Tiger Death

দশ মাসে দেশে মৃত ১২৫টি বাঘ

২০২২ সালে দেশের বাঘ সুমারির হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট ৩১৬৭টি বাঘ ছিল। তার মধ্যে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এনটিসিএ সূত্রের দাবি, এর মধ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ২৫টি বাঘ চোরাশিকারিরা মেরেছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৪

—প্রতীকী চিত্র।

চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে দেশের ১২৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। যা কার্যত গত বছরের সার্বিক বাঘের মৃত্যুর সমান। ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) সূত্রের খবর, এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত মৃত ১২৫টি বাঘের মধ্যে সব থেকে বেশি বাঘ মারা গিয়েছে মধ্যপ্রদেশে। তালিকার উপরের দিকে আছে মহারাষ্ট্রও। পশ্চিমবঙ্গের কোনও বাঘের মৃত্যুর কথা এনটিসিএ-র তথ্য ভান্ডারে নেই। প্রসঙ্গত, এই হিসাব অরণ্যবাসী বাঘের। ১২৫টির মধ্যে ক’টি বাঘ স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়েছে এবং কতগুলির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, সে ব্যাপারে এখনও সরকারি হিসাব প্রকাশ করেনি এনটিসিএ। বন দফতরের কর্তাদের দাবি, বছরের শেষে সার্বিক হিসাব হলে তখন এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

২০২২ সালে দেশের বাঘ সুমারির হিসাব অনুযায়ী দেশে মোট ৩১৬৭টি বাঘ ছিল। তার মধ্যে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ৫৫৫টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এনটিসিএ সূত্রের দাবি, এর মধ্যে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ২৫টি বাঘ চোরাশিকারিরা মেরেছে। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৮টি বাঘ চোরাশিকারিদের হাতে মারা গিয়েছে। এখানেই বাঘের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণপ্রেমী সংগঠন। এনটিসিএ-র তথ্য থেকেই তারা বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩৭৯টি বাঘের মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা যায়নি। সেগুলিকে ‘যাচাই করা হচ্ছে’ (আন্ডার স্ক্রুটিনি) গোত্রে রাখা হয়েছে।

অনেকেরই বক্তব্য, ওই ৩৭৯টি বাঘের মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত হলে স্বাভাবিক মৃত্যু, অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং চোরাশিকারের পরিসংখ্যান বদলে যেতে পারে। বিষাক্ত কোনও খাবার খেয়ে বা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে মৃত্যুর পিছনেও চোরাশিকারিদের ভূমিকা থাকছে কি না, তা-ও যাচাই করা প্রয়োজন বলে দাবি করছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলছেন, ‘‘আজকাল বাঘ মারতে বিষ প্রয়োগ বা বিদ্যুতের তারের ফাঁদ পাতা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বাঘ পিটিয়ে মারার ঘটনাও ঘটছে। বাঘের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঠেকাতে অরণ্য এলাকার সঙ্কোচন ঠেকানো জরুরি। তাতে শুধু বাঘ নয়, সার্বিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা পাবে।’’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে হাজির হওয়া একটি বাঘকে বর্শা দিয়ে গেঁথে মেরেছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

এনটিসিএ সূত্রের অবশ্য দাবি, আগের তুলনায় চোরাশিকার অনেক কমেছে। ২০১৮ সালে দেশে ৩৪টি বাঘ চোরাশিকারিদের হাতে প্রাণ দিয়েছিল। ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ১৬৯টি বাঘের চোরাশিকার হয়েছিল। দেশে বাঘ আছে, এমন জঙ্গলের নিরাপত্তাও আগের থেকে বেড়েছে। প্রতিটি বাঘের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশদ ময়না তদন্ত এবং অন্য রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তবে মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা হয়। রাজ্যগুলি থেকে সেই রিপোর্ট আসতে সময় লাগে। তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে কোনও সন্দেহের জায়গা থাকলেইসেটিকে ‘চোরাশিকার’ হিসেবে চিহ্নিত করে এনটিসিএ।

আরও পড়ুন