ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করায় ভারতের ছ’টি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল আমেরিকা। বুধবার আমেরিকার বিদেশ দফতরের তরফে মোট ২০টি সংস্থার উপর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানানো হয়। সেগুলির মধ্যে রয়েছে ভারতের ছ’টি সংস্থাও।
ইরানের উপর আগেই একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে হোয়াইট হাউস। এই আবহে আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর দফতর জানিয়েছে, খনিজ তেল-সহ পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রি বাবদ যে বিপুল পরিমাণ লাভের টাকা ঘরে তুলছে ইরান, সেই টাকাই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই টাকা দিয়ে ইরানে প্রতিষ্ঠানবিরোধী কণ্ঠস্বরকে অবদমিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে আমেরিকা। তাই যে সংস্থাগুলি মার্কিন হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনা অব্যাহত রেখেছে, তাদের উপরে নিষেধাজ্ঞার কোপ পড়ছে।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আমেরিকায় সংস্থাগুলির আমেরিকায় থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মালিকানা স্বত্ব রয়েছে, এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইরান থেকে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির জন্য যে ভারতীয় সংস্থাগুলি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ছে, সেগুলি হল ‘জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘রামনিকলাল গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি’, ‘পারসিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘কাঞ্চন পলিমার্স’, ‘অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং ‘গ্লোবাল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড’। এখনও পর্যন্ত সংস্থাগুলির তরফে কেউ এই বিষয়ে মুখ খোলেননি।
ছ’টি সংস্থাই ভারত কিংবা বিশ্বের বাণিজ্য-মানচিত্রে খুব একটা পরিচিত নয়। তবে ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে ওষুধ, প্লাস্টিক, বস্ত্র উৎপাদন খানিক ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এই সংস্থাগুলি থেকে মূলত দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিই পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কিনে থাকে।
প্রসঙ্গত, প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, ২০১৬ সালে ট্রাম্প একটি নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল ইরানের শক্তি, জাহাজ এবং জাহাজ নির্মাণ ক্ষেত্রে যারা প্রযুক্তিগত এবং অন্য সাহায্য জোগাবে তাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। ট্রাম্প দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ওয়াশিংটন-তেহরান সম্পর্কের উন্নতি তো হয়ইনি, বরং ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা।
আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে একটি বিবৃতি দিয়েছে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অর্থনীতিকে অস্ত্র বানানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে আমেরিকা। ইরান কিংবা ভারতের মতো স্বাধীন দেশের উপর নিজেদের মতামত প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে তারা। এই বৈষম্যমূলক আচরণ আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরোধী। আসলে এটা অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের আধুনিক রূপ।”