স্ত্রী কৃতিকা রেড্ডি ত্বক বিশেষজ্ঞ। স্বামী মহেন্দ্র রেড্ডি পেশায় শল্যচিকিৎসক। স্ত্রীকে ষড়যন্ত্র করে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। —ফাইল চিত্র।
গ্রেফতারির পর থেকে খুব বেশি কথা বলেননি। বেঙ্গালুরু পুলিশ বলছে স্ত্রী খুনে অভিযুক্ত চিকিৎসকের মুখ থেকে কথা বার করতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে ধৃতের একটাই দাবি, ‘‘কৃতিকাকে (রেড্ডি) আমি কোনও চেতনানাশক ওষুধ দিইনি।’’ অন্য দিকে, ভিসেরা পরীক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যানাস্থেশিয়ার ওষুধ ঢুকেছিল ২৯ বছরের কৃতিকার শরীরে। সেখান থেকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
যদি স্ত্রীকে খুন করেই থাকেন শল্যচিকিৎসক মহেন্দ্র রেড্ডি, তার ‘মোটিভ’ কী? তদন্তে উঠে এসেছে তাঁর পরকীয়া, স্ত্রীর ‘ঘন ঘন অসুস্থতা’ এবং পণ সংক্রান্ত তথ্য। পুলিশ বলছে সবক’টিই কারণ হতে পারে, আবার অন্য কারণও উঠে আসতে পারে।
গত বছর মে মাসে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল কৃতিকা এবং মহেন্দ্রর। স্ত্রী চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ। স্বামী শল্যচিকিৎসক। বিয়ের ১১ মাসের মধ্যে সেই স্বামী গ্রেফতার হলেন স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে। যদিও কৃতিকা মারা গিয়েছেন মাস ছয়েক আগে।
বিয়ের পর কৃতিকা এবং মহেন্দ্র থাকতেন বেঙ্গালুরুর মরাঠাহল্লির একটি আবাসনে। গত ২৪ এপ্রিল সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন কৃতিকা। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, মৃত্যু হয়েছে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের। শল্যচিকিৎসক মহেন্দ্র স্ত্রীর দেহের ময়নাতদন্ত করতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। তিনি দাবি করেন, স্ত্রীর বেশ কিছু অসুখ ছিল। সম্প্রতি তিনি পাকস্থলীর প্রদাহে ভুগছিলেন। যদিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনার পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই অসুখ প্রাণঘাতী বা গুরুতর ছিল না। এখান থেকে তদন্তকারীদের দৃঢ় ধারণা, স্ত্রীর মৃত্যুর ‘আসল কারণ’ লুকোচ্ছেন স্বামী।
কৃতিকার বাপের বাড়ির অভিযোগ, মেয়ে সুস্থ এবং স্বাভাবিক ছিলেন। হঠাৎ করে কী ভাবে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন, তা জানতে পারেননি। অভিযোগ, পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রীকে খুন করার জন্য ‘ডাক্তারিবিদ্যা’ কাজে লাগিয়েছিলেন জামাই।
চিকিৎসকের বাড়ি থেকে বেশ কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছে ল্যাপটপ, একাধিক মোবাইল এবং বেশ কিছু বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুর আগের দিন কৃতিকা বাড়ি থেকে হোয়াট্সঅ্যাপে মেসেজ করেছিলেন স্বামীকে। তিনি জানান, হাতে ফোটানো ‘ড্রিপ’ থেকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। জবাবে স্বামী লেখেন, ‘‘সহ্য করো। সরিয়ে ফেলো না।’’ তার পর দিন সকালে মারা যান চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কৃতিকা।
ভিসেরা পরীক্ষকেরা জানিয়েছেন, কৃতিকার শরীরে প্রপোফল (ডিপ্রিভান নামেও পরিচিত, চেতনানাশক) মিলেছে। অন্য দিকে, পুলিশ জানাচ্ছে, বিয়ের পর থেকে বেশ কিছু কারণে শ্বশুরবাড়ির উপর ‘বিরক্ত’ ছিলেন শল্যচিকিৎসক জামাই। প্রথমত, নিজের হাসপাতাল তৈরির তোড়জোড় করছিলেন মহেন্দ্র। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি থেকে ‘আর্থিক সাহায্য’ না পেয়ে ক্ষুণ্ণ ছিলেন বেঙ্গালুরুর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের চিকিৎসক। কৃতিকার বাবা মুণি রেড্ডি বলেন, ‘‘হাসপাতালের বদলে ক্লিনিক খুলতে বলেছিলাম জামাইকে। তাতে আমি সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিই ওঁকে। তবে রাজি হয়নি ও।’’
পুলিশ সূত্রে এ-ও খবর, গত ২১ এপ্রিল স্ত্রীর পাকস্থলীর সমস্যার চিকিৎসা শুরু করেছিলেন মহেন্দ্র। সে সময় তাঁকে চেতনানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। ২৩ এপ্রিল আবার একটি ‘ডোজ়’ দেওয়া হয়। মধ্যরাতে বাপের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় অসুস্থ কৃতিকাকে। রাতে আবার ইঞ্জেকশন দেন চিকিৎসক স্বামী। পরের দিন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই চিকিৎসক। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন চিকিৎসকেরা।
কৃতিকার বোন নিকিতা রেড্ডি পেশায় রেডিয়োলজিস্ট। জামাইবাবু দিদির মৃত্যুকে ‘স্বাভাবিক’ বললেও মানতে চাননি তিনি। তাঁর জোরাজুরিতেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয় বলে খবর।
তদন্তে চিকিৎসক দম্পতির বাড়ি থেকে সিরিঞ্জ, নল, ওষুধের শিশি ইত্যাদি উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাক্রমে তারা খুনের মামলা রুজু করে। এর মধ্যে মহেন্দ্র ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান। স্ত্রীর মৃত্যুর ছ’মাস পর গত মঙ্গলবার মণিপাল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে আনে পুলিশ। গত বুধবার আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ন’দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ঘটনাক্রমে মৃত চিকিৎসকের বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেছেন, জামাইয়ের পরকীয়া রয়েছে, তার প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। কৃতিকার বোন জানান, এমবিবিএস পড়ার সময় মহেন্দ্রর একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সে সময় বিস্তর গোলমাল হয়। থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় মামলা। ওই মহিলার সঙ্গে শল্যচিকিৎসকের এখনও সম্পর্ক রয়েছে।
ঠিক কোন কারণে স্ত্রীকে হত্যা করে থাকতে পারেন মহেন্দ্র, তা এখনও স্পষ্ট করতে পারেনি পুলিশ। তবে তারা স্পষ্ট করেছে, পরিকল্পনা করে মারা হয়েছে চিকিৎসককে। হোয়াইটফিল্ডের ডিসিপি এম পরশুরাম বলেন, ‘‘অভিযুক্ত চিকিৎসক স্ত্রীর শারীরিক দুর্বলতার বিষয়টি জানতেন এবং সেটাকে কাজে লাগিয়েছেন। তবে তদন্ত বাকি আছে।’’