বুধবার কর্তব্য ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নতুন সেই ভবন সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অধীনে ১০টি পরিকল্পিত ভবনের মধ্যে প্রথম। কর্তব্য ভবনে থাকবে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস। সেই প্রকল্পের লক্ষ্য বিভিন্ন মন্ত্রক এবং দফতরকে এক জায়গায় একত্রিত করে দক্ষতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা।
সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের আওতায় কর্তব্য ভবনে ৩টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী উদ্বোধন করেছেন কর্তব্য ভবন ৩-এর। নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর জানিয়েছেন, কর্তব্য ভবন ২ এবং কর্তব্য ভবন ১-এর কাজও শীঘ্রই সম্পন্ন হবে।
ইন্ডিয়া গেট এবং রাষ্ট্রপতি ভবনের মাঝখানে তৈরি হওয়া কর্তব্য ভবন আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। ভবিষ্যতে দেশের সকল প্রধান মন্ত্রকের ঘাঁটি হয়ে উঠবে সেই ভবন। কেন্দ্রীয় সরকারের সকল মন্ত্রক ওই ভবন থেকেই পরিচালিত হবে।
কর্তব্য ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর, সাউথ ব্লক এবং নর্থ ব্লক খালি করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত মন্ত্রক কাজ করবে কর্তব্য ভবন থেকেই। সাউথ ব্লক এবং নর্থ ব্লকে তৈরি হবে সংগ্রহশালা।
কর্তব্য ভবনে যে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকগুলি স্থানান্তরিত হয়ে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক, ক্ষুদ্র শিল্প মন্ত্রক, পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক।
এ ছাড়াও প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার কার্যালয়ও স্থানান্তরিত হয়েছে সেই ভবনে। স্থানান্তরিত হচ্ছে কর্মিবর্গ দফতরও।
এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, কর্তব্য ভবন ১.৫ লক্ষ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি অত্যাধুনিক ভবন। সেই ভবনে দু’টি বেসমেন্ট এবং নীচতলা-সহ মোট সাতটি তলা রয়েছে।
ভবনটি এমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে, যাতে ৩০ শতাংশ শক্তি কম ব্যবহার করে যাবতীয় কাজকর্ম করা যায়। এই ভবনের জানালায় যে কাচ ব্যবহার করা হয়েছে, তা ভবনটিকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। শব্দরোধী ওই কাচ বাইরের শব্দ ভিতরে প্রবেশ করতে দেবে না বলেও জানা গিয়েছে।
ভবনটিতে শক্তি-সাশ্রয়ী এলইডি, প্রয়োজন না হলে আলো নিবিয়ে দেয় এমন সেন্সর, বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী ‘স্মার্ট’ লিফ্ট এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার পরিচালনার জন্য একটি ব্যবস্থাও রয়েছে।
কর্তব্য ভবন ৩-এ একসঙ্গে ৬০০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা থাকছে। একটি ওয়ার্ক হল, যোগব্যায়াম কেন্দ্র, মেডিক্যাল রুম, ক্যাফে, ২৪টি বড় কনফারেন্স হল এবং ২৬টি ছোট কনফারেন্স হলও থাকছে সেই ভবনে।
এ ছাড়াও ভবনটিতে ৬৭টি বৈঠক কক্ষ, ২৭টি লিফ্ট এবং দু’টি স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি থাকছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, ওই ভবনগুলি তৈরি হলে সরকারের বাড়িভাড়া বাবদ প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বাঁচবে। তিনি বলেন, ‘‘এই ভবনগুলি থেকেই আধুনিক ভারতের বিকাশের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
বর্তমানে, অনেক মন্ত্রক শাস্ত্রী ভবন, কৃষি ভবন, উদ্যোগ ভবন এবং নির্মাণ ভবনের মতো পুরনো ভবন থেকে কাজ করছে। এই ভবনগুলি ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান সরকারের মতে, ওই ভবনগুলি আর মন্ত্রক চালানোর জন্য উপযুক্ত নয়।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খট্টর মঙ্গলবার জানিয়েছেন, নির্মাণকাজ চলাকালীন ওই চারটি ভবনে থাকা মন্ত্রকগুলি দু’বছরের জন্য কস্তুরবা গান্ধী মার্গ, মিন্টো রোড এবং নেতাজি প্যালেসে অস্থায়ী ভাবে স্থানান্তরিত হবে।
সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক ১০টি কেন্দ্রীয় সচিবালয় (কমন সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট বা সিসিএস) নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। মনে করা হচ্ছে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে সেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
সরকার জানিয়েছে, কিছু ভবন যেমন আছে তেমনই রাখা হবে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় আর্কাইভ, জওহরলাল নেহরু ভবন এবং অম্বেডকর অডিটোরিয়াম। এই ভবনগুলি তুলনামূলক ভাবে নতুন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাণিজ্য ভবনও একই রকম ভাবে রেখে দেওয়া হতে পারে।
১০টি সাধারণ কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের মধ্যে ২ এবং ৩ নম্বর সিসিএস ভবন নির্মীয়মাণ এবং আগামী মাসের মধ্যে এগুলির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। ১০ নম্বর সিসিএস ভবনের নির্মাণ আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ৬ এবং ৭ নম্বর সিসিএস ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে।
সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে, সরকার ইতিমধ্যেই একটি নতুন সংসদ ভবন, ভাইস প্রেসিডেন্ট এনক্লেভ এবং বিজয় চক থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত বিস্তৃত কর্তব্য পথ পুনর্নির্মাণ করেছে।
সিসিএস ছাড়াও, সরকার একটি ‘এক্জ়িকিউটিভ এনক্লেভ’ও তৈরি করবে। এর মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় (পিএমও), ক্যাবিনেট সচিবালয়, ইন্ডিয়া হাউস এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয় থাকবে। এক্জ়িকিউটিভ এনক্লেভের দ্বিতীয় পর্যায়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি নতুন বাসভবন নির্মিত হবে।
সব ছবি: পিটিআই।