একঢাল কালো লম্বা খোলা চুল। পরনে গাঢ় নীল শাড়ি। মানানসই কালো সিকুইনের কাজ করা লম্বা হাতা ব্লাউজ়। গলায় পোলকির জমকালো নেকলেস। পুরু ঠোঁট, ধুসর চোখের আবেদনে কাত নেটপাড়া। সেই সাজে তিনি কখনও সোফায় বসে, কখনও বিলাসবহুল গাড়ির ভিতরে। নেটাগরিকেরা মুগ্ধ হয়েছেন তাঁর চোখ ঝলসানো রূপ আর আবেদনে।
সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সমাজমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন এক তরুণী। শুধুমাত্র লিপ সিঙ্কের ছোট্ট ছোট্ট ভিডিয়ো। আর তাতেই লক্ষ লক্ষ অনুগামী। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম সর্বত্রই তাঁকে নিয়ে আলোচনা।
নেটপ্রভাবীর মনোমুগ্ধকর হাসি এবং সৌন্দর্য অনেককে মুগ্ধ করেছে। তাঁর ঝকঝকে হাসি, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, উচ্ছল অভিব্যক্তি, সাজপোশাকে লক্ষ লক্ষ নেটাগরিকের মন মজেছে।
বলিউড অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়ার একটি জনপ্রিয় ছবির বিখ্যাত সংলাপ দিয়ে রিল তৈরি করে ভারতীয়দের নজর কেড়েছেন পড়শি দেশের সমাজমাধ্যমপ্রভাবী তরুণী। সমাজমাধ্যমে সদ্য ভাইরাল সেই বিষয়স্রষ্টা ও নেটপ্রভাবী এক জন পাকিস্তানি নাগরিক।
‘‘মেরি বডি মে সেনসেশন হোতে হ্যায়’’, সম্প্রতি এই সংলাপের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ঝড় তুলেছেন তরুণী। রূপের ঝলক, টানা টানা চোখ, মনমোহিনী হাসি দিয়ে ইন্টারনেটে আক্ষরিক অর্থেই ‘সেনসেশন’ হয়েছেন এই তন্বী। বহু নেটাগরিকের হৃদয় দখল করে নিয়েছেন রাতারাতি। নেটপাড়া জুড়ে এখন সকলের এক কৌতূহল, কে এই তরুণী? কী তাঁর পরিচয়?
সমাজমাধ্যমের এই উঠতি তারকা হলেন আলিনা আমির। তিনি লাহৌরের বাসিন্দা। ২০০৩ সালের ১ মে জন্ম আলিনার। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় এবং মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাঁর স্বপ্নপূরণে প্রতিনিয়ত সমর্থন জুগিয়েছিল পরিবারই।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও মডেল হওয়ার স্বপ্নপূরণে বাধা হয়ে ওঠেনি আলিনার পরিবার। মডেলিংয়ের পাশাপাশি এই তরুণী মেধাবীও বটে। গণিতেরই একটি শাখা ‘অ্যাকচুরিয়াল সায়েন্স’ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মডেলিংয়ের দুনিয়ায় পা রাখার পর দেশের একাধিক ব্র্যান্ডের প্রচারের মুখ হয়েছিলেন আলিনা। তবে অভিনয়ের প্রতি ছোট থেকে আকর্ষণ থাকলেও সেখানে এখনও পায়ের তলার জমি শক্ত করে উঠতে পারেননি ২২ বছরের তন্বী। বড়পর্দা বা ছোটপর্দায় ছাপ ফেলতে না পারলেও ক্যামেরার প্রতি অমোঘ টান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেননি আলিনা।
ক্যামেরার প্রতি ভালবাসাই তাঁকে সমাজমাধ্যমে বিষয়স্রষ্টা হিসাবে কেরিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। বলিউডের জনপ্রিয় গানগুলিকে তাঁর বিষয়বস্তু হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন আলিনা। আর তাতে যোগ করেছিলেন নিজস্বতা।
হিন্দি বা পঞ্জাবি গানের লিপ সিঙ্ক ভিডিয়োগুলি তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। লিপ সিঙ্ক এমন একটি ট্রেন্ড যা সমাজমাধ্যমে অনেকেই অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু আলিনার বিষয়বস্তুগুলিকে দর্শক একটু আলাদা বলে মনে করেছিলেন। তাতেই হু-হু করে বাড়তে থাকে অনুগামীর সংখ্যা।
মাত্র কয়েক দিনেই আলিনার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টগুলিতে অনুরাগীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অনুরাগীদের সংখ্যার নিরিখে বলিউডের তারকাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে আলিনার সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলি।
রাতারাতি এক জন সফল সমাজমাধ্যম প্রভাবী হয়ে ওঠেন আলিনা। টিকটকে সাড়ে ৯ লক্ষেরও বেশি ভক্ত রয়েছে তাঁর। ইনস্টাগ্রামেও স্বচ্ছন্দ এই পাক তরুণী। ২৫ লক্ষ অনুগামী তাঁকে অনুসরণ করেন সেখানে।
তাঁর প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা ভিডিয়ো লক্ষ লক্ষ বার দেখা হয়েছে টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে। প্রতিটি ভিডিয়ো গড়ে ৮ লক্ষ ৮৪ হাজার বার দেখা হয়েছে বলে দাবি। আলিনার চ্যানেলটি তাঁর ট্রেন্ডিং লিপ-সিঙ্ক রিল, সৌন্দর্য সামগ্রী, ফ্যাশন টিপস এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য জনপ্রিয়।
ডিজিটাল বিষয়স্রষ্টার ইনস্টাগ্রামে মাত্র ১৭২টি পোস্ট রয়েছে। কিন্তু তা দিয়েই তিনি সমাজমাধ্যমে খ্যাতি লাভ করেছেন। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির আলিনা তাঁর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, সুন্দর টানা টানা চোখ এবং বিষয়বস্তু দিয়ে সকলের মন জয় করে ফেলেছেন।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, এই নেটপ্রভাবী তাঁর প্রতি পোস্ট থেকে প্রায় ১,২০০ ডলার বা এক লক্ষ টাকারও বেশি আয় করেন। শুধুমাত্র টিকটক থেকেই তাঁর বার্ষিক আয় ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ডলার বা ২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা।
ট্রেন্ড অনুসরণ করে যে রিল, ভিডিয়ো তৈরি করেন তা দিয়ে অল্প দিনেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন আলিনা। সমাজমাধ্যমের অ্যালগরিদম মেনে তিনি এমন রিল তৈরি করেন যা দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটক-সহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে সৌন্দর্যের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা মিশিয়ে নিজের জায়গা পাকা করতে সফল হয়েছেন আলিনা।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সাদ নামের এক তরুণের সঙ্গে ডেটিং করছিলেন আলিনা। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটেছে। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি দেননি তিনি।
ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁদের যৌথ ছবি সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর তাতেই অনুরাগীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে এক বার আলিনা উল্লেখ করেছিলেন যে সম্প্রতি প্রেমে তাঁর হৃদয় ভেঙে গিয়েছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।