত ঢেউতেও ওমিক্রনের আড়ালে ঢুকে পড়েছিল ডেল্টার ভয়ঙ্কর প্রজাতি, এ বারও তেমন কিছু হওয়া অসম্ভব নয়। রোগের শিকার যত বাড়ে, ভাইরাসও তত নিজেকে বদলে ফেলে। যাঁরা উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গে ভুগছেন, তাঁরা পরীক্ষা না করিয়ে আশেপাশের মানুষের মধ্যে কোভিড ছড়াচ্ছেন। ধরে নিচ্ছেন, অন্যের ক্ষতি হবে না, হলেও এমন কিছু বাড়াবাড়ি হবে না। এটা ঠিক যে, করোনা আগের মতো মারাত্মক রূপে এখনও দেখা দেয়নি, কিন্তু এ-ও ঠিক যে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি দুর্বল থাকে, হার্টের রোগ, ডায়াবিটিস বা কিডনির রোগ থাকে, তা হলে অনেক বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।

কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে?

জ্বর, সারা শরীরে ব্যথা, গলাব্যথা, অকারণ দুর্বলতা, ডায়েরিয়া, পেশিতে টান ধরা বা যন্ত্রণা বা অন্য উপসর্গ থাকলে আরটি-পিসিআর টেস্ট বা র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিজের চিকিৎসা করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকাই ভাল। শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন থেরাপি শুরু করতে হবে।

বায়োফায়ারের ‘রেসপিরেটরি ভাইরাস প্যানেল টেস্ট’ এখন সহজলভ্য। এতে নাক বা গলা থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয় শ্বাসনালিতে কী কী ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। আগে এই পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের টেস্ট করা হত না। তবে এখন অন্যান্য ভাইরাসের সঙ্গে কোভিডও ধরা পড়বে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। খুব তাড়াতাড়ি ও নির্ভুল তথ্য পেতে এই টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে, আপনি কোভিড আক্রান্ত কি না। ফল পজিটিভ এলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই চিকিৎসা করাতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন