Bird Theory Relationship Trend

সঙ্গী কি আপনার প্রতি মনোযোগী? সমাজমাধ্যম জুড়ে চলছে পাখি দেখার খেলা, কী এই ‘বার্ড থিয়োরি’

নেটমাধ্যম জুড়ে সম্পর্কের অবস্থান শনাক্তকরণের জন্য নতুন তত্ত্বের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। নাম দেওয়া হয়েছে, ‘বার্ড থিয়োরি’। ইতিমধ্যেই নেটপ্রভাবীদের পাতায় বার্ড থিয়োরির মাধ্যমে সঙ্গীর পরীক্ষা নেওয়ার ভিডিয়ো দেখা যেতে শুরু করেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:০০
‘বার্ড থিয়োরি’র প্রয়োগ করতে পারেন আপনিও।

‘বার্ড থিয়োরি’র প্রয়োগ করতে পারেন আপনিও। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

কল্পনা করুন, হালকা শীতের মরসুমে আপনি বাগানে ঘুরছেন। ভোরের আলোয় হঠাৎ একটি পাখি আপনার চোখে পড়ল। বেশ নজরকাড়া। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আপনার ইচ্ছে করবে, ঘরে ঢুকে নিজের সঙ্গীর সঙ্গে সেই পাখিটি নিয়ে আলোচনা করার। আপনি বলবেন, ‘‘অদ্ভুত সুন্দর একটা পাখি দেখলাম বাইরে।’’ এর পরের ঘটনাই আপনার সম্পর্কের গতিবিধি মেপে দেবে। অন্তত তেমনই দাবি উঠছে নেটমাধ্যমে। এই ছোট্ট মন্তব্যে আপনার সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটিই নাকি বলে দেবে আপনাদের সম্পর্ক কতখানি প্রাণবন্ত!

Advertisement

নেটমাধ্যম জুড়ে সম্পর্কের অবস্থান শনাক্তকরণের জন্য নতুন তত্ত্বের প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে। নাম দেওয়া হয়েছে, ‘বার্ড থিয়োরি’। ইতিমধ্যেই নেটপ্রভাবীদের পাতায় বার্ড থিয়োরির মাধ্যমে সঙ্গীর পরীক্ষা নেওয়ার ভিডিয়ো দেখা যেতে শুরু করেছে। কেউ এই পরীক্ষায় জিতছেন, কেউ বা হারছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, মহিলারা পুরুষদের পরীক্ষা নিচ্ছেন।

সম্পর্কের অবস্থান শনাক্তকরণের জন্য নতুন তত্ত্ব।

সম্পর্কের অবস্থান শনাক্তকরণের জন্য নতুন তত্ত্ব। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

কেমন ভাবে পরীক্ষাটি দিতে হয়? হার-জিতই বা কী ভাবে নির্ধারিত হবে?

এই তত্ত্বের মজা এখানেই যে, আপনার আগ্রহের ছোট্ট একটি কথা ধরতে পারলেই সঙ্গী পরীক্ষায় পাস। আপনি বললেন পাখির কথা, তিনি বললেন, ‘‘কোথায় দেখলে?’’, ‘‘কেমন ছিল?’’ বা ‘‘কী রঙের?’ নিছক, আপাত গুরুত্বহীন একটি কথাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, সঙ্গী আপনার কথায় মন দিয়েছেন। কিন্তু যদি শুধু মাথা নাড়িয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান, তা হলে হয়তো আপনার কথায় তিনি সব সময়ে আগ্রহী বোধ করেন না। তার জন্য আপনাকে যে সত্যি সত্যিই পাখি দেখে আসতে হবে, তা-ও নয়। কিন্তু আপনার প্রতি সঙ্গীর যত্ন, মনোযোগ পরীক্ষা করতে হলে তাঁর প্রতিক্রিয়াই যথেষ্ট। এমন ভাবেই পরীক্ষা নেওয়ার পর্ব চলছে নেটমাধ্যমে।

কী ভাবে কার্যকরী হচ্ছে এই পরীক্ষা?

মানুষ আসলে সংযোগ খোঁজে। আপনি যখন কথা বলেন, সঙ্গী যদি সত্যিই আগ্রহ নিয়ে শোনেন, তাতেই তৈরি হয় সম্পর্কের ভিত। মনোবিদেরা এটিকেই বলেন সংযোগের নিবিড় মুহূর্ত। পাখি তো কেবল অজুহাত। আসল হল আপনার অনুভূতি। সঙ্গী সেটির প্রতি মনোযোগী কি না, সেটুকুই দেখার। আজকের দুনিয়ায় ব্যস্ততা মানুষকে একে অপরের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এমন পরীক্ষার মাধ্যমে হয়তো সেই দূরত্বকে বুঝতে পারার চেষ্টা হচ্ছে। এ ভাবেই সহজ একটি মুহূর্ত সমাজমাধ্যমে হয়ে উঠেছে সম্পর্ককে বোঝার মজার ট্রেন্ড। তাই সম্ভবত এত জনপ্রিয় হয়েছে নানা দেশে।

মনোবিদ্যায় ‘বিডস ফর কানেকশন’ বলে একটি তত্ত্ব রয়েছে। অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে মনোযোগ, স্নেহ বা গুরুত্ব পাওয়ার চেষ্টা করাকেই বলা হয় ‘বিডস ফর কানেকশন’। আমেরিকা নিবাসী, সম্পর্ক বিষয়ক মনস্তত্ত্ব চর্চাকারী জন এবং জুলি গটম্যান এই তত্ত্বের প্রবর্তক। মনোযোগ, স্নেহ বা গুরুত্ব পাওয়ার চেষ্টা চলতে পারে কথা বলে বা নীরব থেকে, সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে। যেমন একটু হাসি, একটি গল্প, বা একটি প্রশ্নও এই প্রচেষ্টার উদাহরণ হতে পারে। যদি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, তা হলে ঘনিষ্ঠতা এবং বিশ্বাস তৈরি হয়। অন্য দিকে, উত্তর না পেলে তা মানসিক দূরত্বের ইঙ্গিত হতে পারে।

এই তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা কী?

তবে এই পরীক্ষা বা ট্রেন্ডে ভুল বোঝার ঝুঁকিও থেকে যায়। মানুষ সব সময় সমান মনোযোগী থাকতে পারে না। কাজের চাপ, অস্বস্তি, ক্লান্তি, অসুস্থতা, এমন সব কিছুই আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। তাই এক দিনের প্রতিক্রিয়ার উপর সম্পর্ককে বিচার করা উচিত নয়। দীর্ঘ দিনের আচরণই বলে দেয় প্রকৃত অবস্থা। মজা করে বার্ড থিয়োরি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন, তবে সেটিই আপনার সম্পর্কের বিচারক যেন না হয়ে যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন