পৃথিবীতে অসংখ্য ধনী ব্যক্তি আছেন। কিন্তু তাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ণের মতো রাজকীয় ভাবে খরচ করার মতো বিত্তশালী কমই আছেন। অমিতব্যয়ী হিসাবে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে তিনিই বিশ্বের ‘সবচেয়ে ধনী’ রাজা।
৭২ বছর বয়সি রাজা মহা বাজিরালংকর্ণ পরিচিত রাম দশম নামেও। বাবা রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ। রাজা ভূমিবল ৭০ বছর ধরে তাইল্যান্ডে শাসন করেছিলেন। বিশ্বের দীর্ঘ দিন শাসন করা রাজাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
কিন্তু আজ কথা হবে বাজিরালংকর্ণকে নিয়ে নয়, তাঁর কন্যা তথা তাইল্যান্ডের রাজকুমারী বজ্রকিতীয়ভা নরেন্দির দেব্যাবতীকে নিয়ে। রাজার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং তাই রাজবংশের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী বজ্রকিতীয়ভা।
১৯৭৭ সালে বাজিরালংকর্ণ বিয়ে করেন তাঁর আত্মীয়া সোওয়ামসায়ালি কিতিয়াকারাকে। তার পরের বছর ১৯৭৮ সালে জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র কন্যা বজ্রকিতীয়ভার।
তবে ৪৬ বছর বয়সি রাজকুমারী বর্তমানে কোমায় রয়েছেন। ২০২২ সালে হৃদ্রোগের কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপতালে ভর্তি হয়েছিলেন বজ্রকিতীয়ভা। অসুস্থতা থেকে জ্ঞান হারান তিনি। কোমায় চলে যান। তার পর থেকে কোমাতেই রয়েছেন।
চিকিৎসকদের অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কোনও ‘জাদুকাাঠি’তেই এখনও পর্যন্ত জ্ঞান ফেরানো সম্ভব হয়নি বজ্রকিতীয়ভার। বরং তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগের কথাই শুনিয়েছেন চিকিৎসক মহল।
বজ্রকিতীয়ভার চিকিৎসকেরা সম্প্রতি জানিয়েছেন কোমায় থাকা রাজকুমারীর রক্তে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং সেই সংক্রমণ বেশ গুরুতর। তবে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই নিয়ে রাজপরিবারের তরফেও বিবৃতি জারি করা হয়েছে।
৭৩ বছর বয়সি রাজা বাজিরালংকর্ণের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল ২০১৬ সালে। সিংহাসনে বসার পর থেকে তাঁর সন্তানদের মধ্যে কারও নাম পরবর্তী শাসক হিসাবে ঘোষণা করেননি তিনি।
তাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী মহিলা উত্তরাধিকারীদের সিংহাসনে বসার অধিকার নেই। তবে রাজকুমারী কোমায় যাওয়ার আগে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাইল্যান্ডের রাজপরিবারের সেই নিয়মে বদল আসতে পারে। সিংহাসনে বসতে পারেন বজ্রকিতীয়ভা। তবে রাজকুমারীর বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতিতে তেমনটা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
১৯৭৭ সালে খুড়ততো বোন সোওয়ামসায়ালি কিতিয়াকারাকে বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ। তাঁদেরই একমাত্র তথা রাজপরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান বজ্রকিতীয়ভা। পরবর্তী কালে আরও একাধিক বিয়ে করেন বাজিরালংকর্ণ।
ব্যাঙ্ককে ১৯৭৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জন্ম বজ্রকিতীয়ভার। রাজকুমারীর পড়াশোনা ইংল্যান্ডের নামকরা হিথফিল্ড স্কুল থেকে। পরে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
রাজকুমারী বজ্রকিতীয়ভা আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া এবং স্লোভেনিয়ায় কূটনীতিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের নারী, মাদক এবং অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়েও বিশেষ পদে ছিলেন।
বজ্রকিতীয়ভা দায়িত্ব পালন করেছেন তাইল্যান্ডে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসেও। রাজার রয়্যাল সিকিউরিটি কমান্ড ইউনিটে জেনারেল পদেও অধিষ্ঠিত।
তবে তাইল্যান্ডের জাতীয় রাজনীতি নিয়ে মূলত নীরবই ছিলেন বজ্রকিতীয়ভা। ২০২০ সালে রাজতন্ত্র সংস্কারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের সময়ও বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে হৃদ্রোগের কারণে জ্ঞান হারানোর পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বজ্রকিতীয়ভাকে। তার পর থেকে কোমায় রয়েছেন রাজকুমারী।
রাজপরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, ফুসফুস এবং কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হয় বজ্রকিতীয়ভাকে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামও ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে বজ্রকিতীয়ভার চিকিৎসক দল তাঁর রক্তপ্রবাহে গুরুতর সংক্রমণ শনাক্ত করে। এর পরেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় তাঁর শরীরে। তাঁকে রক্তচাপের ওষুধও দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রাজপরিবারের তরফে।
ছবি: সংগৃহীত।