Electoral Bonds

নির্বাচনী ট্রাস্টের ৮২ শতাংশই পদ্মের ভান্ডারে

২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত ১৯টি নির্বাচনী ট্রাস্টের মধ্যে ১৩টির অনুদান সংক্রান্ত বিবরণ মিলেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০৯
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গত বছর মার্চে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এক রায়ে নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে। কিন্তু তার পরেও বিজেপির তহবিলে কর্পোরেট সংস্থাগুলির অনুদান বন্ধ হয়নি। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত হিসেবে দেখা গিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দেশের রাজনৈতিক দলগুলি ৯টি নির্বাচনী ট্রাস্টের মাধ্যমে মোট ৩৮১১ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি একাই পেয়েছে ৩১১২ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৮২ শতাংশ! কংগ্রেসের পেয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ! বামেরা বাদে বাকি বিরোধী দলগুলি মিলিত ভাবে পেয়েছে ১০ শতাংশ অনুদান। বাম দলগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। নির্বাচনী ট্রাস্ট থেকেও কোনও রকম অনুদান তারা নেয় না।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত ১৯টি নির্বাচনী ট্রাস্টের মধ্যে ১৩টির অনুদান সংক্রান্ত বিবরণ মিলেছে। এদের মধ্যে ৯টি ট্রাস্টের রিপোর্ট বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে তাদের প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ ৩৮১১ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে, অর্থাৎ নির্বাচনী বন্ড চালু থাকাকালীন যা ছিল ১২১৮ কোটি টাকা। এই ৩৮১১ কোটি টাকার মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছে ৩১১২ কোটি। কংগ্রেস পেয়েছে ২০০ কোটি এবং বাম বাদে বাকি বিরোধীরা মিলিত ভাবে পেয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১০২ কোটি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ৯৮ কোটি, বিজেডি ১৫ কোটি টাকা পেয়েছে। বিআরএস ও ডিএমকে ১০ কোটি টাকা করে পেয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে বিজেপি মোট ৩,৯৬৭.১৪ কোটি টাকা অনুদান বাবদ পেয়েছিল, যার মধ্যে ১,৬৮৫.৬২ কোটি অর্থাৎ ৪৩ শতাংশ তারা পেয়েছিল নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে।

প্রতিবেদনে প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী, বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে প্রুডেন্ট নির্বাচনী ট্রাস্ট। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই ট্রাস্ট বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পেয়েছে ২৬৬৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২১৮০ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা তারা দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দলকে। এই ট্রাস্টকে অনুদান দিয়েছে জিন্দল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার, মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং, ভারতী এয়ারটেল, অরবিন্দ ফার্মা, টরেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো কর্পোরেট সংস্থা। প্রুডেন্ট নির্বাচনী ট্রাস্ট থেকে কংগ্রেস পেয়েছে ২১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রোগ্রেসিভ নির্বাচনী ট্রাস্ট অনুদান হিসেবে পেয়েছে ৯১৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলিকে ৯১৪ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা দিয়েছে তারা। সেই অর্থের ৮০.৮২ শতাংশ অর্থাৎ ৭৫৭ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা গিয়েছে বিজেপির পকেটে। এই ট্রাস্টে মূলত অনুদান দিয়েছে টাটা গ্রুপ। যার মধ্যে রয়েছে টাটা সন্স, টিসিএস, টাটা স্টিল, টাটা মোটরস এবং টাটা পাওয়ার।

মাহিন্দ্রা কোম্পানির বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নিউ ডেমোক্র্যাটিক নির্বাচনী ট্রাস্ট যে ১৬০ কোটি টাকা পেয়েছে, তার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকাই তারা দিয়েছে বিজেপিকে। হারমোনি নির্বাচনী ট্রাস্টের পাওয়া ৩৫ কোটি ৬৫ লক্ষের মধ্যে ৩০ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা গিয়েছে বিজেপির খাতায়। একই ভাবে ট্রায়াম্প নির্বাচনী ট্রাস্টও তাদের পাওয়া ২৫ কোটি টাকার মধ্যে ২১ কোটি টাকাই দিয়েছে বিজেপিকে।

তালিকায় থাকা জনকল্যাণ নামের একটি সংস্থা তাদের পাওয়া ১৯ লক্ষ টাকা বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দিয়েছে। মুম্বইয়ের সংস্থা কেইসি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামে একটি সংস্থা ‘জনপ্রগতি নির্বাচনী ট্রাস্ট’কে অনুদান বাবদ দিয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকাই পেয়েছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা গোষ্ঠী!

এ দিন ওই প্রতিবেদনটি নিয়ে মুখ খুলে কংগ্রেসের মণিকম টেগোর সমাজমাধ্যমে বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৩৬.৬ শতাংশ ভোট আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২১.২ শতাংশ ভোট। অথচ নির্বাচনী ট্রাস্টের মাধ্যে পাওয়া টাকার ৮২ শতাংশই গিয়েছে বিজেপির পকেটে। এটা কাঠামোগত বৈষম্য। নির্বাচনী বন্ড গেলেও নির্বাচনী ট্রাস্ট সেই জায়গা নিয়েছে। অর্থের এই বিপুল বৈষম্যের ফলে আদর্শগত লড়াই পিছনে চলে গিয়েছে, মূল জায়গা করে নিয়েছে অর্থশক্তি।

আরও পড়ুন