আর মাত্র দেড় মাসের অপেক্ষা। তার পরেই এই উপমহাদেশে শুরু হবে পুরুষদের আইসিসি টি-২০ ক্রিকেটের মেগা ইভেন্ট, বিশ্বকাপ। ভারত ও শ্রীলঙ্কায় এই প্রতিযোগিতার আসর বসায় টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ‘টিম ইন্ডিয়া’। ২০২৪ সালের পুনরাবৃত্তি ‘মেন ইন ব্লু’ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে এখন থেকেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। এই আবহে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে ভারতীয় বোর্ড। সে দলে জায়গা পাননি অনেক তারকা ক্রিকেটার। কেমন হবে বাদ পড়া খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত দল?
বাদ পড়া ক্রিকেটারদের তালিকায় প্রথমেই নাম আছে শুভমন গিলের। টেস্ট এবং এক দিনের আন্তর্জাতিকে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের দলে গিল জায়গা না পাওয়ায় অবাক হয়েছেন অনেকেই। নির্বাচকেরা অবশ্য এর জন্য তাঁর সাম্প্রতিক ফর্মকেই দায়ী করেছেন। ২০২৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন না গিল।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় দলের জার্সিতে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে ফেরেন শুভমন। তার পর থেকে গত দু’মাসে এই ফরম্যাটে একেবারেই বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে পারেননি তিনি। দেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত ৩৬টি টি-২০ ম্যাচ খেলছেন পঞ্জাবের এই ক্রিকেটার। মোট রান করেছেন ৮৬৯, সর্বোচ্চ ১২৬। তাঁর গড় ২৮.০৩ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৫৯। আন্তর্জাতিক টি-২০তে পাঁচ বার অপরাজিত থেকেছেন শুভমন। একটি শতরান এবং তিনটি অর্ধ শতরান রয়েছে তাঁর।
গিলের মতোই আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি টেস্ট এবং এক দিনের আন্তর্জাতিকে বাঁহাতি ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল। এই দুই ফরম্যাটে কিন্তু যথেষ্ট ভাল ফর্মেই রয়েছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে ২৩টি কুড়ি-বিশের ম্যাচে ২২ বার ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন যশস্বী। তাঁর ব্যাট থেকে মোট রান এসেছে ৭২৩, সর্বোচ্চ ১০০। এই ফরম্যাটে তাঁর গড় ৩৬.১৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১৬৪.৩১। আন্তর্জাতিক টি-২০তে মোট ২ বার অপরাজিত থেকেছেন জয়সওয়াল। একটি শতরান এবং পাঁচটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর।
আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের জাতীয় দলে জায়গা পাননি রুতুরাজ গায়কোয়াডও। দেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত ২৩টি কুড়ি-বিশের ম্যাচে ২০ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন তিনি। এই ফরম্যাটে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ১২৩। আন্তর্জাতিক টি-২০তে একটি শতরান এবং চারটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। রুতুরাজের ব্যাটিং গড় ৩৯.৫৬, স্ট্রাইক রেট ১৪৩.৫৩। জাতীয় দলের জার্সিতে মোট ৬৩৩ রান করেছেন তিনি।
৫১টা টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাননি শ্রেয়স আইয়ার। দেশের হয়ে এই ফরম্যাটে ১,১০৪ রান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ স্কোর ৭৪। আন্তর্জাতিক কুড়ি-বিশের ম্যাচে মোট আটটা অর্ধশতরান রয়েছে শ্রেয়সের। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৩৬.১১ এবং গড় ৩০.৬৬। অতীতে বহু বার ব্যাটিং বিপর্যয়ের সময় পতন আটকে দলের জন্য বড় রান করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০২৩ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থ। যদিও এ বারের টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে মাঠে নামবেন না এই বাঁহাতি ব্যাটার। জাতীয় দলের জার্সিতে ৭৬টা কুড়ি-বিশের ম্যাচে ৪৭ বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। করেছেন ১,২০৯ রান, সর্বোচ্চ ৬৫। টি-২০ আন্তর্জাতিকে ঋষভের গড় ২৩.২৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১২৭.২৬। মোট তিনটি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর।
জাতীয় দলের জার্সিতে কুড়ি-বিশের আন্তর্জাতিকে ঋষভের পারফরম্যান্স ভাল। উইকেটের পিছনে তাঁর দস্তানায় ধরা পড়েছে ৪০টি ক্যাচ। এ ছাড়া ১১টি স্টাম্প করেছেন তিনি। ব্যাটিংয়ের সময় ১১১টি চার এবং ৪৪টি ছক্কা মেরেছেন ঋষভ। ওপেনিং স্লটে খেলতে পারেন বলেই কি তাঁর জায়গায় সঞ্জু স্যামসনকে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের দলে রাখলেন নির্বাচকেরা? উঠছে প্রশ্ন।
নতুন খেলোয়াড়দের মধ্যে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে জাতীয় দলে দেখা যাবে না রিয়ান পরাগকে। দেশের হয়ে ৯টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। করেছেন ১০৬ রান, সর্বোচ্চ ৩৪। তাঁর গড় ১৭.৭৬ এবং স্ট্রাইক রেট ১৫১.৪২। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে বোলিংও করতে পারেন তিনি। সেখানে তাঁর ইকোনমি রেট ৬.৭২।
উইকেটরক্ষক জিতেশ শর্মাকেও টি-২০ বিশ্বকাপের দলে রাখেননি নির্বাচকেরা। দেশের হয়ে ১৬টি ম্যাচে ১৬২ রান করেছেন তিনি, সর্বোচ্চ ৩৫। জিতেশের ব্যাটিং গড় ১৮ এবং স্ট্রাইক রেট ১৫১.৪। তাঁর দস্তানায় জমা পড়েছে ৯টি ক্যাচ। এ ছাড়া দু’বার স্টাম্প করেছেন তিনি। কম অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি দলে জায়গা পেলেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের হয়ে টেস্ট, এক দিনের আন্তর্জাতিক এবং টি-২০, তিন ফরম্যাট খেলা পেসার মহম্মদ সিরাজকে বিশ্বকাপের দলে রাখেননি নির্বাচকেরা। জাতীয় দলের জার্সিতে মোট ১৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। দিয়েছেন ৪৫২ রান। এই ফরম্যাটে তাঁর সেরা বোলিং ১৭ রানে চার উইকেট। সিরাজের ইকোনমি ৭.৭৯। টি-২০ আন্তর্জাতিকে মোট ১৪টি উইকেট পেয়েছেন হায়দরাবাদের ডানহাতি পেসার।
টি-২০ আন্তর্জাতিকে ২৭ রানে দুই উইকেট পাওয়া খলিল আহমেদকে বিশ্বকাপের দলে রাখেনি বোর্ড। দেশের হয়ে এই ফরম্যাটে ১৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। দিয়েছেন ৫৬২ রান। বাঁহাতি পেসার ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৮.৫১। তাঁর প্রাপ্ত উইকেটের সংখ্যা ১৬।
আসন্ন বিশ্বকাপের জাতীয় দলে জায়গা পাননি রাজস্থানের স্পিনার রবি বিষ্ণোই। এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে ৪২টা টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। দিয়েছেন ১,১৪২ রান। এই ফরম্যাটে মোট ৬১টি উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৩ রানে চার উইকেট রবির সেরা বোলিং। তাঁর ইকোনমি ৭.৩৫।
তামিলনাড়ুর বাঁহাতি স্পিনার সাই কিশোর দেশের হয়ে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে খেলেছেন মাত্র ৩টি ম্যাচ। ১২ রানে তিন উইকেট তাঁর সেরা বোলিং। সাইয়ের গড় ১৫.৭৫ এবং ইকোনমি মাত্র ৫.২৫। তাঁকেও জাতীয় দলে রাখেনি বোর্ড। ২৯ বছরের এই ক্রিকেটার আইপিএল খেলেন চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) হয়ে।
জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কেএল রাহুল টি-২০ বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন ভক্তরা। এই ফরম্যাটে দেশের হয়ে ৭৬টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। এতে তাঁর সর্বোচ্চ রান ১১০। মোট ২,২৬৫ রান করেছেন রাহুল। কুড়ি-বিশের আন্তর্জাতিকে মোট দুটো শতরান এবং ২২টা অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। রাহুলের গড় ৩৭.৭৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১৩৯.১২।
ডানহাতি পেসার প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে দলে রাখেননি নির্বাচকেরা। জাতীয় দলের জার্সিতে মোট পাঁচটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪১ রানে তিন উইকেট তাঁর সেরা বোলিং। এই ফরম্যাটে প্রসিদ্ধের ঝুলিতে রয়েছে মোট আটটি উইকেট। তাঁর ইকোনমি ১১, যেটা প্রসিদ্ধের দলে জায়গা না হওয়ার জন্য অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
ডানহাঁতি সুইং পেসার ভুবনেশ্বর কুমারকেও আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের দলে রাখেননি নির্বাচকেরা। জাতীয় দলের জার্সিতে মোট ৮৭টি কুড়ি-বিশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পেয়েছেন ৯০ উইকেট। মাত্র চার রানে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি রয়েছে তাঁর। ভুবির ইকোনমি মাত্র ৬.৯৬। কিন্তু, চোট-আঘাতজনিত সমস্যার কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন তিনি।
চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর টি-২০ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকর। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্যি যে এখন ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক বিকল্প আছে। আর তাই দল নির্বাচন করা বেশ কঠিন। বাদ পড়া ক্রিকেটারেরাও যথেষ্ট প্রতিভাবান। তবে আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে দল গঠন করেছি। তা ছাড়া খেলোয়াড়দের ফর্মের উত্থান-পতন থাকবেই। সেটাও টিম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।’’
সব ছবি: সংগৃহীত।