Shikargah Benarasi Saree

কড়ওয়া কাজের শিকারগা শাড়িতে নজর কাড়লেন নীতা! বেনারসিতে এমন নকশা কোথায় হয়?

‘কড়াওয়া’ হিন্দি শব্দ। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় কড়া বা কঠিন। ওই বুনন পদ্ধতিটি কঠিন কারণ, এর প্রতিটি বুটি বোনা হয় হাতে। আলাদা আলাদা ভাবে। যে হেতু তাঁতের বদলে হাতে বোনা, তাই আলগা সুতো থাকে না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:১২
শিকারগা বেনারসি শাড়িতে নীতা অম্বানী।

শিকারগা বেনারসি শাড়িতে নীতা অম্বানী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

বেনারসি শাড়ি যে কত রকমের হতে পারে, তা নীতা অম্বানীর শাড়ি দেখলে জানা যায়। তিনি যখনই বেনারসি শাড়ি পরে প্রকাশ্যে আসেন, তখনই শাড়ির নকশা দেখে বিস্মিত হন অনেকে। সেই শাড়ি দেখেই অনেকে প্রথম জানতে পারেন যে, বেনারসিতে এমন নকশাও হয়! কখনও জংলা কাজ, কখনও জালের কাজ, কখনও ফুল-পাখি-লতাপাতার নানা রঙের মিনা করা নকশা। এ বার অবশ্য তিনি পরলেন শিকারগা বেনারসি শাড়ি!

Advertisement

আমেরিকার বস্টনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নীতাকে। ম্যাসাচ্যুসেটসের গভর্নর মাওরা হ্যালি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেখানকার ‘গভর্নর সাইটেশন’ সম্মান জ্ঞাপনের জন্য। সে দেশে সমাজে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম ব্যক্তিত্বকে ওই সম্মান জানানো হয়। ম্যাসাচ্যুসেটসের প্রশাসন শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং নারী ক্ষমতায়ণের ক্ষেত্রে নীতার সামাজিক কাজকে স্বীকৃতি দিতে চেয়েছে। সেই সম্মান গ্রহণ করতেই বস্টনে একটি গোলাপি রঙের বেনারসি শাড়ি পরে গিয়েছিলেন অম্বানী- গৃহিনী।

বেনারসি শাড়ি মানেই বুটিদার বা নকশাদার শাড়ির কথা মাথায় আসে। নীতার বেনারসিটি একেবারেই তেমন নয়।

বেনারসি শাড়ি মানেই বুটিদার বা নকশাদার শাড়ির কথা মাথায় আসে। নীতার বেনারসিটি একেবারেই তেমন নয়। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

শাড়ির নাম শিকারগা। নামেই পরিচয়। ওই ধরনের বেনারসি শাড়িতে শিকার করার ছবি বোনা হয় জরি দিয়ে। থাকে বন্য জন্তু, পশুপাখির নকশাও। বেনারসি শাড়ি বোনার পুরনো যে সব ধরন রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শিকরগা। মনে করা হয়, ভারতে ইংরেজ শাসনের অনেক আগে মোগল আমলে শিকরগা বোনার চল শুরু। কারণ, সেই সময়েই রাজাদের মধ্যে শিকারে যাওয়ার চল ছিল বেশি। বেনারসের শাড়ি শিল্পীদের বুননেও তার প্রভাব পড়েছিল। রেশমের শাড়িতে তাঁরাও বুনতেন রাজারাজড়াদের শিকারে যাওয়ার ছবি। নীতার শাড়িতেও রয়েছে শিকারগার নকশা। সেই নকশা আবার বোনা হয়েছে ‘কড়ওয়া’ পদ্ধতিতে।

কড়ওয়া বুনন পদ্ধতি হল বেনারসির সবচেয়ে কঠিন বুনন পদ্ধতি। ‘কড়ওয়া’ শব্দটির ব্যবহারেই তা বোঝা যায়। ‘কড়াওয়া’ হিন্দি শব্দ। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় কড়া বা কঠিন। ওই বুনন পদ্ধতিটি কঠিন কারণ, এর প্রতিটি বুটি বোনা হয় হাতে। আলাদা আলাদা ভাবে। যে হেতু তাঁতের বদলে হাতে বোনা তাই আলগা সুতো থাকে না। সেই সুতো কাটারও দরকার পড়ে না। প্রতিটি বুটির সুতোর নকশা সেই বুটিতেই সীমিত থাকে। সেই কাজ করতে সময় লাগে অনেক বেশি। নীতার শাড়িটিতে যেমন শিকারগা কাজের ঐতিহ্য মেনে রয়েছে তেড়ে যাওয়া সিংহের মোটিফ। শাড়ির প্রান্তে একহারা টকটকে লাল সীমারেখা। তার সঙ্গে রুপোলি জরির সূক্ষ্ম কাজের ইঞ্চি পাড়। সেই পাড় ছুঁয়ে পর পর সোনালি সুতোর সিংহের মোটিফ। তার কেশর বোনা রুপোলি জরিতে।

বস্টনে একটি ধুলোটে গোলাপি রঙের বেনারসি শাড়ি পরে গিয়েছিলেন অম্বানী-গৃহিনী।

বস্টনে একটি ধুলোটে গোলাপি রঙের বেনারসি শাড়ি পরে গিয়েছিলেন অম্বানী-গৃহিনী। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

বেনারসি শাড়ি মানেই বুটিদার বা নকশাদার শাড়ির কথা মাথায় আসে। নীতার বেনারসিটি একেবারেই তেমন নয়। বরং পাড়-ছোঁয়া সিংহগুলি ছাড়া গোটা শাড়ির জমি বুটিহীন। আঁচলে সূক্ষ্মতর কোনিয়া নকশা, যা আসলে কৌণিক নকশা যেমনটা দেখা যায় কাশ্মীরের শালের দু’প্রান্তে। নীতা বরাবরই ভারতীয় শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতার কথা বলে এসেছেন। হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে নতুন করে তুলে আনার চেষ্টাও করেছেন। বছরখানেক আগেই বেনারসে গিয়ে সেখানকার শাড়ি শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন তিনি। কিনেছিলেন অনেক শাড়িও। মুম্বইয়ের জিয়ো কনভেনশন সেন্টারেও দেশের বিভিন্ন প্রদেশের শিল্পীদের শাড়ির কাজ প্রদর্শিত হয়। এ বার বস্টনেও দেশের শাড়ি শিল্প তুলে ধরলেন নীতা।

Advertisement
আরও পড়ুন