লাল, হলুদ না সবুজ— কোন আপেলে কতটা উপকার? ছবি : সংগৃহীত।
সুস্থ থাকার নিয়মগুলিকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে রোজ একটা করে আপেল খাবেন বলে স্থির করেছেন। কিন্তু শুধু আপেল খেলেই তো হল না! কোন আপেল শরীরের জন্য কতটা উপকারী, তা-ও জানতে হবে। আপেলের নানা রকমফের হয়। ফলের রঙের হেরফের, স্বাদ আর তার শাঁসের তফাত বুঝে আলাদা আলাদা নামকরণও হয় আপেলের। শুধু লাল আপেলেরই ৭-৮ রকমের নাম আছে। কোনওটি কাশ্মীরের আমব্রি আপেল, আইরিশ পিচ, কোনওটির নাম ম্যাকিনটস, যার ফলন হয় উত্তরাখণ্ডে। সংকর প্রজাতির টুকটুকে লাল চওবাটিয়া অনুপম নামের এক আপেলও রয়েছে। যার চাষ হয় উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে। এ ছাড়া আছে মধ্য ভারতের সুনেহরি আপেল, দক্ষিণের পারলিন’স বিউটি, ওয়াইনস্যাপ আপেল। তবে এ সবই হল নানা ধরনের লাল আপেল। সাধারণের চোখে এই সব তফাত ধরা পড়ার কথা নয়। সাদা চোখে মূলত তিন ধরনের আপেল আলাদা করা যাবে— একটি লাল, দ্বিতীয়টি সবুজ এবং তৃতীয়টি হলুদ।
এর মধ্যে লাল আপেলের নানা নাম ইতিমধ্যেই জেনেছেন। হলুদ আপেলের নাম হল গোল্ডেন ডিলিশাস। সবুজ আপেলের নাম হল গ্র্যানি স্মিথ। এই তিন ধরনের আপেল দেখতে যেমন আলাদা, তেমনই এর পুষ্টিগুণেও তফাত রয়েছে।
লাল আপেল
১। লাল আপেলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসের পরিমাণ বেশি। বিশেষ করে এতে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে বেশি।
২। অ্যান্থোসায়ানিন একটি অত্যন্ত জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট।
৩। অ্যান্থোসায়ানিন হার্ট এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং মেধার বিকাশে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমায়।
৪। অ্যান্থোসায়ানিন অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, প্রদাহজনিত রোগ এবং অন্য আরও অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যান্থোসায়ানিনে ক্যানসার রোধক উপাদানও রয়েছে। এ ছাড়া এটি ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও উপকারী। এমনকি, কিছু কিছু গবেষণা এ-ও বলছে যে, লাল আপেলে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন হজমে সহায়ক ব্যাক্টেরিয়াকে ভাল রাখতে পারে।
সবুজ আপেল
১। সবুজ আপেলে চিনি বা শর্করার পরিমাণ থাকে কম। স্বাভাবিক ভাবেই এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে দেয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
২। লাল আপেলের থেকে সবুজ আপেলে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। যার মধ্যে অন্যতম হল পেকটিন। যেটি হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশপাশি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
৩। সবুজ আপেলে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং কে-র পরিমাণ লাল আপেলের থেকে বেশি।
৪। ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ যদি লক্ষ্য হয়, তবে সবুজ আপেল আদর্শ।
হলুদ আপেল
১। হলুদ আপেলে ক্যারোটিনয়েড বেশি থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
২। ক্যারোটিনয়েডও এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে হওয়া কোষের ক্ষতি রোধ করে।
৩। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্যারোটিয়েড উপকারী। বিশেষ করে সূর্যের তাপ থেকে হওয়া ত্বকের ক্ষতি রোধ করতে পারে ক্যারোটিনয়েড।
৪। কিছু কিছু গবেষণা বলছে ফুসফুস, মুখগহ্বর এবং জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ক্যারোটিনয়েড।
অর্থাৎ, লাল-সবুজ-হলুদ— তিন ধরনের আপেলেরই নিজস্ব গুণাগুণ আছে। সে ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যে বৈশিষ্ট্যগুলি বেশি উপকারী, তা বুঝেই বেছে নিন রোজ খাওয়ার আপেল।