Delhi Blast

গত বছর থেকেই হন্যে হয়ে ‘আত্মঘাতী বোমারু’ খুঁজছিলেন উমরেরা! দিল্লিকাণ্ডে ধৃতের জবানবন্দিতে উঠে এল নয়া তথ্য

গোয়েন্দাদের অনুমান, প্রথম পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর ডিসেম্বর মাসে দিল্লির ছ’টি জায়গায় ধারাবাহিক বোমা হামলার ছক কষেন শাহীন, মুজাম্মিল, উমরেরা। কিন্তু তার আগেই একে একে সকলে ধরা পড়তে থাকায় সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:০৩
দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত নিহত উমর উন-নবি।

দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত নিহত উমর উন-নবি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

দেশের বিভিন্ন শহরে ধারাবাহিক বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল। সে জন্য গত বছর থেকেই হন্যে হয়ে একজন ‘আত্মঘাতী বোমারু’ বা সুইসাইড বম্বারের খোঁজ করছিল জম্মু-কাশ্মীর ও হরিয়ানার সন্ত্রাসী দল। দিল্লির লালকেল্লার অদূরে বিস্ফোরণকাণ্ডে এ বার এমনটাই জানালেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, একদল চিকিৎসকের নেতৃত্বে পরিচালিত এই ‘সফেদ কলার’ সন্ত্রাসী মডিউলটি নাকি গত বছর থেকেই একজন আত্মঘাতী বোমারুর খোঁজ করছিল। এই পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিলেন হরিয়ানার আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক উমর উম-নবি, যিনি ‘ঘাতক’ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। লালকেল্লার কাছে সেই গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। মারা যান ১৩ জন। ১০ নভেম্বরের সেই ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত একাধিক চিকিৎসক গ্রেফতার হয়েছেন। রবিবার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে একজনকে জেরা করে জানা গিয়েছে, উমর ‘কট্টর মৌলবাদী’ ছিলেন। তিনিই নাকি জোর দিয়ে বলতেন, দেশের বিভিন্ন শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা সফল করতে গেলে এক জন আত্মঘাতী বোমারু প্রয়োজন। সেই মতো গত বছর থেকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান চলছিল। সঙ্গে চলছিল পরিচিত ছাত্রদের মগজধোলাইয়ের কাজও।

ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে কুলগাঁওয়ের একটি মসজিদে ‘ডক্টর মডিউল’-এর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ওই যুবকের। তার পর তাঁকে ভুলিয়েভালিয়ে হরিয়ানার ফরিদাবাদে আল-ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভাড়া ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। যুবকের দাবি, মডিউলের বাকিরা চাইছিলেন, তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গীগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের ওভার-গ্রাউন্ড কর্মী হিসাবে যোগ দিন। কিন্তু উমরের পরিকল্পনা ছিল অন্য। তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে মগজধোলাই করে ওই যুবককে ‘আত্মঘাতী বোমারু’ হিসাবে কাজ করার জন্য রাজি করিয়ে ফেলেন। প্রথমে ঠিক হয়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রথম হামলাটি করা হবে। কিন্তু পারিবারিক সমস্যা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভেবে শেষমেশ পিছিয়ে আসেন ওই যুবক।

গোয়েন্দাদের অনুমান, প্রথম পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর ডিসেম্বর মাসে দিল্লির ছ’টি জায়গায় ধারাবাহিক বোমা হামলার ছক কষেন শাহীন, মুজাম্মিল, উমরেরা। এ নিয়ে নাকি পাঁচস্তরীয় পরিকল্পনাও সারা হয়ে গিয়েছিল। প্রথমে বিভিন্ন রাজ্যের ডাক্তারি পড়ুয়াদের একত্র করে দল বানানোর পর হরিয়ানা এবং গুরুগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিস্ফোরক তৈরির জন্য রাসায়নিক এবং আইইডি সংগ্রহ করেন তাঁরা। তার পর শুরু হয় বিস্ফোরক তৈরির কাজ। সঙ্গে বোমা হামলার সম্ভাব্য এলাকাগুলিও বেছে ফেলা হয়। চতুর্থ ধাপে মডিউলের সদস্যদের মধ্যে সেই বিস্ফোরক ভাগ করে দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনার পঞ্চম ও শেষ ধাপই ছিল নিখুঁত বোমা হামলা। আগামী ৬ ডিসেম্বর, অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার দিন দিল্লির ছ’সাতটি স্থানে পর পর বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল ওই গোষ্ঠীর। কিন্তু তার আগেই একে একে সকলে ধরা পড়তে থাকায় সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। সম্ভবত সঙ্গীদের গ্রেফতারির খবরে ভয় পেয়ে যান উমর। ১০ তারিখ সকাল থেকে গাড়িভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে দিশাহীন ভাবে ঘুরে বেড়ান তিনি। সন্ধ্যায় লালকেল্লার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটে সেই গাড়িতেই।

Advertisement
আরও পড়ুন