Supreme Court

অনির্দিষ্ট কাল বিল আটকে রাখা ঠিক নয়! তবে রাষ্ট্রপতি কিংবা রাজ্যপালকে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যায় না: সুপ্রিম কোর্ট

গত ১২ এপ্রিল তামিলনাড়ু সরকারের দায়ের করা এক মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৫৯
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। —ফাইল চিত্র।

কোনও বিলে রাজ্যপাল সম্মতি না-দিলে সেটি ফের বিধানসভায় ফেরত পাঠাতে হবে। রাজ্যপাল বিল আটকে রাখতে পারবেন না। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স’ মামলায় বৃহস্পতিবার এমনই পর্যবেক্ষণের কথা জানাল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি পিএস নরসিংহ এবং বিচারপতি এএস চন্দরকর।

Advertisement

কোনও বিল রাজ্যের আইনসভায় পাশ হওয়ার পর রাজ্যপালের কাছে গেলে, তাঁর কী করণীয়, তা ব্যাখ্যা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত জানায়, রাজ্যপালের সামনে তিনটি সাংবিধানিক বিকল্প রয়েছে। ১) বিলটিতে সই করা, ২) সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো, ৩) সম্মতি না-দিয়ে বিলটি বিধানসভায় ফেরত পাঠানো। একই সঙ্গে পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, এই তিনটি বিকল্পের মধ্য থেকে কোনটি বেছে নেবেন— এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যপালই। এটি আদালতের বিবেচনার বিষয় নয় বলে জানায় সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, “রাজ্যপালকে কত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেই সময়সীমাও আদালত নির্ধারণ করে দিতে পারে না।”

একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি তাঁদের কাজ কী ভাবে করছেন,তা আদালতের বিচারযোগ্য নয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে কোনও পদক্ষেপ না-করা, অনির্দিষ্ট কাল ধরে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা এবং সেটির কোনও ব্যাখ্যা না দেওয়া—এই সমস্ত ক্ষেত্রে আদালত সীমিত নির্দেশ দিতে পারে, যাতে তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন। বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে শীর্ষ আদালত জানায়, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কাজের উপর সাধারণ ভাবে বিচারবিভাগীয় হস্তক্ষেপ করা যায় না। তবে দীর্ঘ দিন ধরে নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সাংবিধানিক আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক বেঞ্চ।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৩ উদ্ধৃত করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কোনও বিল নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে রাষ্ট্রপতিকে প্রতি বার শীর্ষ আদালতের মতামত চাইতেই হবে— এমন বাধ্যবাধকতা নেই। অনুচ্ছেদ ১৪২ অনুসারে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের ক্ষমতা পূরণ করতে পারে না বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে আদালত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বিল আইনে পরিণত না হলে, রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।

বিধানসভায় পাশ হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই এই বিষয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাখ্যা করতে শীর্ষ আাদালতের সামনে ১৪টি প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। এ ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির থেকে মতামত নেওয়ার পর গত জুলাই মাস থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স মামলার শুনানি চলছিল প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চে।

সাধারণত, কোনও রাজ্যের আইনসভায় বিল পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা ভারতীয় সংবিধানের ২০০ ধারা অনুসরণ করে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সংবিধানের ২০১ ধারা অনুযায়ী, কোনও বিল রাষ্ট্রপতির কাছে গেলে তাঁর সামনে দু’টি বিকল্প থাকে— হয় ওই বিলে সম্মতি জানানো, অথবা তা নাকচ করে দেওয়া। কিন্তু এই কাজের জন্য সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে কোনও সময়সীমা দেওয়া হয়নি। তা নিয়েই বার বার বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

এই আবহে গত ১২ এপ্রিল তামিলনাড়ু সরকারের দায়ের করা এক মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশ নিয়ে আপত্তি তোলেন উপরাষ্ট্রপতি-সহ অনেকেই। রাষ্ট্রপতিকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের আছে কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। এ বিষয়ে শীর্ষ আদালতের পরামর্শ চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মুর্মু। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিল, তারা রাজ্যপালকে বিল সইয়ের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিরোধী।

Advertisement
আরও পড়ুন