India Russia Oil Trade

‘রাশিয়ার তেল আর কিনছে না ভারত’! পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে দাবি করেন ট্রাম্প, ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক হয়েছে আমেরিকার আলাস্কায়। বৈঠকের পর ‘ফক্স নিউজ়’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “উনি (ভ্লাদিমির পুতিন) তেলের অন্যতম খদ্দেরকে হারিয়েছেন, অর্থাৎ ভারত— যারা রাশিয়ার তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ কিনত!’’

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ২০:৩১
Donald Trump claims India is no longer buying oil from Russia, however report of Indian oil refining PSUs tells a different story

(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আমেরিকার চাপের মুখে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা কমিয়েছে ভারত। শুক্রবার এমনটাই দাবি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নয়াদিল্লির উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা নিয়ে সুরও নরম করতে দেখা গিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। কিন্তু আদতেই কি ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে তেল কেনা কমিয়েছে ভারত? কী বলছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির গত কয়েক সপ্তাহের কেনা-বেচার পরিসংখ্যান?

Advertisement

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক হয়েছে আমেরিকার আলাস্কায়। বৈঠকের আগেই ‘ফক্স নিউজ়’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, “উনি (ভ্লাদিমির পুতিন) তেলের অন্যতম খদ্দেরকে হারিয়েছেন, অর্থাৎ ভারত— যারা রাশিয়ার তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ কিনত!’’ বৈঠকের পর ফের ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য কি ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের উপর আরও শুল্ক চাপানো হতে পারে? জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আশা করি এর পর আর শুল্ক নিয়ে ভাবতে হবে না। তবে দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে হয়তো ওটা (অতিরিক্ত শুল্ক) নিয়ে আমাকে আবার ভাবতে হতে পারে। তবে এখন নয়। আমার মনে হয়, বৈঠক খুব ভাল হয়েছে।’’

ভারতের পর রাশিয়ান তেলের আর এক ক্রেতা দেশ চিনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, চিনও প্রচুর তেল কেনে। আমি যদি অতিরিক্ত শুল্ক চাপাই, আমি চাইলে তা চাপাতেই পারি। কিন্তু ওদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা খুবই খারাপ হবে। আশা করি আমাকে এমনটা করতে হবে না।” প্রসঙ্গত, রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার জন্য ভারতের পণ্যের উপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছে আমেরিকা। আগামী ২৭ অগস্টের মধ্যে বাণিজ্য সমঝোতা না-হলে ওই শুল্কহার কার্যকর হওয়ার কথা। তবে সরাসরি কিছু না বললেও শুক্রবার ট্রাম্পের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য এখনই ভারত-সহ অন্য দেশগুলির উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করছে না আমেরিকা। ফলে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘শাস্তি’ হিসাবে ভারতের উপর চাপানো ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত হলে তা নয়াদিল্লির জন্যও স্বস্তির কারণ হবে।

তবে ট্রাম্পের দাবি কি সঠিক? আমেরিকার ভয়ে কি ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ভারত? ভারতের তেল পরিশোধনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির গত কয়েকদিনের কেনাবেচার হিসাব কিন্তু বলছে অন্য কথা! সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’-র একটি প্রতিবেদনের দাবি, এখনও রাশিয়ার কাছ থেকে দৈনিক ২০ লক্ষ ব্যারেল তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন শুল্ক ঘোষণার পরেও রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এএস সাহনি জানান, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি। বরং অর্থনৈতিক কারণেই রাশিয়ার কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে নয়াদিল্লি। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-র আর এক রিপোর্ট বলছে, এখনও দেশে আমদানি করা অশোধিত তেলের সিংহভাগ আসে রাশিয়া থেকে। গত পাঁচ বছরে তা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ২০২১-২২ সালে ৪০ লক্ষ টন তেল কেনা হয়েছিল; গত অর্থবর্ষে হয়েছে তা বেড়ে হয়েছে ৮.৮ কোটি টন। চলতি অর্থবর্ষে এপ্রিল মাসের পর থেকে এখনও পর্যন্ত তেল কেনা হয়েছে ৪ কোটি টন। ফলে চলতি অর্থবর্ষে রাশিয়ার থেকে তেল আমদানি কমবে না, বরং আরও বাড়তে পারে। স্টেট ব্যাঙ্কের রিপোর্টের আরও দাবি, ভারত যদি রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তা হলে তেলবাবদ ভারতের খরচ চলতি অর্থবর্ষে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৭৮,৮৮৬ কোটি টাকা) বেড়ে যাবে।

Advertisement
আরও পড়ুন