Plane Crash in Ahmedabad

ওড়ার পর শেষ ৩২ সেকেন্ড! কী কী ঘটেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে, সেকেন্ড ধরে ধরেই জানাল প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট

রিপোর্ট বলছে, এক সেকেন্ডের ব্যবধানে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের দু’টি ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর তা আবার চালু হয়। কিন্তু তাতেও এড়ানো যায়নি বিপত্তি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ১৬:৫৭
সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুর্ঘটনার মুহূর্ত।

সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দুর্ঘটনার মুহূর্ত। — ফাইল চিত্র।

অহমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার এক মাসের মাথায় প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্ট বলছে, বিমান ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ হয়ে গিয়েছিল সুইচ। এর ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানির জোগান বন্ধ হয়ে যায়, যা বিপত্তি ডেকে আনে। মুহূর্তের মধ্যে বিমানের গতি এবং উচ্চতা কমতে থাকে। তার পরে পাইলটদের চেষ্টায় আবার জ্বালানির সুইচ চালু করা হয়। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হয়নি। ওড়ার পরে ৩২ সেকেন্ড ধরে প্রতি মুহূর্তে ঠিক কী ঘটেছিল সেই বিমানে, তা এখন প্রকাশ্যে।

Advertisement

১২ জুন অহমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের অদূরে গ্যাটউইকের উদ্দেশে উড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং বিমানটি। ওড়ার কয়েক মিনিটের মাথায় মেঘানিনগরে লোকালয়ে ভেঙে পড়ে সেটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬০ জন। তাঁদের মধ্যে ২৪১ জন বিমানে সওয়ার ছিলেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে বিমানের ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে একটি ছিল ককপিট ভয়েস রেকর্ডার। দুর্ঘটনার মুহূর্তে ককপিটে পাইলটদের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, তা এই যন্ত্রে রেকর্ড হয়। তা থেকেই জানা গিয়েছে, বিমানের জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গেলেও আবার তা চালু হয়। কিন্তু তার পরেও এড়ানো যায়নি দুর্ঘটনা। কেন? কী ভাবে বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল বিমানটি? অহমদাবাদ বিমানবন্দরের বে থেকে বার হওয়ার পরে কী কী হয়েছিল, প্রত্যেক সেকেন্ডে কী ঘটেছিল, সেই খতিয়ান রয়েছে রিপোর্টে।

১২ জুন সকাল ১১টা ১৭ মিনিট: দিল্লি থেকে অহমদাবাদে অবতরণ করে এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার ভিটি-এএনবি।

দুপুর ১টা ১৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড: বিমানবন্দরের ৩৪ নম্বর বে ছেড়ে বার হয় বিমান।

১টা ২৫ মিনিট ১৫ সেকেন্ড: ‘ট্যাক্সিওয়ে’ চলার ছাড়পত্রের অনুরোধ জানায় বিমান। এই ছাড়পত্র দেয় এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল। ট্যাক্সিওয়ে আর৪ (টার্মিনাল থেকে রানওয়েতে যাওয়ার পথ) দিয়ে এর পর বে থেকে ২৩ নম্বর রানওয়েতে যায় বিমান। সেখানে উড়ানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

১টা ৩২ মিনিট ৩ সেকেন্ড: গ্রাউন্ড (ট্যাক্সিওয়েতে বিমানের গতিবিধি পরিচালনা করে) থেকে টাওয়ার কন্ট্রোল (রানওয়েতে বিমানের গতিবিধি পরিচালনা করে)-এর অধীনে পাঠানো হয় বিমানটিকে। উড়ান এবং অবতরণের জন্য এই টাওয়ার কন্ট্রোলেই যোগাযোগ করেন পাইলট।

১টা ৩৭ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড: উড়ানের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

১টা ৩৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড: বিমানের চাকা ঘুরতে শুরু করে।

১টা ৩৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড: বিমান উড়তে শুরু করে। রিপোর্ট বলছে, বিমানের ‘এয়ার/গ্রাউন্ড সেনসর’ এয়ার মোড অর্থাৎ উড়ান মোডে রূপান্তরিত হয়। বিমান উড়তে থাকে।

১টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ড: বিমানের গতি হয় সর্বোচ্চ, ১৮০ নটস। রিপোর্ট বলছে, ইঞ্জিন ১ এবং ইঞ্জিন ২-এর জ্বালানি সুইচ রান (চালু) থেকে কাটঅফ (বন্ধ) অবস্থানে চলে যায়। অর্থাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দু’টি ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে যায়। ইঞ্জিন এন১ এবং এন২ ধীরে চলতে থাকে। কারণ, জ্বালানি জোগান বন্ধ হয়ে যায়।

রিপোর্ট বলছে, ‘‘ককপিটের ভয়েস রেকর্ডারে এক পাইলটকে অন্য পাইলটের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, কেন তিনি সুইচ বন্ধ করলেন। দ্বিতীয় পাইলট জানান, তিনি সুইচ বন্ধ করেননি।’’ রিপোর্টে প্রকাশ, এয়ারপোর্টের যে সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, র‌্যাম এয়ার টারবাইন (আরএটি) সক্রিয় করা হয়েছিল উড়ানের পরেই। বিমানের গতির কারণে যে শক্তি তৈরি হয়, তা জোগান দেয় এই আরএটি। বিমানের গতি কমলে শক্তি জোগানও কমে যায়। রিপোর্ট বলছে, বিমানবন্দরের প্রাচীর পেরিয়ে যাওয়ার আগেই নামতে থাকে বিমান।

১টা ৩৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড: দু’টো ইঞ্জিনের শক্তিই কমে যায়। আরএটি হাইড্রলিক পাম্প ‘হাইড্রোলিক’ শক্তি জোগাতে শুরু করে (এই পাম্প তেলের চাপ এবং প্রবাহ তৈরি করে তা মোটরে জোগান দেয়)।

১টা ৩৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড: এক নম্বর ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ আবার চালু হয় (কাটঅফ থেকে রান)।

১টা ৩৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড: দু’নম্বর ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচও চালু হয় (কাটঅফ থেকে রান)।

রিপোর্ট বলছে, জ্বালানি নিয়ন্ত্রণের সুইচ যখন চালু হয়, তখন দু’টি ইঞ্জিনেরই ‘ফুল অথরিটি ডুয়াল ইঞ্জিন কন্ট্রোল’ (এফএডিইসি) আবার জ্বলে ওঠে। সক্রিয় হয় যন্ত্র।

এক নম্বর ইঞ্জিনের যন্ত্র (কোর ডেসিলারেশন) বন্ধ হয়ে আবার চালু হওয়ার চেষ্টা করে। দু’নম্বর ইঞ্জিন চালু হলেও গতি হ্রাস রোধ করতে পারেনি। বার বার জ্বালানি জোগান দিয়ে গতিবেগ বৃদ্ধির চেষ্টা করে।

১টা ৩৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড: পাইলট ‘মে ডে মে ডে মে ডে’ (সাহায্য চাই) সঙ্কেত পাঠান।

১টা ৩৯ মিনিট ১১ সেকেন্ড: ডেটা রেকর্ড বন্ধ হয়।

১টা ৪৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড: বিমানবন্দর থেকে দমকলকর্মীরা ছোটেন ঘটনাস্থলের উদ্দেশে।

Advertisement
আরও পড়ুন