পৃথ্বীরাজ কপূর, ধর্মেন্দ্র, সুনীল দত্ত, অশোক কুমারের মতো বলি নায়কের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। কেরিয়ারের ঝুলিতে হাতেগোনা মাত্র ১০টি ছবি। প্রথম সিনেমার পর রাতারাতি পরিচিতি পেলেও সাফল্য ক্ষণস্থায়ী ছিল নায়িকার জীবনে। পরিবারের অমতে বিয়ে করার পর স্বামী ছেড়ে চলে যান। রোজগারের জন্য প্রেমিক ঠেলে দিয়েছিলেন দেহব্যবসার দিকে। অর্থাভাবে ঠেলাগাড়িতে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলি অভিনেত্রী বিমীর মৃতদেহ।
১৯৪৩ সালে পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম বিমীর। তাঁর প্রকৃত নাম বিমলেশ কৌর ওয়াধাবন। ছোট থেকে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন বিমী। কিন্তু পরিবারের মত ছিল না। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
নায়িকা হওয়ার স্বপ্নপূরণের আগে বিয়ে করে ফেলেছিলেন বিমী। শিব আগরওয়াল নামে কলকাতার এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁদের বিয়েতে দুই পরিবারেরই মত ছিল না। তবুও নিজেদের মতো সংসার পেতেছিলেন বিমী এবং শিব।
রবিশঙ্কর শর্মা নামের বলিউডের এক সঙ্গীত পরিচালকের নজরে পড়েছিলেন বিমী। কলকাতার এক পার্টিতে গিয়েছিলেন রবি। সেখানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিমী এবং শিব। পার্টিতে এক ঝলক দেখেই বিমীকে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল রবির।
বিমীর কাছে অভিনয়ের কথা পেড়েছিলেন রবিই। কলকাতা ছেড়ে মুম্বইয়ে চলে যেতে বলেছিলেন বিমীকে। বিমীও নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলে গিয়েছিলেন মুম্বই। ইতিমধ্যেই বন্ধুসম বলি পরিচালক বিআর চোপড়ার কাছে বিমীর কথা জানিয়েছিলেন রবি। পরিচালকেরও নায়িকা হিসাবে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল বিমীকে।
১৯৬৭ সালে বিআর চোপড়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘হমরাজ়’। বলি অভিনেতা সুনীল দত্তের নায়িকা হিসাবে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিমী। পরিবারের শত আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিমীর স্বামী তাঁকে বলি ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার বেছে নেওয়ার জন্য সমর্থন করেছিলেন।
বিমীর কেরিয়ারের প্রথম ছবি বক্স অফিসে সাফল্যও পেয়েছিল প্রচুর। রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন নায়িকা। কিন্তু সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি তিনি। পরে একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও বিমীর কোনও সিনেমাই বক্স অফিসে জায়গা করতে পারেনি।
‘হমরাজ়’ মুক্তির এক বছরের মাথায় মুক্তি পেয়েছিল ‘আব্রু’। অশোক কুমারের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বিমী। পরে শশী কপূরের সঙ্গে ‘পতঙ্গা’, পৃথ্বীরাজ কপূরের সঙ্গে ‘নানক নাম জাহাজ হ্যায়’ নামের পঞ্জাবি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন বিমী। কিন্তু জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে অভিনয় করলেও কেরিয়ারে বিশেষ কোনও লাভ হয়নি নায়িকার।
জয়া বচ্চনের ‘গুড্ডি’ ছবিতে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন বিমী। ১৯৮১ সালে সুভাষ ঘাইয়ের পরিচালনায় তারকাখচিত ‘ক্রোধী’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বিমীকে। তাঁর মৃত্যুর বহু পরে ছবিটি মুক্তি পায়। ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী, জ়ীনত আমন, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, শশী কপূর, অমরীশ পুরীর মতো নামজাদা তারকারা ছিলেন এই ছবিতে। কিন্তু বিমীর চরিত্র ছিল নামমাত্র।
বিমীর নায়িকা হওয়ার স্বপ্নকে যিনি সমর্থন করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিনিই চড়াই-উতরাইয়ের যাত্রায় সঙ্গ দেননি। নায়িকা হিসাবে সফল না হওয়ায় শিবের সঙ্গে বিমীর সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছিল। কানাঘুষো শোনা যায় যে, শিবের পরিবার নাকি তাঁকে বিমীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিল। পরিবারের পরামর্শ মেনে বিমীকে বিবাহবিচ্ছেদ দিয়েছিলেন শিব।
বড়পর্দায় বিশেষ কাজ পাচ্ছিলেন না বিমী। বিভিন্ন পত্রিকার জন্য ফোটোশুট করা শুরু করলেও ধীরে ধীরে রোজগারের সেই পথটুকুও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কী ভাবে আবার বলিপাড়ায় ফিরে আসবেন তার দিশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।
কলকাতায় এসে পোশাকের ব্যবসা শুরু করেছিলেন বিমী। কিন্তু সেই ব্যবসায় ভরাডুবি হওয়ায় নিজের সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তখনই বিমীর জীবনে কান্ডারি হয়ে দেখা দিয়েছিলেন এক তরুণ। কিন্তু সেই ভুল ভাঙতে বেশি দেরি হয়নি নায়িকার।
বিবাহবিচ্ছিন্না বিমীর কেরিয়ার যখন রসাতলে, তখন তাঁর সঙ্গে জলি নামে এক তরুণের আলাপ হয়েছিল। পেশায় ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর ছিলেন জলি। বিমী ভেবেছিলেন, জলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখলে হিন্দি ছবিতে আবার কোনও কাজ পেতে পারেন তিনি। নায়িকার অসহায়তার সুযোগ নিয়েছিলেন জলি।
বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায় যে, বিমীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন জলি। কিন্তু অভিনয়ের কাজ জোগাড় করে দেওয়ার পরিবর্তে নায়িকাকে ধীরে ধীরে দেহব্যবসার দিকে ঠেলে দিতে শুরু করেছিলেন জলি। কম সময়ের মধ্যে সহজ উপায়ে উপার্জনের স্বাদ পেয়ে গিয়েছিলেন বিমীও।
অন্ধকার কূপ থেকে সহজে নিজেকে বার করতে পারেননি বিমী। বরং দিনের পর দিন গভীর আঁধারে ডুবে যেতে থাকেন তিনি। মদের প্রতি আসক্তি বাড়তে থাকে তাঁর। মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় বিমীর।
১৯৭৭ সালের অগস্ট মাসে মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালে অসুস্থতার কারণে মারা যান বিমী। মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে কেউ ছিলেন না। এমনকি, তাঁর সঞ্চয়ে কোনও টাকাপয়সাও ছিল না। বলিপাড়া থেকে হারিয়ে যাওয়া নায়িকার মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত ঠেলাগাড়িতে তুলে শ্মশান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সকল ছবি: সংগৃহীত।