Chinu Kala

১৫ বছরে ঘরছাড়া, ৩০০ টাকা সম্বল করে মুম্বইয়ে, রাত কাটিয়েছেন স্টেশনে! ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা চালান তরুণী

মাত্র শ’তিনেক টাকা সম্বল করে যে কিশোরী বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল, সে আজ ৩০০ কোটি টাকার সংস্থার মালিক। বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বপ্ননগরী মুম্বইয়ে পা রেখে পর পর দু’রাত রেলের প্ল্যাটফর্মেই রাত কাটাতে হয়েছিল পঞ্চদশী কিশোরীকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৩১
০১ ১৬
Chinu Kala

মাত্র ১৫ বছর বয়স। সাবালক হওয়ার আগেই মাথার উপরের নিশ্চিন্ত আস্তানা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল এক কিশোরী। কোনও কিছু না ভেবেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়িয়ে দিয়েছিল সে। ঘর ছেড়ে পথে নামার সেই দিনে পরনের জামা ও জুতো ছাড়া তার সম্বল ছিল মাত্র তিনশো টাকা। আর ছিল সাহস এবং অদম্য জেদ।

০২ ১৬
Chinu Kala

এই জেদটুকু ছিল বলেই হয়তো আর পাঁচজন সাধারণ মেয়ের মতো সংসারে আটকে পড়তে হয়নি চিনু কালাকে। বাড়িতে মন টিকত না চিনুর। ১৫ বছর পেরোতেই তিনি বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে কোথায় থিতু হবেন, কী করবেন তার কোনও নিশ্চয়তাই ছিল না।

০৩ ১৬
Chinu Kala

মাত্র শ’তিনেক টাকা সম্বল করে যে কিশোরী বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল সে আজ ৩০০ কোটি টাকার সংস্থার মালিক। ভারতের অন্যতম খ্যাতনামী ফ্যাশন জুয়েলারি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা চিনু কালা। গয়নার ব্যবসায় আজ তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক।

Advertisement
০৪ ১৬
Chinu Kala

চিনুর জন্ম ১৯৮১ সালের ১০ অক্টোবর রাজস্থানের এক সাধারণ পরিবারে। মাত্র এক বছর বয়সে মা তাঁকে ছেড়ে চলে যান। জন্মদাত্রী সৌদিতে চলে যাওয়ায় চিনু তাঁর বাবা এবং সৎমায়ের সঙ্গে থাকতেন। পরিবারে প্রায়ই সৎমা ও বাবার সঙ্গে অশান্তি লেগে থাকত চিনুর। সেই বয়সেই চিনুর উপলব্ধি ছিল, বেঁচে থাকার জন্য তাকে অর্থ উপার্জন করতে হবে।

০৫ ১৬
Chinu Kala

বাড়ি থেকে পালিয়ে স্বপ্ননগরী মুম্বইয়ে পা রেখে পর পর দু’রাত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই রাত কাটাতে হয়েছিল পঞ্চদশী কিশোরীকে। নতুন শহরে ছিল না কোনও আত্মীয়-পরিজন। সহায়-সম্বলহীন হলেও চিনুর মধ্যে ছিল অদ্ভুত এক জেদ ও আত্মবিশ্বাস। মুম্বইয়ে পা রাখার দিনগুলির কথা ভাবলে এখনও তাঁর হৃদয় কেঁপে ওঠে বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement
০৬ ১৬
Chinu Kala

মাত্র দু’দিনের মধ্যেই কাজ জোগাড় করে ফেলেছিলেন চিনু। স্টেশনেই তাঁকে বিমর্ষ অবস্থায় বসে থাকতে দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এক মহিলা। নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে একটি কাজও জুটে যায় তাঁর। দরজায় দরজায় ঘুরে ছুরির সেট, কোস্টার ইত্যাদি বিক্রি করার কাজ।

০৭ ১৬
Chinu Kala

সারা দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি যৎসামান্যই হত চিনুর। কোনও দিন ২০ টাকা, কোনও দিন ৬০ টাকা উপার্জন হত তাঁর। প্রতি রাতে ২০ টাকার বিনিময়ে একটি ডর্মিটরিতে থাকার ব্যবস্থাও জুটে যায় কপালজোরে।

Advertisement
০৮ ১৬
Chinu Kala

বেশির ভাগ বাড়িতেই তাঁর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হত। এ সব নিয়ে প্রথম প্রথম খুব ভেঙেও পড়তেন তিনি। তবে আয় এত কম ছিল যে বেশির ভাগ দিনই মাত্র এক বেলা অন্নসংস্থান করতে পারতেন চিনু। তবে হাল ছাড়েননি। মাত্র এক বছরের মধ্যে তিনিই আবার এই পেশায় এত দক্ষ হয়ে ওঠেন যে, তাঁকে তাঁর সংস্থা সুপারভাইজ়ারের পদে উন্নীত করে।

০৯ ১৬
Chinu Kala

২০০০ সালে ঘাটকোপারের একটি পোশাকের দোকানে সেলস গার্ল হিসাবে চাকরি পান। গ্রাহকদের আচরণ এবং ব্যতিক্রমী পরিষেবা কী ভাবে দিতে হয় সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে হাতে-কলমে কাজে লাগিয়েছিলেন চিনু।

১০ ১৬
Chinu Kala

মুম্বইয়ে তাঁর লড়াইয়ের দিনগুলিতে নানা রকম চাকরিতে হাত পাকিয়েছিলেন চিনু। রেস্তরাঁয় ওয়েট্রেস-এর কাজও করেছেন। রিসেপশনিস্ট, টেলিকলারের মতো চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছিল জীবনধারণের জন্য। এমন দিনও গিয়েছে তাঁর যখন সারা দিন সেলসের কাজ করার পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রেস্তরাঁয় খাবার পরিবেশন করে উপার্জন করেছেন। উপার্জন করেছেন মডেলিং থেকেও।

১১ ১৬
Chinu Kala

মুম্বইয়ের টাটা কমিউনিকেশনসে টেলিমার্কেটিং বিভাগে এক্‌জ়িকিউটিভ হিসাবে কাজ করার সময় অমিত কালার সঙ্গে আলাপ হয় চিনুর। ২০০৪ সালে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা অমিতের সঙ্গে বিয়ের পর চিনুর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। অমিতই তাঁকে নতুন কিছু করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। বড় ঝুঁকি নেওয়ার জন্য অমিতই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন চিনুকে।

১২ ১৬
Chinu Kala

মডেলিংয়ের প্রতি চিনুর ভালবাসা ছিল ছোট থেকেই। ২০০৮ সালের একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় যোগ দেন তিনি। সেখানে শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে ছিলেন চিনু। বন্ধুদের কথা মেনে মিসেস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করেন চিনু। প্রতিযোগিতার ফাইনালেও পৌঁছোন। কিন্তু ইংরেজিতে ঠিকমতো উত্তর দিতে না পারায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন।

১৩ ১৬
Chinu Kala

মডেলিং অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চিনু কর্পোরেট দুনিয়ায় পা রাখেন। ‘ফন্টে কর্পোরেট সলিউশনস’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে সোনি, ইএসপিএন এবং এয়ারটেলের মতো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জন্য পণ্যদ্রব্য তৈরি করে এই সংস্থাটি।

১৪ ১৬
Chinu Kala

মডেলিংয়ে আসার পরই ফ্যাশন জুয়েলারিতে আগ্রহ জন্মায় চিনুর। তত দিনে অনেকটা সচ্ছল হয়ে উঠেছিলেন। ফলে নিজের ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করে ফেলেন চিনু। ২০১৪ সালে বেঙ্গালুরুর ফিনিক্স মলে ৩৬ বর্গফুটের একটি ছোট জায়গায় যাত্রা শুরু হয় চিনুর সংস্থার।

১৫ ১৬
Chinu Kala

সংস্থা তৈরি করার সময় চিনুর পুঁজি ছিল মাত্র তিন লক্ষ টাকা। প্রথম দিনেই রেকর্ড ব্যবসা করে তাঁর সংস্থা। দেড় লক্ষ টাকার বিক্রি হয়েছিল এক দিনেই। কোভিড-১৯ অতিমারির সময় অনলাইনে তাঁর পণ্য বিক্রিও বেড়ে যায়। সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, চিনুর সংস্থার ২০২৪ সালে আয় ছিল ৪০ কোটি টাকা।

১৬ ১৬
Chinu Kala

আজ সেই ব্র্যান্ডের গ্রাহকসংখ্যা ৪০ লক্ষ। বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং কোচিতে রয়েছে আউটলেট। একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে চুক্তি করেছেন চিনু। শার্ক ট্যাঙ্কের সঙ্গে ১.৫ কোটির টাকার চুক্তি হয়েছে চিনুর সংস্থার। পথ চলা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত সংস্থাটির বিক্রির পরিমাণ ৩১০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি