অমীশ ত্রিপাঠী। ছবি: সংগৃহীত।
ধর্মে ধর্মে দূরত্ব কি তাঁর পছন্দ? ইতিহাস বিকৃত করার প্রসঙ্গ কি তিনি এড়িয়ে যাবেন? বেদ-উপনিষদে যা আছে, সবই কি তিনি বদলে দিয়েছেন? উত্তরপ্রদেশের পুত্র, পশ্চিমবঙ্গ থেকে এমবিএ পাশ করা লেখক এখন কলকাতায় পা রাখবেন শুনলেই কত জনের মুখে ও মনে যে কত কথা ঘুরতে থাকে!
আর অমীশ ত্রিপাঠী কলকাতায় পা রাখলে এর মধ্যে অন্তত কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি যে হতেই হবে, তা তো তিনি নিজেও জানেন। তবে সাক্ষাৎকারের আগেই তাঁর ভাবভঙ্গি স্পষ্ট করে দেয় যে, তিনি সব রকম প্রশ্নের জন্যই প্রস্তত। কারণ ‘শিব ট্রিলজি’, ‘রামচন্দ্র সিরিজ়’-এর খ্যাতিপ্রাপ্ত এই লেখক যথেষ্ট জানেন, তাঁর সাহিত্য নিয়ে কার কী ধরনের প্রশ্ন থাকে।
তবে নানা প্রশ্ন, বহু বিতর্ক পেরিয়েও তিনি এগিয়ে চলেছেন দেশের পৌরাণিক কথা ও ইতিহাস নিয়ে। আর নব যুগের পাঠকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাঁর কলমে ভর করেই কি তবে দিন দিন ‘কুল’ হয়ে উঠছে পৌরাণিক কাহিনি? বহু জনের ভিড়ে নতুন বই ‘চোলা টাইগার্স’-এ স্বাক্ষর দিতে দিতে আনন্দবাজার ডট কমকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন অমীশ। ভিড়ও বলে দিচ্ছে, তিনি নতুন প্রজন্মের অতি প্রিয়। তবে কলম থেকে মুখ তুলে অমীশ বললেন, ‘‘আমি কেন ‘কুল’ বানাব! আমাদের পৌরাণিক কথা সব খুব ‘কুল’, শুধু সে ভাবে ছোটদের প়ড়ানো হত না। আমি পড়াচ্ছি।’’
কলকাতায় অমীশ। ছবি: সংগৃহীত।
গল্পের মাঝে অমীশ জানালেন তাঁর পুত্র নীলেরও পৌরাণিক কাহিনি খুব পছন্দ। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে এত কথা হয় ইতিহাস বিকৃত করা নিয়ে? বিভেদের বার্তা দেওয়া নিয়ে? সে সব কি তাঁর কানে যায় না? এ সব অনেক শুনেছেন অমীশ। ফলে তাতে কান না দিতে জানেন। বরং কী ভাবে নতুন যুগের কাছে পৌরাণিক সব কাহিনি পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়েই বেশি মগ্ন তিনি। শুধু সাহিত্য নয়, গেমিংয়েও মন দিয়েছেন। তবে তা-ও সেই পৌরাণিক কাহিনি ভিত্তিকই। অমীশ বলেন, ‘‘অমিতাভ বচ্চনও আছেন আমাদের এই প্রকল্পয়। এই প্রথম ভারতীয় কোনও বিষয় নিয়ে গেম তৈরি হবে। একেবারে আন্তর্জাতিক মানের জিনিস তৈরি হচ্ছে। আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে এই প্রথম এমন ধরনের কাজ হচ্ছে। আমরা এখন তা নিয়েই এগোচ্ছি।’’
কখনও তিনি লিখছেন শিবকে নিয়ে, কখনও তাঁর কাহিনিতে মূল স্থান অধিকার করে থাকছেন রাম-রাবণ। আবার কখনও বলছেন ভারতীয় ইতিহাসের কোনও অধ্যায়ের কথা। এত কিছু যে করছেন এ দেশের ইতিহাসের পরতে পরতে থাকা বিভিন্ন সব গল্প নিয়ে, তাতে কি শৈল্পিক স্বাধীনতা নিচ্ছেন তিনি? নিজে কি মনে করেন যে, এমন সব গল্প বলার ক্ষেত্রে শৈল্পিক স্বাধীনতা চাওয়া ও পাওয়া সম্ভব? অমীশের সাফ কথা, ‘‘এ সব কাহিনি আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। তাতে সম্মান থাকা দরকার। বড়জোর নিজে যে ভাবে সেই কাহিনিটি বুঝছি, সেটি লিখতে পারি।’’ ভিড়ের মাঝে সহজ কথায় এ ভাবেই সব বিতর্কের অবসান ঘটাতে পছন্দ করেন বুঝি ম্যানেজমেন্ট গ্র্যাজুয়েট লেখক।
অমীশকে ঘিরে গুণমুগ্ধদের ভিড় বাড়তে থাকে। প্রশ্নবাণ মিলিয়ে যায় আরও একটি নতুন বই নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনায়। তার মধ্যেই অমীশ জানান, বাংলার পাল বংশ নিয়েও কাজ করছেন তিনি।