Tick Fever

পোষ্যের জ্বরে সতর্কতা আবশ্যিক

টিক ফিভারে আক্রান্ত হওয়া পোষ্যদের ক্ষেত্রে খুবই পরিচিত সমস্যা। এর উপশম হবে কী করে?

সায়নী ঘটক
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৪:৫৩

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

বর্ষার শেষে, শীতের শুরুতে কিছু সাধারণ অসুখবিসুখ দেখা যায় পোষ্যদের মধ্যে। এর মধ্যে অন্যতম পরিচিত রোগ— টিক ফিভার। এই অসুখ খানিকটা মানুষের ডেঙ্গির সঙ্গে তুলনীয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে, পোষ্যদের মধ্যে এই টিক ফিভার প্রায় মহামারির আকার নিয়েছে। এক পোষ্য থেকে আর একজনের মধ্যে সংক্রামক এই অসুখ যদিও চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। কুকুর, বেড়াল-সহ বিভিন্ন গবাদি পশুর মধ্যে এই টিক ফিভার বেশ পরিচিত অসুখ। পরজীবী বাসা বেঁধে রয়েছে, এমন কোনও অসুস্থ পোষ্যকে কোনও পোকা কামড়ানোর পরে সেই পোকা যদি আর একটি সুস্থ পোষ্যকে কামড়ায়, তা হলেই ছড়ায় এই রোগ।

কী করে বুঝবেন?

আপনার পোষ্যের মধ্যে কয়েকটি উপসর্গ দেখলেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন:

  • প্রথমেই পোষ্যটি খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দেয়।
  • দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, জ্বর ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে এবং অনেক দিন ধরে থাকে তা।
  • পোষ্য ক্রমশ দুর্বল হয়ে যায় ও ঝিমিয়ে পড়ে।
  • কখনও কখনও বমি হয়।
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়ে।
  • রক্তাল্পতা দেখা দেয়।

এই সংক্রমণ রক্তের লোহিতকণিকাগুলি নষ্ট করে দেয়, যার ফলে প্লেটলেট কমতে থাকে এবং সার্বিক ভাবে পোষ্যের অনাক্রম্যতা কমে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না করালে কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যায়, এমনকি পোষ্যের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

চিকিৎসা

পোষ্যের জ্বর হলে, খাওয়া কমিয়ে দিলে কিংবা ঝিমিয়ে পড়লে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। সাধারণ রক্তপরীক্ষা করলেই এই রোগ ধরা পড়ে। যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে, তত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে।

বাবেশিয়া ক্যানিস, বাবেশিয়া গিবসনির মতো প্যারাসাইট, এলিকিয়া স্পিশিজ়ের মতো ব্যাক্টিরিয়ার আক্রমণে পোষ্যদের মধ্যে এই টিক ফিভার মহামারির আকার ধারণ করে, যা খুব দ্রুত ছড়ায়। বর্ষার সময়ে এই টিক-এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়, যা শীতের শুরু পর্যন্ত থাকে। পশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে জানালেন, ডক্সিসাইক্লিন, ক্লিন্টামাইসিন, অ্যাজ়িথ্রোমাইসিন, অ্যাটাভন প্রো জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় এই অসুখের। “মানুষের মধ্যে যেমন ডেঙ্গি মহামারির আকার নিয়েছে, তেমনই টিক ফিভারও পোষ্যদের মধ্য বিপুল ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সময় থাকতে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে এই অসুখ পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব,” বললেন ডা. মুখোপাধ্যায়।

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

কিছু সাধারণ সাবধানতা অবলম্বন করলে টিক ফিভার প্রতিরোধ করা সম্ভব, যেমন:

  • এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে পোষ্যকে প্রথমেই পোকার কামড়ের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। যে সব জায়গা থেকে অন্য পোষ্যের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা বেশি, যেমন ক্রেশ কিংবা পার্লার অথবা ব্রিডিং করাতে নিয়ে গেলে তার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  • কোথাও বেড়াতে গেলে পোষ্যকে ক্রেশে রেখে যান অনেকে। সে ক্ষেত্রে ক্রেশে রাখার আগে তাকে ফ্লুরালেনার জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে, যাতে সে অন্য পোষ্যের সংস্পর্শে এলেও সংক্রমিত হতে না পারে। এই জাতীয় ট্যাবলেট একটি খাওয়ালে তার প্রভাব তিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত থাকে সাধারণত।
  • স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকলেই পোষ্যের থাকার জায়গাটি স্প্রে করে পোকামুক্ত রাখতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে বাঁচার একটি বড় উপায়।
  • প্রত্যেক দিন পোষ্যের গায়ে ব্রাশ করে দেখতে হবে যে পোকা লেগে রয়েছে কি না। লোমশ পোষ্যের ক্ষেত্রে নিয়মিত তা ট্রিম করা, পরিষ্কার রাখা দরকার। লোম কম থাকলে গায়ে পোকা হলে তা চোখে পড়বে। শীতের সময়ে দু’সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে স্নান করানো দরকার।
  • স্নানের সময়ে অ্যান্টি-টিক শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। পোষ্যের গায়ে বাসা বাঁধা পরজীবীকে মেরে ফেলে এই ধরনের শ্যাম্পু। স্পট-অন ওষুধ গায়ে লাগিয়ে দিলেও অনেক দিন পর্যন্ত পোকার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

এই অসুখ চিকিৎসা না করেফেলে রাখলে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। নাহলে এটি প্রাণঘাতী নয়। তাই ভয় পাবেন না। সন্তানসম পোষ্যযখন ঘরে দাপিয়ে বেড়ানোরবদলে ঝিমিয়ে পড়ে, মনখারাপহয় বাড়ির প্রত্যেকেরই। তাই কিছু প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বন করে পোষ্যকে আগলে রাখুন টিক ফিভারের হাত থেকে।

আরও পড়ুন