Armenia-Azerbaijan Conflict

‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানকে সমর্থন, সেই আজ়ারবাইজানের শত্রুকে দেদার অস্ত্র দিচ্ছে ভারত

মুসলিম রাষ্ট্র আজ়ারবাইজান দরাজ সামরিক সাহায্য পাচ্ছে তুরস্ক ও পাকিস্তানের থেকে। খ্রিস্টান প্রধান আর্মেনিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে তাই তারা ‘সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে’ রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৫ ১৬:৩৮
India exports arms and military equipment to Armenia amid conflict with Azerbaijan

(বাঁ দিকে) আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনয়ান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’। পুরনো এই আপ্তবাক্য অনুসরণ করেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায় ‘কূটনৈতিক রণনীতি’ নির্ধারণ করছে নয়াদিল্লি। ‘অপারেশন সিঁদুর’-পর্বে খোলাখুলি পাকিস্তানকে সমর্থন করা আজ়ারবাইজানের শত্রুরাষ্ট্র আর্মেনিয়াকে ধারাবাহিক ভাবে সামরিক সাহায্য দিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

আজ়ারবাইজানের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আর্মেনিয়াকে ইতিমধ্যেই ‘মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার’ পিনাকা-সহ বেশ কিছু অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতীয় অস্ত্র তার দক্ষতারও প্রমাণ দিয়েছে। আগামী দিনে সাহায্যের তালিকা দীর্ঘতর হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক সীমান্ত সংঘর্ষপর্বে মুসলিম রাষ্ট্র আজ়ারবাইজান দরাজ সামরিক সাহায্য পাচ্ছে তুরস্ক ও পাকিস্তানের থেকে। খ্রিস্টান প্রধান আর্মেনিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে তাই তারা ‘সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে’ রয়েছে।

গত তিন বছরে মধ্য এশিয়ার দেশ আর্মেনিয়ায় অন্যতম প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে ভারত। গত সপ্তাহে সে দেশের রাজধানী ইয়েরভানে দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আর্মেনিয়ার সরকারের বৈঠকও হয়েছে। আর্মেনিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আজ়ারবাইজান সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে চিনা প্রযুক্তিতে নির্মীত জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান কিনেছে। তার ‘জবাব’ দিতে আর্মেনিয়া সরকার ‘তেসজ এমকে-২’ কেনার জন্য নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা করেছে বলে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। এ ছাড়া ভারতে তৈরি সামরিক যান, কপ্টার, ‘আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র, রেডার এবং হাউইৎজ়ার কামান কিনতেও আগ্রহী আর্মেনিয়া।

ঘটনাচক্রে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত-পাক সংঘাতে মুসলিম রাষ্ট্র তুরস্কও সরাসরি ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রসঙ্গত, আর্মেনিয়া এবং আজ়ারবাইজান দুই দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বাধীনতার পরে ১৯৯১ সালে বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখল নিয়ে সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয় দু’দেশের। এর পরে ২০২০ সালে দু’দেশের যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। খ্রিস্টান প্রধান নাগোরনো-কারাবাখে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল আজ়ারবাইজানের বিরুদ্ধে। সে সময় মস্কোর মধ্যস্থতায় সংঘর্ষ বিরতি হয়েছিল। কিন্তু এ বার ইউক্রেন সমস্যায় ব্যতিব্যস্ত ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে সেই ভূমিকা নেওয়া আর সম্ভব হয়নি।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পরে পাকিস্তান এবং চিনের মদতে নাগোরনো-কারাবাখের অধিকাংশ এলাকাই দখল করে নিয়েছে আজ়ারবাইজান। বস্তুত, ৪,৪০০ বর্গকিলোমিটারের নাগোরনো-কারাবাখ সোভিয়েত জমানায় আজ়ারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দার অধিকাংশই আর্মেনীয় খ্রিস্টান। তাঁরা মুসলিম রাষ্ট্র আজ়াবাইজানের অধীনে থাকতে নারাজ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আজ়ারবাইজান সেনার ধারাবাহিক হামলায় ওই এলাকার লক্ষাধিক খ্রিস্টান নাগরিক আর্মেনিয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বহু খ্রিস্টান গ্রামবাসীকে খুনও করেছে পাকিস্তান-তুরস্কের মদতপুষ্ট আজ়ারবাইজান ফৌজ। ১৯৯৪ সালের লড়াইয়ের পর থেকে নাগোরনো-কারাবাখের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আর্মেনিয়ার মদতপুষ্ট খ্রিস্টান মিলিশিয়া গোষ্ঠী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’র দখলে ছিল। কিন্তু গত দু’বছর ধরে আজ়ারবাইজান ফৌজের ধারাবাহিক হামলায় রণে ভঙ্গ দিয়েছে তারা।

Advertisement
আরও পড়ুন