—প্রতীকী চিত্র।
কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না-হলে ‘নোটা’য় ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে বৈদ্যুতিন ভোট-যন্ত্রে (ইভিএম)। কাউকে সমর্থন না-করার মতকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়। কিন্তু ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনে (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় তেমন কিছু কি করা যায়? নতুন বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে কেরল!
পশ্চিমবঙ্গ-সহ যে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এখন এসআইআর চলছে, তার মধ্যে রয়েছে কেরলও। দক্ষিণী এই রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা দুই কোটি ৭৮ লক্ষ ৫০ হাজার ৮৫৫। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত দুই কোটি ৬৯ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৩ জনের ‘এনুমারেশন ফর্ম’ বা গণনা-পত্র সংগ্রহ করার পরে ডিজিটাইজ়ড করে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ভোটারের ৯৬.৮৯%-এর গণনা-পত্রের তথ্য কমিশনের অ্যাপে উঠে গিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কিছু ভোটার আছেন, যাঁরা হয় বুথ লেভল অফিসারের (বিএলও) কাছে গণনা-পত্র নিতে অস্বীকার করেছেন। অথবা ফর্ম পূরণ করে জমা দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন! কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কেরলের ২০টি বিধানসভা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা এমন ভোটারের সংখ্যা শনিবার পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৮৬৬ জন। এঁরা যে হেতু ‘নিখোঁজ’ নন, তাই কমিশনের খাতায় ‘আদার্স’ শ্রেণিতে এঁদের নাম আপাতত হিসেব করা থাকছে।
এসআইআর-এর নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম থাকা যে সব ব্যক্তির হদিস বিএলও-রা পাচ্ছেন না, তাঁদের নাম নতুন খসড়া তালিকায় বাদ যাবে। বিভাগ ধরে ধরে সেই তথ্য আলাদা করা হচ্ছে সর্বত্রই। কেরলে যেমন এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৩৯ হাজার ২০৫ জন পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিত বলে পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মৃত ভোটারের সংখ্যা ৬ লক্ষ ১১ হাজার ৫৫৯ জন। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায়নি বা যোগাযোগ করা যায়নি, এমন ভোটারের সংখ্যা এখনও অবধি ৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৮২ জন। এঁদের ‘নিখোঁজ’ বলে দেখানো হবে খসড়া তালিকায়। আবার এক লক্ষ ১২ হাজার ৫৬৯ জন একাধিক জায়গায় নথিভুক্ত আছেন, তাঁদের একটি জায়গা বেছে নিতে হবে। কিন্তু ওই ৪৫ হাজার ৮৬৬ জন?
কেরলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রতন ইউ কেলকরের মতে, রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়ায় সাড়া ভালই মিলেছে, অগ্রগতি ভাল। ফর্ম নিতে বা পূরণ করতে চাইছেন না, এমন ব্যক্তির সংখ্যা মোট ভোটারের মাত্রই ০.১৬%। ভোটারের কাছ থেকে গণনা-পত্র শেষ পর্যন্ত ফেরত না-এলে নিয়ম অনুযায়ী খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম রাখা যায় না। তবে এই ক্ষেত্রে শুনানি-পর্বে তাঁদের আবার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখনও কমিশনে আলোচনাসাপেক্ষ। কেলকরের বক্তব্য, ‘‘কেরলে গণনা-পত্র পূরণের সময় বাড়িয়ে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে ২৩ ডিসেম্বর। ফলে, একটু সময় থাকছে। বিএলও-দের বলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের বিএলএ-দের (বুথ লেভল এজেন্ট) সঙ্গে নিয়ে নিখোঁজ, স্থানান্তরিত ভোটারদের বিষয়ে তথ্য যাচাই করতে। যাঁরা ফর্ম পূরণ করে দিচ্ছেন না, তাঁদের সঙ্গেও ফের কথা বলার চেষ্টা হবে।’’
এই প্রশ্নে আতান্তরে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। শাসক সিপিএমের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ভি শিবনকুট্টির কথায়, ‘‘নিখোঁজ বা স্থানান্তরিতদের কথা আলাদা। কিন্তু নিজেদের এলাকায় থেকেও কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।’’ বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের ভি ডি সতীশনের মতে, ‘‘ভোটারদের একটা অংশ কেন ফর্ম পূরণ করতে চাইছেন না, দলীয় স্তরে আমরাও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’
পরিস্থিতি সহজ করার জন্য বিএলও-দের প্রতি সিইও-র নির্দেশ, কোনও ভোটার তাঁর গণনা-পত্রে নিজে কেবল সই করে দিলেও সেই ফর্ম গ্রহণ করতে হবে এবং খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম বাদ দেওয়া যাবে না। ফর্মের বাকি অংশ কমিশনের কাছে থাকা তথ্য থেকে পূরণ করে আপলোড করতে বলা হয়েছে।