শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১১
সিনেমার পর্দায় ঝাঁ-চকচকে দুনিয়ার মতোই এককালে সদারঙিন ছিল তাঁর জীবন। তবে পরিচালকের ‘কাট’ বলার সঙ্গে সঙ্গে যেমন বাস্তবে ফিরে আসেন অভিনেতারা, তেমনই এক লহমায় বদলে গিয়েছিল তাঁর তারকা জীবন। এককালে দু’হাতে টাকা ওড়ালেও শেষ জীবনে কপর্দকহীন হয়ে পড়েন। এককালে তিনি ১২৪টি বাড়ির মালিক হলেও বর্তমানে তাঁর পরিবারের কাছে একটি বাড়িও নেই।সিনেমার পর্দায় ঝাঁ-চকচকে দুনিয়ার মতোই এককালে সদারঙিন ছিল তাঁর জীবন। তবে পরিচালকের ‘কাট’ বলার সঙ্গে সঙ্গে যেমন বাস্তবে ফিরে আসেন অভিনেতারা, তেমনই এক লহমায় বদলে গিয়েছিল তাঁর তারকা জীবন। এককালে দু’হাতে টাকা ওড়ালেও শেষ জীবনে কপর্দকহীন হয়ে পড়েন। এককালে তিনি ১২৪টি বাড়ির মালিক হলেও বর্তমানে তাঁর পরিবারের কাছে একটি বাড়িও নেই।
কথা হচ্ছে তামিল সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা পি ইউ চিন্নাপ্পাকে নিয়ে। তাঁর পরিবারের অবস্থা নতুন করে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
তামিল চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম দিকের এবং সবচেয়ে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অভিনেতাদের মধ্যে এক জন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন চিন্নাপ্পা। কেরিয়ারের শীর্ষে বহু সম্পত্তির মালিক ছিলেন তিনি।
অভিনয় করেই তামিলনাড়ুর পুদুক্কোত্তাইতে ১০০০ একর জমি কিনেছিলেন চিন্নাপ্পা। ১২৪টি বাড়িরও মালিকানা ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁর পরিবার নিঃস্ব। বলার মতো আর কোনও সম্পত্তিই তাঁর উত্তরাধিকারীদের কাছে নেই।
পুদুক্কোত্তাইয়ের থিয়েটারকর্মী উলাগা নাথপ্পিল্লাই এবং মীনাক্ষী আম্মালের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন চিন্নাপ্পা। বাবার থিয়েটার দেখে খুব কম বয়সেই মঞ্চের প্রতি আকৃষ্ট হন তিনি। পাঁচ বছর বয়স থেকে চিন্নাপ্পাও প্রবেশ করেন থিয়েটারের জগতে।
‘সাথারাম’ নাটকে অভিনয় চিন্নাপ্পাকে স্বীকৃতি এনে দেয়। ১২ বছর বয়সে ‘মাদুরাই অরিজিনাল বয়েজ় কোম্পানি’তে ১৫ টাকা বেতনে থিয়েটার করতে শুরু করেন চিন্নাপ্পা।
এক দিন চিন্নাপ্পাকে নাটকের গান গাইতে শুনে মুগ্ধ হয়ে যান সংস্থার মালিক সচ্চিদানন্দ পিল্লাই। ব্যতিক্রমী প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ চিন্নাপ্পার বেতন একধাক্কায় ১৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করে দেন তিনি। সিনেমায় পা দেওয়ার আগে চিন্নাপ্পা হয়ে উঠেছিলেন তামিলনাড়ুর নাট্যজগতের অন্যতম বড় আকর্ষণ।
এর পরের কয়েক বছর কুস্তি এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে জনপ্রিয় প্রাচীন ভারতীয় মার্শাল আর্ট সিলাম্বমে নিজেকে পারদর্শী করে তোলেন তিনি। শারীরিক শক্তিতে খ্যাতি অর্জন করার পর বড় পর্দায় কাজ জোটাতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি চিন্নাপ্পাকে।
জনপ্রিয় নাটক ‘চন্দ্রকণ্ঠ’ নিয়ে সিনেমা তৈরি হলে সেই সিনেমায় সুন্দর রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান চিন্নাপ্পা। সেটিই ছিল তাঁর তামিল চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের সূচনা।
গান, অভিনয় এবং শরীরী কেরামতি— তিন দিকেই সমান দক্ষ ছিলেন চিন্নাপ্পা। এর জন্য ছবিতে কাজ শুরুর সময়ই ‘সাগল কলা কথানায়কন’ খেতাব অর্জন করেন তিনি। ‘উথামাপুথিরন’, ‘কান্নাগি’ এবং ‘জগথালাপ প্রথাপন’-এর মতো ছবিগুলিতে অভিনয় চিন্নাপ্পার খ্যাতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। রাতারাতি তারকা তকমাও জুটেছিল।
সেই সময় তামিল চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন এমকে ত্যাগরাজ ভাগবত। ভাগবত এবং চিন্নাপ্পা— উভয়েই গণ্য হতে থাকেন সুপারস্টার জুটি হিসাবে। এমজিআর, যিনি পরে ভারতীয় সিনেমার এক বিশাল ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, তিনি চিন্নাপ্পাকে তাঁর গুরু হিসাবে বিবেচনা করতেন।
কেরিয়ারের শীর্ষে চিন্নাপ্পা তাঁর নিজের শহর পুদুক্কোত্তাইয়ের রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায় প্রচুর বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই সময়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চিন্নাপ্পা এত বেশি সম্পত্তি কিনেছিলেন যে পুদুক্কোত্তাইয়ের রাজা তাঁর সম্পত্তি অধিগ্রহণ সীমিত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
চিন্নাপ্পা বিয়ে করেছিলেন সহ-অভিনেতা এ শকুন্তলাকে। বিবাহিত জীবন সুখেই কাটছিল তাঁর। পাশাপাশি সিনেমাজগতের খ্যাতি তো ছিলই।
কিন্তু বেশি দিন সুখ সহ্য হয়নি চিন্নাপ্পার। তাঁর সুখের পথে কাঁটা হয়ে আসে অসুখ। রক্তবমি করার পরে ৩৫ বছর বয়সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন চিন্নাপ্পা। আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেননি। অসুস্থতার কারণে অল্প বয়সেই মৃত্যু হয় তাঁর।
চিন্নাপ্পার মৃত্যুর পর তাঁর জমানো বিশাল সম্পত্তি উধাও হতে শুরু করে। তাঁদের নামে যে সম্পত্তিগুলি ছিল, তা বিক্রি করে দেন শকুন্তলা। আর যে সম্পত্তিগুলি চিন্নাপ্পা আত্মীয়স্বজনের নামে কিনেছিলন, সেগুলি আর ফেরত পায়নি তাঁর পরিবার।
এ ভাবেই বিপুল সংখ্যক বাড়ি এবং জমির উপর মালিকানা হারায় চিন্নাপ্পার পরিবার। একে একে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির সবই হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের।
একসময় যে পরিবার পুদুক্কোত্তাইয়ের একরের পর একর জমি এবং বহু বাড়ির মালিক ছিল, তাদেরই আর কোনও সম্পত্তি সে শহরে নেই। একে একে ১২৪টি বাড়িরই মালিকানা হারিয়েছে চিন্নাপ্পার পরিবার।
চিন্নাপ্পার একমাত্র পুত্র রাজা বাহাদুরও চলচ্চিত্রে কেরিয়ার গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাবার মতো সাফল্য পাননি। রাজা বাহাদুর অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৮৯ সালের ‘কারাকাটাক্কারন’ ছবিতে কসাইয়ের চরিত্র।
সব ছবি: সংগৃহীত।
