Racial Attack in Uttarakhand

‘আমার ছেলের সঙ্গে যা হয়েছে, কারও সঙ্গে যেন এমন না হয়’! উত্তরাখণ্ডে ত্রিপুরার পড়ুয়া অ্যাঞ্জেলের হত্যায় কেন্দ্রকে আর্জি বাবার

ত্রিপুরা থেকে উত্তরাখণ্ডে পড়তে গিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল এবং তাঁর ভাই মাইকেল। সেখানে একটি বেসরকারি কলেজে এমবিএ করছিলেন। দেহরাদূনে অ্যাঞ্জেল এবং তাঁর ভাইকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:২৫
অ্যাঞ্জেল চাকমা। ছবি: সংগৃহীত।

অ্যাঞ্জেল চাকমা। ছবি: সংগৃহীত।

তাঁর পুত্রের সঙ্গে যা ঘটেছে, এমন ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে। কোনও বাবা যেন এ ভাবে তাঁর সন্তানকে না হারান। পুত্র অ্যাঞ্জেল চাকমার খুনের ঘটনায় উত্তরাখণ্ড সরকার এবং কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানালেন তাঁর বাবা তরুণপ্রসাদ চাকমা। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তরুণপ্রসাদ বলেন, ‘‘আমি চাই, যে ঘটনা আমার ছেলের সঙ্গে ঘটল, এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ করুক উত্তরাখণ্ড সরকার এবং কেন্দ্র। বেঙ্গালুরু, দেহরাদূন, দিল্লির মতো জায়গায় উত্তর-পূর্বের কোনও ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়, এগুলি বন্ধ হওয়া উচিত।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ত্রিপুরা থেকে উত্তরাখণ্ডে পড়তে গিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল এবং তাঁর ভাই মাইকেল। সেখানে একটি বেসরকারি কলেজে এমবিএ করছিলেন। গত ৯ ডিসেম্বর দেহরাদূনে স্থানীয় কয়েক জন অ্যাঞ্জেল এবং তাঁর ভাই মাইকেলকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। অ্যাঞ্জেলের ঘাড়ে এবং পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। মাইকেলের মাথায় আঘাত করা হয়। গুরুতর অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৭ দিন সঙ্কটজনক অবস্থায় লড়াই করার পর ২৬ ডিসেম্বর অ্যাঞ্জেলের মৃত্যু হয়। তাঁর ভাই মাইকেল এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তরুণপ্রসাদ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-তে কর্মরত। বর্তমানে তিনি মণিপুরের তাংজেঙে পোস্টিং। তরুণের অভিযোগ, পুলিশ প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। অল ইন্ডিয়া চাকমা স্টুডেন্টস ইউনিয়ন যখন বিষয়টি নিয়ে সরব হয়, তার পরই একটি এফআইআর দায়ের হয়। অ্যাঞ্জেলের বাবাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তাঁর পুত্রের ন্যায়বিচারের জন্য কী ভাবছেন। তখন তিনি বলেন, ‘‘উত্তরাখণ্ড এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী দু’জনেই আশ্বাস দিয়েছেন অ্যাঞ্জেলের ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করবেন। আমার আশা, ন্যায়বিচার পাব।’’

ঘটনার সূত্রপাত ‘জাত’ তুলে গালিগালাজ করাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, অ্যাঞ্জেল এবং তাঁর ভাইকে ‘চাইনিজ় মোমো’ বলে কটাক্ষ করা হয়। তখন অ্যাঞ্জেল প্রতিবাদ করে জানান, তাঁরা ত্রিপুরার বাসিন্দা। চিনা নন। সেখান থেকেই কথা কাটাকাটি, তার পর তা হাতাহাতিতে পৌঁছোয়। অভিযোগ, তার পরই দুই ভাইকে বেধড়ক মারধর করা হয়। যদিও দেহরাদূন পুলিশের দাবি, এটি কোনও জাতিগত আক্রমণ বা হামলার ঘটনা নয়। আপত্তিজনক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল বাধে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একটা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে এমন ভাবে দেখানো হচ্ছে, যার জেরে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, উত্তর-পূর্বের পড়ুয়াদের আক্রমণ করা হচ্ছে।

দেহরাদূনের পুলিশ সুপার অজয় সিংহ এক সংবাদসংস্থাকে বলেন, ‘‘একদল যুবক একসঙ্গেই বসেছিলেন। কথায় কথায় তাঁদের মধ্যে কেউ আপত্তিজনক মন্তব্য করেছিলেন। আর সেখান থেকেই বচসার সূত্রপাত। এই ঘটনাটিকে জাতিগত হামলা বা জাতিবিদ্বেষমূলক হামলা বলে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।’’ পুলিশ সুপার আরও দাবি করেছেন, হামলাকারীদের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের এক যুবকও ছিলেন। তাঁকে জেরা করে জানা গিয়েছে, নিজেদের মধ্যেই কথা হচ্ছিল। যে মন্তব্য নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে, সেটি কাউকে লক্ষ্য করে বলা হয়নি। এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে হামলাকারীদের মধ্যে এক জন নেপালিও ছিলেন। তিনি পলাতক।

দেহরাদূনে ত্রিপুরার পড়ুয়াদের উপর হামলার ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উত্তরাখণ্ড সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে। এই ঘটনায় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া তা-ও সবিস্তারে জানতে চাওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে উত্তর-পূর্বের পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, একটি নোটিস জারি করে তা-ও জানতে চেয়েছে কমিশন।

Advertisement
আরও পড়ুন