(বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রয়াত খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এক দশক আগে ঢাকা সফরে গিয়ে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। খালেদাপুত্র তারেক রহমানকে পাঠানো চিঠিতে ‘বেগম সাহিবা’র সঙ্গে সেই সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন, বিএনপি-তে তারেকের নেতৃত্বের উপরে আস্থা রাখছেন তিনি।
মঙ্গলবার ভোর প্রয়াত হয়েছেন বিএনপি সভানেত্রী। বুধবার ঢাকায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে দিল্লির প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। খালেদাপুত্রের উদ্দেশে মোদীর লেখা একটি চিঠি তিনি তুলে দিয়েছেন তারেকের হাতে। চিঠিতে দিল্লি এবং ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার নেপথ্যে খালেদার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মোদী।
বাংলাদেশের প্রয়াত নেত্রীর পুত্রকে পাঠানো চিঠিতে মোদী লিখেছেন, ‘‘২০১৫ সালের জুনে ঢাকায় বেগম সাহিবা (খালেদা জিয়া)-র সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ও আলাপচারিতার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। তিনি ছিলেন এক অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রত্যয়ী এক নেত্রী, যা সচরাচর দেখা যায় না।’’ খালেদাই যে প্রথম মহিলা যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সে কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তারেককে মোদী লিখেছেন, ‘‘তিনি (খালেদা) বাংলাদেশের উন্নয়নে এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’’
খালেদার মৃত্যুর পর মঙ্গলবারই সমাজমাধ্যমে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ বার সরাসরি প্রয়াত নেত্রীর পুত্রকে চিঠি লিখে দিল্লির শোকবার্তা পৌঁছে দিলেন তিনি। খালেদার মৃত্যু বাংলাদেশে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করবে বলে মনে করছেন মোদী। চিঠিতেও সে কথার উল্লেখ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, খালেদা যে মতাদর্শ নিয়ে চলতেন, তারেকও তা আগামী দিনে সঠিক ভাবে বহন করবেন বলে তিনি মনে করেন।
জয়শঙ্করের হাত দিয়ে পাঠানো চিঠিতে মোদী লেখেন, ‘‘তাঁর (খালেদার) মৃত্যু একটি অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে। তবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং (রাজনৈতিক) উত্তরাধিকার টিকে থাকবে। আমি নিশ্চিত বিএনপি-তে আপনার যোগ্য নেতৃত্ব তাঁর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ বিএনপি-তে তারেকের যোগ্য নেতৃত্ব দিল্লি এবং ঢাকার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে বলেও চিঠিতে জানিয়েছেন মোদী। বিএনপি-তে তারেকের নেতৃত্ব সে দেশের রাজনীতিতেও এক নতুন সূচনা করবে বলে মনে করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর শেষকৃত্যে ছিল বিশাল জনজোয়ার। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী বুধবার দুপুর ৩টে ৩ মিনিটে খালেদার ‘জানাজা’ শুরু হয়। শেষ হয় ৩টে ৫ মিনিটে। বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামেরা। ছিলেন জয়শঙ্করও।
‘জানাজা’ শেষে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে খালেদার মরদেহ সংসদ ভবন থেকে মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জিয়া উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। সমাধির কাছাকাছি পৌঁছোনোর পর খালেদার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে তুলে নেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যেরা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মেজর জ়িয়াউর রহমানের কবরের পাশেই সমাধিস্থ করা হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদাকে।