Operation Sindoor

‘ব্রহ্মস’ না ছুড়ে কেন ‘হাতুড়ি’র ঘা? ‘সিঁদুর’ অভিযানে ভারতের সাফল্য জোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে, কেন বাছা হল এই দু’টিকেই

মাত্র ২৫ মিনিটের হামলায় ভারত মূলত রাফাল যুদ্ধবিমানই ব্যবহার করেছে। হামলার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিল দুই অস্ত্র। স্ক্যাল্প এবং হ্যামার— এই অস্ত্র দিয়েই উড়িয়ে দেওয়া হয় জঙ্গিঘাঁটি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ২২:৪৮
Why Scalp and Hamme rwere India\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s weapons of choice to operation sindoor

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ভারতের প্রত্যাঘাতে তছনছ পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জঙ্গিঘাঁটি। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ১৫ দিনের মাথায় ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মাত্র ২৫ মিনিটের হামলা গুঁড়িয়ে দেয় একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি। অনেকের মনেই প্রশ্ন, কোন কোন অস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী? শুধু তা-ই নয়, কেন পাকিস্তানে প্রত্যাঘাতে সেই অস্ত্রগুলিই ব্যবহার করা হল, তা নিয়ে কৌতূহল কম নেই!

Advertisement

মঙ্গলবারের মধ্যরাত, তখন প্রায় সকলেই ঘুমে আচ্ছন্ন। সেই সময়ই পাকিস্তানের আকাশে ধেয়ে যায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান। তার পর একে বারে ‘নিখুঁত’ লক্ষ্যভেদ! যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধুলিসাৎ হয়ে যায় জঙ্গিদের ঘাঁটি। পাকিস্তান এবং পাকঅধিকৃত কাশ্মীরে মোট নয় জায়গায় হামলা চালায় ভারত। তবে এই হামলায় কত জনের মৃত্যু হয়েছে, তা নিয়ে ভারত এখনও স্পষ্ট কোনও তথ্য দেয়নি। যদিও ভারতের তরফে জানানো হয়, জঙ্গিদের ঘাঁটি উড়িয়ে দিতেই হামলা চালানো হয়েছে। অন্য দিকে, পাকিস্তান হামলার কথা স্বীকার করে নেয়। তবে দাবি করে, ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সকলেই সাধারণ নাগরিক!

Why Scalp and Hamme rwere India's weapons of choice to operation sindoor

ভারতীয় বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেল জঙ্গিঘাঁটি।

মাত্র ২৫ মিনিটের হামলায় ভারত মূলত রাফাল যুদ্ধবিমানই ব্যবহার করেছে। হামলার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিল দুই অস্ত্র। স্ক্যাল্প এবং হ্যামার— এই অস্ত্র দিয়েই উড়িয়ে দেওয়া হয় জঙ্গিঘাঁটি। কেন এই অস্ত্রগুলি ব্যবহার করল ভারত? স্ক্যাল্প ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড— রাফাল থেকে এই অস্ত্রই ছোড়ে সেনাবাহিনী। বিমানবাহিনীর অভিযান হলেও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ যুক্ত ছিল ভারতের নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীও। এই হামলায় যাতে সাধারণ নাগরিকের কোনও ক্ষতি না হয়, সেই দিকে জোর দিয়েছিল ভারত। অনেকের মতে, ভারতের এই দুই অস্ত্র ব্যবহার হল কৌশলগত পদক্ষেপেরই ফল!

২০১৯ সালে পুলওয়ামার পর ভারত প্রত্যাঘাত হিসাবে বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত। তবে সেই বার ভারত ব্যবহার করেছিল পুরনো মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান। তবে এ বার শুধু রাফাল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই সব যুদ্ধবিমান থেকেই ছোড়া হয় স্ক্যাল্প এবং হ্যামার। এই দুই ক্ষেপণাস্ত্রই দূরপাল্লার অস্ত্র, যা ব্যবহার করে একযোগে হামলা চালানো হয় বহাওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বর, চক আমরু, বাগ, কোটলি, শিয়ালকোট এবং মুজফ্ফরাবাদের ঘাঁটিগুলিতে।

Why Scalp and Hamme rwere India's weapons of choice to operation sindoor

ভারতীয় বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেল জঙ্গিঘাঁটি।

স্ক্যাল্প, অনেকের কাছেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামে পরিচিত। এই ক্রুজ় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা ‘নির্ভুল’ আঘাত হানতে পারে। স্ক্যাল্প তার গোপন বৈশিষ্ট্যের জন্যই পরিচিত। ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে তিন ধরনের নেভিগেশন সিস্টেম, যা নিখুঁত ভাবে লক্ষ্যবস্তু স্থির করে হামলা চালাতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী মূলত এই কারণেই স্ক্যাল্প ব্যবহার করে। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট হল রাতে এবং সব ধরনের আবহাওয়াতেও ব্যবহার করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিন বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখেই স্ক্যাল্প ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

শুধু তা-ই নয়, শক্ত বাঙ্কার ভেদ করে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে স্ক্যাল্পের। গত বছর প্রথম বার রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইউক্রেনীয় সেনা। তার পরই পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটি ওড়াতে ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল। এই ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এগুলি লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছোনোর পর, এতে থাকা ইমেজিং ইনফ্রারেড সিকারের কারণে অস্ত্রটি নিজে থেকেই লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম। লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে যদি মিলে যায়, তবেই তা ধ্বংস করে। ফলে আশপাশ এলাকায় ক্ষতি এড়িয়ে শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করা সম্ভব হয়। শুধু তা-ই নয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি শনাক্ত করাও বিপক্ষের জন্য খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ, যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার সময় স্ক্যাল্প খুব নিচু দিয়ে উড়ে যায়, ফলে তা শত্রুদের রেডারে ধরা পড়া প্রায় অসম্ভব। জ্যামারও একে কাহিল করতে পারে না!

Why Scalp and Hamme rwere India's weapons of choice to operation sindoor

ভারতীয় বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেল জঙ্গিঘাঁটি।

স্ক্যাল্প ছাড়াও মঙ্গলবার মধ্যরাতের অভিযানে ব্যবহার হয় আরও একটি অস্ত্র— হাইলি অ্যাজাইল মডুলার মিউনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ বা হ্যামার। এটি গ্লাইড বোমা নামে পরিচিত। ৭০ কিলোমিটার পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ফ্রান্সে। জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত শক্তিশালী বাঙ্কার ও বহুতল ভবনগুলিতে আঘাত করেছে নির্ভুল ভাবে নির্দেশিত এই হ্যামারগুলি। স্থির এবং চলমান উভয় লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধেই নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম এই অস্ত্রগুলি। রুক্ষ ভূখণ্ডে খুব কম উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। কঠিন এবং সুরক্ষিত কাঠামো ভেদ করার মতো অত্যাধুনিক ক্ষমতাই অন্যদের থেকে হ্যামারকে আলাদা করে দিয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, জিপিএস, ইনফ্রারেড ইমেজিং এবং লেজার টার্গেটিং থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর লক্ষ্যবস্তুতে আছড়ে পড়ে এই হ্যামার। তার কার্যকারিতার কথা মাথায় রেখেই স্ক্যাল্পের পাশাপাশি হ্যামার দিয়ে পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথ বেছে নেয় ভারত!

সব ছবি: এএফপি এবং রয়টার্স।

Advertisement
আরও পড়ুন