বাংলাদেশের বিমান ধরার আগে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সঙ্গে স্ত্রী জুবাইদা রহমান এবং কন্যা জাইমা রহমান। ছবি: সংগৃহীত।
খালেদা জিয়ার পুত্র তথা বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবল রাজনৈতিক টালমাটালের মধ্যে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পৌঁছচ্ছেন। তিনি বুধবার রাতে হিথরো বিমানবন্দর থেকে ঢাকাগামী বিমানে ওঠার আগে কূটনৈতিক শিবির ও বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ফেব্রুয়ারির ভোটের পর বিএনপি-র হাতেই ক্ষমতা যাওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক। দিল্লির দিক থেকেও কূটনৈতিক সূত্রে মনে করা হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই যে নির্বাচনী সমীক্ষাগুলি শুরু হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এগিয়ে রয়েছে তারেকের দলই। আমেরিকার একটি সংস্থা ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট’-এর ডিসেম্বরের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিএনপি ৩০ শতাংশের বেশি সমর্থনে এগিয়ে রয়েছে। অন্য দিকে, জামায়েতের পক্ষে সমর্থন ২৬ শতাংশ। মনে রাখা হচ্ছে, এই সমীক্ষা তারেক দেশে ফেরার আগের। তিনি ফিরলে বিএনপি দ্বিগুণ চাঙ্গা হয়ে প্রচার শুরু করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই কথা মাথার রেখে বৃহস্পতিবার তিনি বাংলাদেশে নামতেই জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে তাঁর সংবর্ধনার অনুষ্ঠান রেখেছে দল। সেখান থেকে তারেক যাবেন হাসপাতালে মা খালেদাজিয়াকে দেখতে। পরের দিন বাবা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতেও যাবেন।
সূত্রের মতে, দ্বিপাক্ষিক স্বার্থরক্ষার খাতিরে বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে দিল্লির মত বিনিময় হয়েছে। বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলতি অগ্নিগর্ভ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তারেক অক্টোবরের গোড়ায় দেশে ফেরার কথা ঘোষণা করার পরে ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করেছেন। ওই ঘোষণার ঠিক ন’সপ্তাহ পরে তারেক জানান, তাঁর দেশে ফেরা স্থগিত ছিল বেশ কিছু ‘রাজনৈতিক বাস্তবতার’ কারণে। তিনি ফেসবুকে লেখেন, “স্পর্শকাতর বিষয়াবলী নিয়ে কতটুকু বাইরে বলা যায়, তার একটা সীমা রয়েছে।”
ডিসেম্বরের গোড়াতেই সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রকাশিত হতে শুরু করে যে, ভারত-বিএনপি মত বিনিময় হয়েছে। যদিও কোনও পক্ষই এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া জেলে চলে যাওয়ার পর থেকেই লন্ডন ছিল কার্যত বিএনপি-র সদর দফতর। ভারতীয় কূটনীতিকরা সেখানে সম্প্রতি ঘনঘন যাতায়াত করেছেন বলে খবর। বিএনপি কর্তাদের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিদের কথা চলেছে ঢাকাতেও।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিএনপি এবং ভারতের সব ব্যাপারে বোঝাপড়া মসৃণ হয়ে গিয়েছে, এবং তাদের যৌথ পথ চলা শুরু হতে চলেছে— বিষয়টি কিন্তু আদৌ তেমন নয়। তবে জামায়েতে ইসলামী এবং এনসিপি-র ভারত-বিরোধী কৌশলকে মোকাবিলা করতে বিএনপি-র থেকে ভাল কোনও বিকল্প মোদীসরকারের হাতে ছিল না। সাউথ ব্লকের এ কথা অজানা নয় যে, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের পরিবর্ত হতে পারেন না তারেক রহমান এবং বিএনপি। তবে সব মেনেই মোদীর কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা সংস্থা বিএনপি-কে শাসকের ভূমিকায় দেখার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত।
সম্প্রতি তারেক এবং বিএনপি-র সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামাতের ইসলামিক চরমপন্থী আদর্শকে প্রকাশ্যেই নিশানা করেছিলেন। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই সামনে নিয়ে আসছেন এঁরা, যা ভারতের বাংলাদেশ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও বটে। তারেক দেশে ফিরে শুক্রবারই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও যাবেন। মুক্তিযুদ্ধকে গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ, পরোক্ষ ভাবে ভারতের অবদানকেও স্বীকৃতি দেওয়া— এমন ভাষ্যই সামনে রাখতে চাইছে সাউথ ব্লক। পাশাপাশি বিএনপি নিজেদের ‘উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দল’ হিসাবে প্রচার করছে, যাতে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাঙ্ককেও সঙ্গে পাওয়া যায়। নয়াদিল্লি মনে করে, আসন্ন নির্বাচনে যদি জামাত প্রান্তিক হয়ে যায়,তা হলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভূ-কৌশলগত সংলাপ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
তারেক শনিবার যাবেন ওসমান হাদির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে। ওই দিনই পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন জুলাই আহতদের সঙ্গে দেখা করতে। বিএনপির তরফেই তারেকের দেশে ফেরার পরের তিন দিনের সফর সূচি জানানো হয়েছে আজ।