কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর? ছবি : সংগৃহীত।
উৎস একটিই— গম। কিন্তু প্রক্রিয়াকরণের তফাতে তা থেকে তৈরি হয় দু’টি আালাদা আলাদা খাবার। একটির নাম সুজি্ অন্যটি আটা। এই সুজি আর আটার পুষ্টিগুণ আলাদা। আলাদা শরীরে এর প্রভাবও।
এমনিতে দু’টি খাবারেই রয়েছে শর্করা। তাই ওজন কমাতে হলে বা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অনেকেই ওই দুই খাবার খাওয়া খানিক কমিয়ে দেন। তবে যেহেতু দু’টি খাবারই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অল্পবিস্তর থাকে, তাই পুরোপুরি বাদ দেওয়াও মুশকিল।
প্রাতরাশে সুজির হালুয়া, উপমা, ইডলি, দোসা খান অনেকেই। পাস্তা তৈরিতেও সুজি ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে। অন্য দিকে, আটা দিয়ে বানানো হয় রুটি, পুরি, পরোটা। দু’ধরনের খাবারই ভরিয়ে রাখে পেট। কিন্তু কোনটি খেলে ওজন কমানো বা ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ভাল ভাবে? দিল্লির পুষ্টিবিদ গুঞ্জন তানেজা তুলনামূলক বিচার করে বিষয়টি বুঝিয়েছেন।
১। পুষ্টিগুণ
সুজি: ডুরম নামের এক ধরনের গমকে ভাঙিয়ে তা থেকে সুজি তৈরি হয়। এতে ফাইবারের মাত্রা থাকে কম। যেহেতু সুজি ভাঙানোর সময় ভুষি এবং গমের অঙ্কুরোদ্গমের অংশটি বাদ দেওয়া হয় তাই এর পুষ্টি কিছুটা কম।
আটা: আটায় যেহেতু ভুষি, অঙ্কুরিত হওয়ার অংশ, সবটাই থাকে, তাই এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে। পুষ্টিও থাকে বেশি। এতে থাকে নানা রকমের ভিটামিন এবং খনিজ। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম ও রাইবোফ্ল্যাভিন, ফোলেটের মতো ভিটামিন।
২। হজম করার ক্ষমতা
সুজি: এটি হজম হয় সহজে। যাঁদের অন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, হজমক্ষমতা দুর্বল, সুজি তাঁদের পেটের জন্য ভাল। সহজপাচ্য।
আটা: আটা তুলনায় একটু ভারী। এটি হজম করতে সুজির থেকে বেশি সময় লাগে। কারও বেশি ফাইবার হজম করার ক্ষমতা না থাকলে আটা থেকে পেট ফাঁপার সমস্যাও হতে পারে।
৩। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে
সুজি: সুজির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। ফলে এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে পারে। তাই সুজি খেলে তার সঙ্গে অবশ্যই প্রোটিন খাওয়া উচিত। ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে খালি পেটে সুজি খাওয়াও ঠিক নয়। কারণ তাতে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
আটা: আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই আটার রুটি খেলে রক্তে শর্করা মেশে ধীরে ধীরে। হঠাৎ অনেকখানি বেড়ে যায় না। তাই শর্করা নিয়ন্ত্রণ লক্ষ্য হলে প্রাতরাশে সুজির বদলে আটা খাওয়াই ভাল, জানাচ্ছেন গুঞ্জন।
৪। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে
সুজি: ওজন কমানোর ডায়েটে সব সময়েই কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের খাবার রাখতে বলেন পুষ্টিবিদেরা। কারণ তাতে সুগার স্পাইক অর্থাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায় না। সুগার স্পাইক হলে মিষ্টি এবং ভাজাভুজি খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়। বেশি খেয়ে ফেলার ঝুঁকি বাড়ে। তা থেকে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও তৈরি হয়। তাই ওজন কমাতে হলে সুজি বেশি না খাওয়াই ভাল।
আটা: আটায় রয়েছে ফাইবার। যা ওজন কমানোর জন্য জরুরি। তাই সুজি আর আটার মধ্যে যদি কোনও একটি যদি বেছে নিতে হয়, তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আটাই ভাল।
৫। দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে হলে
সুজি: সুজিতে যেহেতু সিম্পল কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি, তাই এটি দ্রুত শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
আটা: আটা যেহেতু হজম হতে সময় লাগে, তাই এর থেকে দ্রুত শক্তি পাওয়ার আশা কম।