Mumbai Hostage

মুম্বইয়ে পণবন্দি ১৭ শিশু: ফোন করে অভিভাবকদের কাছে চার কোটি দাবি! নরমে-গরমে কথা, কী ঘটে সেই স্টুডিয়োর অন্দরে?

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টুডিয়োয় ১৭ শিশুকে পণবন্দি করেন রোহিত আর্য নামে এক ব্যক্তি। সাড়ে তিন ঘণ্টার টানটান মুহূর্তের পর সমস্ত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যু হয় অপহরণকারীর।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৪৬
(বাঁ দিকে) অপহরণকারী রোহিত আর্য। (ডান দিকে) মুম্বইয়ের এই স্টুডিয়োয় পণবন্দি করা হয় শিশুদের। ছবি: সংগৃহীত।

(বাঁ দিকে) অপহরণকারী রোহিত আর্য। (ডান দিকে) মুম্বইয়ের এই স্টুডিয়োয় পণবন্দি করা হয় শিশুদের। ছবি: সংগৃহীত।

মুম্বইয়ের পণবন্দির ঘটনায় নয়া তথ্য উঠে এল। ১৭ শিশুর সঙ্গে স্টুডিয়োয় বন্দি করা হয়েছিল মঙ্গলা পটানকর নামে এক বৃদ্ধাকেও। অপহরণকারী রোহিত আর্য তাঁদের বন্দি করার পর কী কী করেছিলেন, কী কী বলেছিলেন, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সব বর্ণনা করলেন পাটানকর।

Advertisement

বৃদ্ধা জানান, পওয়াইয়ের স্টুডিয়োয় নাতনির অডিশনের জন্য তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্টুডিয়োতে তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পৌঁছেছিল। অভিভাবকেরা স্টুডিয়োর বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। পাটানকর বলেন, ‘‘অডিশনে আসা কয়েক জন ছেলেমেয়েকে আলাদা ভাবে দাঁড়াতে বলেন রোহিত আর্য। তার পর বাকি ছেলেমেয়েদের বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন। ১৭টি ছেলেমেয়েকে নিয়ে উপরের তলায় চলে যান রোহিত। কিছু ক্ষণ পর আবার ফিরে আসেন।’’

পটানকর জানান, রোহিত নীচে নেমে এসে তাঁকে বলেন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যেতে। তাঁর কথায়, ‘‘তখনও বুঝতে পারিনি কী ঘটতে চলেছে। রোহিতের কথামতো উপরে উঠে দেখি ছেলেমেয়েগুলি ঘরের এক কোণায় বসে আছে। অডিশনের কোনও ব্যবস্থাপনাই চোখে পড়েনি।’’ কিছু ক্ষণ পরে রোহিতও আসেন। তার পর কালো কাপড় দিয়ে এক এক করে জানলাগুলি ঢাকতে শুরু করেন। বৃদ্ধা জানান, রোহিতকে এই কাজ করতে দেখে ভেবেছিলেন হয়তো অডিশনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ সবই যে আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল, তখনও বোঝা যায়নি।

পটানকর বলেন, ‘‘কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কী করতে চাইছিলেন রোহিত। তার পর আচমকাই চারটে ছেলেমেয়েকে ডেকে নেন। তাদের রোহিত বলেন বাড়িতে ফোন করো। তাদের বলে দেওয়া হয়, বাড়িতে ফোন করে এক কোটি টাকা চাইতে হবে। ছেলেমেয়েগুলি তখন ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে।’’ বৃদ্ধা জানান, রোহিত ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকেন ছেলেমেয়েগুলিকে। তাদের বলতে থাকেন, চার কোটি টাকা এখনই যেন পাঠানো হয়। যদি তাঁর দাবি না মানা হয়, তা হলে বোমা দিয়ে পুরো স্টুডিয়ো উড়িয়ে দেবেন।

রোহিতের এই মূর্তি দেখে শিশুরা সকলেই কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। শিশুদের এই অবস্থা দেখে রোহিত কিছুটা নরম ভঙ্গিতে কথা বলা শুরু করেন। পটানকর বলেন, ‘‘রোহিত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা শুরু করেন শিশুদের সঙ্গে। স্টুডিয়োর ভিতরে বাজিও পোড়ান। সেই সঙ্গে আমাদের হুঁশিয়ারিও দেন, বাইরে গুলি চলছে। আমরা যেন ভুলেও বাইরে যাওয়ার চেষ্টা না করি।’’

বাইরে তত ক্ষণে পণবন্দির খবর চাউর হয়ে গিয়েছিল। বৃদ্ধা জানান, আতঙ্কিত এক অভিভাবক তাঁকে ফোন করেন। তখন তিনি ওই অভিভাবককে বলেন, ‘‘বাচ্চারা আমার সঙ্গে আছে। সুরক্ষিত আছে। ওদের ছবিও অভিভাবকদের কাছে পাঠিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি।’’ রোহিতের হাতে ধরা ছিল এয়ার গান। সেটি উঁচিয়ে বার বার শাসাচ্ছিলেন। স্টুডিয়োয় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন বলে দাবি বৃদ্ধার। বেশ কিছু রাসায়নিকও স্টুডিয়োয় ছড়িয়ে দেন। কিছু ক্ষণ পরেই পুলিশ স্টুডিয়োয় ঢোকে। তারা রোহিতকে নিরস্ত করার চেষ্টা করে। আলোচনা করার জন্য প্রস্তাবও দেয়। তার মধ্যেই আচমকা গুলির আওয়াজ। রোহিত মেঝেতে পড়ে যেতেই পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। শিশুদের সঙ্গে পণবন্দি হওয়ার অভিজ্ঞতা এক সংবাদমাধ্যমকে শুনিয়েছেন পটানকর।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টুডিয়োয় ১৭ শিশুকে পণবন্দি করেন রোহিত আর্য নামে এক ব্যক্তি। সাড়ে তিন ঘণ্টার টানটান মুহূর্তের পর সমস্ত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের গুলিতে গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যু হয় অপহরণকারীর।

Advertisement
আরও পড়ুন