সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
অরাবলী পাহাড়ের ‘সংজ্ঞা নির্ধারণ’ ও খননকার্য নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। এ বার এই বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। এই সংক্রান্ত মামলা শুনবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ।
গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চ অরাবলী পাহাড়ের ‘সংজ্ঞা নির্ধারণ’ নিয়ে একটি রায় দিয়েছিল। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১০০ মিটারের বেশি হলে তবেই সেই পাহাড়কে অরাবলী পাহাড়শ্রেণির অংশ বলা যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নয়, বরং আশপাশের এলাকার চেয়ে ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূখণ্ডই কেবলমাত্র অরাবলী পাহাড় বলে গণ্য হবে— এমনটাই ছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রস্তাবিত সংজ্ঞা। তাতেই সিলমোহর দেয় শীর্ষ আদালত।
তবে সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় নিয়ে আপত্তি ওঠে। অরাবলী পাহাড়শ্রেণি সংরক্ষণের দাবিতে রাজস্থান এবং হরিয়ানার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে সরব হয়েছেন স্থানীয়েরা। উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, এই রায়ের ফলে এত দিন যে ভূখণ্ড অরাবলী পাহাড়শ্রেণি বলে গণ্য হয়ে এসেছে, তার ৯০ শতাংশই আর পরিবেশ সংরক্ষণ বিধির অধীনে সুরক্ষাযোগ্য থাকবে না। ১২ হাজারেরও বেশি পাহাড়ের মধ্যে মাত্র হাজারখানেক আদালতের শর্ত পূর্ণ করতে পারবে। ফলে রাজস্থান, গুজরাত, হরিয়ানা, দিল্লি জুড়ে বিস্তৃত বাকি সব এলাকায় নির্বিবাদে খনন করা যাবে। পর্যটন এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কারণে নির্মাণ করা যাবে।
যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। প্রাকৃতিক সম্পদ, জীবসম্পদ এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর জানিয়ে তাঁর দাবি, ওই পাহাড়শ্রেণির ৯০ শতাংশ এলাকাই সংরক্ষিত অঞ্চল রাখা হবে। অরাবলী নিয়ে দিন কয়েক ধরেই চাপানউতর চলছে। দাবি, পাল্টা দাবিতে সরগরম। তার মধ্যেই এ বার অরাবলী নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করে আবার মামলা শোনার কথা জানাল সুপ্রিম কোর্ট। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই মামলার শুনানির দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ছাড়াও অবকাশকালীন বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি জেকে মহেশ্বরী, বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ। আগামী ২৯ ডিসেম্বর, সোমবার এই মামলা শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং গুজরাতের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬৯২ কিলোমিটার এলাকা জু়ড়ে বিস্তৃত প্রাচীন পাহাড়শ্রেণি অরাবলী গত ২০০ কোটি বছর ধরে উত্তর ভারতের অন্যতম ঢাল হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। থর মরুভূমি থেকে উড়ে আসা বালি এবং ধূলিকণাকে রুখে দেয় এই অনুচ্চ পাহাড়গুলি। দিল্লির বায়ুদূষণ কমাতেও সাহায্য করে। সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের ৩৭টি জেলার বহু সম্প্রদায়ের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠ, পশুখাদ্য, ভেষজ ওষধি আসে অরাবলীর বনভূমি থেকে।