প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ উপার্জনকারী নায়িকাদের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন তিনি। ভারতেও তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমির। শুক্রবার তাঁর যে ছবিটি মুক্তি পেতে চলেছে তা নিয়েও চলছে নিষেধাজ্ঞা।
পহেলগাঁও-কাণ্ডের দু’মাস পর শুক্রবার পঞ্জাবি গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জ অভিনীত ‘সর্দারজি ৩’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা। রবিবার সমাজমাধ্যমের পাতায় ভিডিয়ো পোস্ট করে সে কথাই জানান দিলজিৎ। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। কারণ, দিলজিতের সঙ্গে সেই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে হানিয়াকে।
২০১৬ সালে উরি হামলার পর ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল পাকিস্তানি অভিনেতাদের। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল প্রায় সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ় (এফডব্লিউআইসিই)। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অশোক দুবে জানান, দেশের কোনও তারকা পাক শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে তাঁকেও ইন্ডাস্ট্রিতে নিষিদ্ধ করা হবে। এমনকি, সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলাও করা হবে বলে জানান অশোক।
পহেলগাঁও-কাণ্ডের পর পাকিস্তানি তারকাদের সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। সেই তালিকায় রয়েছে হানিয়ার নামও। তবে পহেলগাঁও-কাণ্ডের নিন্দায় সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন হানিয়া। ভারতীয়দের মতো তিনিও এই ঘটনায় ব্যথিত তা জানিয়ে তিনি লিখেছিলেন, “যে কোনও স্থানের দুর্ঘটনাই আমাদের কাছে সমান ভাবে দুঃখজনক। এই ঘটনায় যে নিরীহ মানুষেরা প্রাণ হারালেন তাঁদের জন্য আমার মন ভারাক্রান্ত।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে সাহায্য চেয়ে হানিয়া পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে অনুরোধ করছি, আমরা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ, আমরা ভারতীয়দের কোনও ক্ষতি করিনি। কিছু জঙ্গি ও পাকিস্তানি সেনা রয়েছেন কাশ্মীরের ঘটনার নেপথ্যে। যা পদক্ষেপ করার তা জঙ্গি ও পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে করুন। এখানকার সাধারণ মানুষকে ছেড়ে দিন।’’
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারতীয় অনুরাগীদের কাছে নাকি রসিকতার শিকার হয়েছিলেন হানিয়া। তাঁকে নাকি প্রচুর জলের বোতলের বাক্স পাঠানো হয়েছিল। বাক্সের উপর লেখা ছিল নায়িকার নাম। তবে ভারত থেকে হানিয়াকে এমন উপহার পাঠানোর কারণ কী?
১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, পহেলগাঁও-কাণ্ডের পর সাময়িক ভাবে তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত হওয়ার কারণেই রসিকতা করে ভারতের অনুরাগীরা জলভরা বোতলের বাক্স পাঠিয়েছিলেন হানিয়াকে।
বিজেপির চলচ্চিত্র সংগঠন চিত্রপট কামগার আঘাড়ির কোপের মুখে পড়ে দিলজিতের আসন্ন ছবি ‘সর্দারজি ৩’। তাদের দাবি, ‘সর্দারজি ৩’ যেন কোনও ভাবেই সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র না পায়। হানিয়া ছাড়াও এই ছবিতে পাকিস্তানের অভিনেতা নাসির চিনোতি, ড্যানিয়েল খাওয়ার ও সালিম আলবেলা অভিনয় করেছেন। ‘সর্দারজি ৩’ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিতর্ক তুঙ্গে। শেষ পর্যন্ত ছবিমুক্তিতেও পড়ে বাধা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, আপাতত ভারতে মুক্তি পাচ্ছে না ‘সর্দারজি ৩’। অনেক আগেই এই ছবি থেকে হানিয়াকে বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছিল। কিন্তু পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু দিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল দিলজিতের ছবির শুটিং। তাই হানিয়াকে নিয়েই সেই ছবির কাজ শেষ করতে হয় পঞ্জাবি শিল্পীকে।
তবে ‘সর্দারজি ৩’ ছবির ঝলক ভারতীয় দর্শকেরা দেখতে পাচ্ছেন না ইউটিউবে। নির্মাতারাই এই ছবির ঝলক ভারতীয়দের জন্য প্রকাশ করেননি। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মহলেই মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।
ছবির শুটিংয়ের আগে থেকেই দিলজিতের সঙ্গে পরিচয় হানিয়ার। ২০২৪ সালে লন্ডনে গানের অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন দিলজিৎ। সেখানে তাঁর অনুষ্ঠানে বলিউডের র্যাপার বাদশাও যোগ দিয়েছিলেন মঞ্চে। দর্শক-শ্রোতাদের ভিড়ে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন হানিয়া।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, বাদশার সঙ্গে নাকি সম্পর্কে রয়েছেন হানিয়া। মাঝেমধ্যেই একসঙ্গে ঘুরতে যান তাঁরা। এমনকি, বাদশার গানের কনসার্টে অধিকাংশ সময় উপস্থিত থাকেন হানিয়া। সমাজমাধ্যমেও একসঙ্গে ছবি পোস্ট করেন তাঁরা। পরে অবশ্য বাদশা জানিয়েছিলেন যে, হানিয়া তাঁর খুব কাছের বান্ধবী।
বাদশাই প্রথম নন। এর আগেও একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল হানিয়ার। গুঞ্জন শোনা যায়, পাকিস্তানি গায়ক আসিম আজ়হারের সঙ্গে প্রেম করতেন হানিয়া। যদিও আসিমের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বরাবরই অস্বীকার করেছেন তিনি।
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বাবর আজ়মের নামও বাদ পড়েনি হানিয়ার ‘প্রেমিক’-এর তালিকা থেকে। ২০২০ সালে এক মহিলা দাবি করেছিলেন, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবর। তার পর তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন। এর ফলে তিনি নাকি গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন। যদিও বাবর সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তার পর আবার গুজব ছড়াতে শুরু করেছিল যে, ২০২৩ সালেই নাকি বিয়ে করতে চলেছেন বাবর।
বাবরের বিয়ের জল্পনা বালিচাপা পড়তে না পড়তেই ছড়িয়ে পড়ে অন্য গুজব। শোনা যেতে থাকে, পাক অভিনেত্রী হানিয়ার প্রেমে মজেছেন বাবর। হানিয়া এবং বাবর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে একে অপরের প্রশংসা করতেও পিছপা হতেন না। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় হানিয়াকে ‘সুন্দরী’ আখ্যা দিতে দেখা গিয়েছিল বাবরকে। এক ভিডিয়োয় বাবরের সঙ্গে অভিনয় করার ইচ্ছাপোষণ করতেও দেখা গিয়েছিল হানিয়াকে।
বাবর-হানিয়া ‘জুটি’কে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি এবং অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মার সঙ্গেও তুলনা করতেন অনেকে। এমনকি, বিরাট-অনুষ্কার একটি ভিডিয়োয় বাবর এবং হানিয়ার মুখ বসিয়ে তা সমাজমাধ্যমের পাতায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই হানিয়াকে ‘পাকিস্তানের অনুষ্কা শর্মা’ বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন নেটাগরিকদের একাংশ।
১৯৯৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম হানিয়ার। ২০১৬ সালে ‘জনান’ ছবির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। তবে, ২০১৭ সালে ‘তিতলি’ নামে এক টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি।
পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার বিজ্ঞাপন প্রচারের মুখ হিসাবেও কাজ করেন হানিয়া। পাকিস্তানি সিনেমা এবং টেলিভিশনের খ্যাতনামী অভিনেত্রী তিনি। ‘মেরে হামসফর’ ধারাবাহিকের মাধ্যমে ভারত-সহ অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।
সব ছবি: সংগৃহীত।