হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সংস্কারে তাঁর বেতন দান করেছেন ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ কথা ঘোষণা করে ট্রাম্প দাবি করেন, জর্জ ওয়াশিংটন ছাড়া তিনিই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউস সংস্কারের জন্য বেতন দান করেছেন। বুধবার ৬ অগস্ট হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারির বিবৃতিতে এই ঘোষণা করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ট্রাম্প তাঁর প্রথম বেতনের চেক সরাসরি হোয়াইট হাউস হিস্টোরিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে হোয়াইট হাউস স্টেট বলরুম সংস্কারের খরচ বহন করা হবে। সেই সংস্কারের জন্য খরচ পড়বে ২০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়াবে এক হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘‘আমি গর্বিত যে আমিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট (প্রয়াত জর্জ ওয়াশিংটন বাদে) যিনি নিজের বেতন দান করেছেন।’’ যদিও ট্রাম্পের এই দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প-বিরোধীরা। উদাহরণ হিসাবে উঠে এসেছে প্রয়াত দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এবং হারবার্ট হুভারের নাম। তাঁরা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেতন দান করেছিলেন বলে দাবি।
এই বেতনদান প্রসঙ্গ সামনে আসতেই জনগণের কৌতূহল জেগেছে, কত টাকা বেতন পান মার্কিন দেশের সর্বময় কর্তা। কত টাকাই বা সংস্কার তহবিলে দান করলেন ট্রাম্প? সকলেই জানতে ইচ্ছুক বিশ্বের সর্বশক্তিমান দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে কত বেতন পান তিনি? বেতন ছাড়া আর কী কী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন আমেরিকার প্রথম নাগরিক?
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, বছরে বেতন বাবদ ৪ লক্ষ ডলার পান প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্টই দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। ফলে তাঁর বেতনও অন্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
আমেরিকার সাধারণ নাগরিকদের গড় বার্ষিক বেতন ভারতীয় মুদ্রায় ৩৭.৪১ লক্ষ টাকা। সেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বার্ষিক বেতন ভারতীয় মুদ্রায় তিন কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। এক মাস অন্তর সেই বেতনের টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ, প্রতি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতন হল ৩৩,৩৩৩ মার্কিন ডলার। অঙ্কটা ভারতীয় মুদ্রায় ২৮.১৩ লাখ টাকার মতো।
মজার বিষয় হল, গত ২৪ বছর ধরে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বেতনের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়ে গিয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ট্রাম্প ও তাঁর পূর্বসূরি যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন তাঁদের জন্য একই বেতনক্রম ধার্য রয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বেতন শেষ বার বেড়েছিল ২৩ বছর আগে জর্জ বুশের আমলে৷ দু’দশক বেতন না বাড়লেও এখনও আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বেতনই বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিরিখে প্রথমের দিকে রয়েছে৷
২০০১ সালের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রাপ্ত বেতন ছিল ২ লক্ষ ডলার। সেটাও বার্ষিক বেতন ছিল। ১৯৬৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তাঁরা বেতন হিসাবে বছরে ২ লক্ষ ডলার করে পেয়ে এসেছেন। ২০০১ সালে আমেরিকার পয়লা নম্বর পদের বেতনের পরিমাণ একেবারে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়।
শুধু বেতন নয়, বিভিন্ন খরচের জন্য আলাদা ভাতাও পান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্প বার্ষিক অন্যান্য খরচ বাবদ পান ৪২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া বিনোদন এবং ভ্রমণের জন্য আলাদা আলাদা অর্থব্যয় করা হয়।
বিনোদন এবং ভ্রমণের জন্য খরচ বাবদ পাবেন যথাক্রমে ৮৪ লক্ষ এবং ১৬ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের জন্য আমেরিকার কোষাগার থেকে বরাদ্দ হয় বছরে ৪ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসের সজ্জাকে নিজের পছন্দমতো করে তোলার জন্য প্রায় ৮৪ লক্ষ টাকা পান। তবে বারাক ওবামার মতো অনেকেই সেই অর্থ ব্যয় করেননি। তার পরিবর্তে নিজের তহবিল থেকে খরচ করে হোয়াইট হাউস সাজিয়েছিলেন।
শুধু বেতন নয়, প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ ফুরোলে বার্ষিক পেনশন হিসাবে বছরে দেড় কোটি টাকার বেশি পেয়ে থাকেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি, আজীবন বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবাও মিলবে। এই পরিষেবা পাবেন ট্রাম্পও।
যাতায়াতের জন্য ট্রাম্প ব্যবহার করেন বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। এর মধ্যে রয়েছে লিমুজ়িন, মেরিন ওয়ান, দ্য বিস্টের মতো গাড়ি। আকাশপথে প্রেসিডেন্টের ভ্রমণের জন্য রয়েছে এয়ারফোর্স ওয়ান বিমান। নিরাপত্তার দিক থেকে একে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বলেও গণ্য হয়।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে পরিমাণ বেতন পান তার ৫ ভাগের এক ভাগও পান না ভারতের রাষ্ট্রপতি। আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতির বেতন মাসিক ৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল দেড় লাখ টাকা। বেতন ছাড়াও রাষ্ট্রপতিরা বিনা খরচে চিকিৎসার সুযোগ পান সারা জীবন। অবসরের পরে রাষ্ট্রপতিরা পান মাসে দেড় লাখ টাকা।
ভারতের রাষ্ট্রপতিরা ব্যবহারের জন্য পান কালো রঙের একটি মার্সেডিজ় বেঞ্জ গাড়ি। মার্সেডিজ় ছাড়াও রাষ্ট্রপতির ব্যবহারের জন্য একটি লিমুজ়িনও থাকে।
সব ছবি:সংগৃহীত।