নাতি কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। দুই পুত্রও বলিউডের সিনেমাজগতের নক্ষত্র। কিন্তু তাঁর পক্ষে বলিউডে কেরিয়ার গড়া সহজ ছিল না। বাঙালি গায়িকার প্রেমে পড়ে বিয়ে করার কারণে চাকরি হারাতে হয়েছিল। অর্থাভাবে দিনের পর দিন প্ল্যাটফর্মে থাকতে হয়েছিল রোশনলাল নাগরথকে।
১৯১৭ সালের জুলাই মাসে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত পঞ্জাব প্রদেশে জন্ম রোশনলালের। শৈশব থেকে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি। পরে মাইহার ঘরানার গুরু উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের কাছে সরোদ বাজানো শিখেছিলেন রোশনলাল।
১৯৪০ সালে সঙ্গীত পরিচালক খোওয়াজা খুরশিদ আনওয়ারের নজরে পড়েন রোশনলাল। তাঁর দৌলতে দিল্লির নামকরা রেডিয়ো সংস্থায় এসরাজ বাজানোর চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। টানা আট বছর সেই সংস্থায় চাকরি করেছিলেন রোশনলাল। কিন্তু মনের মানুষের জন্য সেই চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল তাঁকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, দিল্লির রেডিয়ো সংস্থার মারফত রোশনলালের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বাঙালি গায়িকা ইরা মৈত্রের। কর্মসূত্রে পরিচিতি হলেও তার গণ্ডি কর্মপরিসরে বাঁধা পড়ে থাকেনি। বাঙালি গায়িকার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন রোশনলাল।
কানাঘুষো শোনা যায়, ইরার প্রেমে পড়ার আগে নাকি এক বার বিয়ে করেছিলেন রোশনলাল। বাঙালি গায়িকার সঙ্গে সংসার বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন পূরণও করেছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে রেডিয়ো সংস্থার মোটা বেতনের চাকরি খুইয়েছিলেন রোশনলাল।
চাকরি হারানোর পর ঘরছাড়াও হয়েছিলেন রোশনলাল। তবে তখনও দু’চোখে স্বপ্ন ছিল অফুরন্ত। সঙ্গীত নিয়ে কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই ইরাকে নিয়ে দিল্লি ছেড়ে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন রোশনলাল।
মুম্বই চলে গেলেও মাথার উপর ছাদ ছিল না রোশনলালের। নতুন বৌকে নিয়ে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসে দিন কাটাতেন তিনি। হঠাৎ তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। রেলস্টেশনে রোশনলালের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কেদার শর্মার। চল্লিশের দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গীতিকার ছিলেন তিনি।
মুম্বই যাওয়ার পর ১৯৪৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিঙ্গার’ ছবিতে সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন রোশনলাল। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার কারণে কাজও পাচ্ছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কেদার।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে কেদার জানিয়েছিলেন যে, মুম্বইয়ের একটি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ইরার সঙ্গে রোশনলালকে বসে থাকতে দেখেছিলেন তিনি। রোশনলালকে দেখে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে এগিয়ে গিয়েছিলেন কেদার। সঙ্গীতের জগতে রোশনলাল কাজ করতে চান শুনে তাঁকে নিজের সঙ্গেই কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কেদার।
কেদারের দৌলতে ‘নেকী অউর বদী’ ছবিতে সুরকার হিসাবে প্রথম কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন রোশনলাল। কিন্তু সেই ছবি বক্স অফিসে সফল হয়নি। তার পরেও রোশনলালকে কাজ জোগাড় করে দিয়েছিলেন কেদার।
১৯৫০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘বাবরে নয়ন’। এই ছবির প্রযোজনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কেদার। রাজ কপূর এবং গীতা বালি অভিনীত এই ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন রোশনলাল। ছবিমুক্তির পর তার গানগুলি হিট হয়। রাতারাতি বলিপাড়ায় পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন রোশনলাল।
পঞ্চাশ থেকে ষাটের দশকে বলিপাড়ার জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালকের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন রোশনলাল। তাঁর দুই পুত্র রাকেশ রোশন এবং রাজেশ রোশনও বলিউডের ফিল্মজগতে নিজেদের জায়গা তৈরি করে ফেলেন।
২০ বছর ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন রোশনলাল। ১৯৬৭ সালের নভেম্বরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫০ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন তিনি।
বলিউডের রোশন পরিবারের স্তম্ভ ছিলেন রোশনলাল। তাঁর নাতি হৃতিক রোশন বর্তমানে কোটি কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক।
ঠাকুরদা রোশনলাল গৃহহীন অবস্থায় মুম্বই পৌঁছেছিলেন। সেখানে তাঁর নাতি হৃতিকের সম্পত্তির পরিমাণ ৩,১০০ কোটি টাকা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, ছবিপ্রতি ৬৫ থেকে ৮৫ কোটি টাকা পারিশ্রমিক আদায় করেন তিনি।
বিজ্ঞাপনপ্রতি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা উপার্জন করেন হৃতিক। মুম্বইয়ের জুহুতে একটি সমুদ্রমুখী অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। তা ছাড়া, লোনাভলায় একটি খামারবাড়ি রয়েছে হৃতিকের। নিজস্ব ব্যবসা থেকেও আলাদা ভাবে রোজগার হয় হৃতিকের।
সব ছবি: সংগৃহীত।