ছাত্রাবস্থায় ১৫ বছরের বড় এক তরুণীর প্রেমে পড়েছিলেন বলি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। সেই তরুণী ছিলেন নাসিরুদ্দিনের সহ-অভিনেত্রীর বোন। সব জেনেশুনে পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। উপরন্তু খোরপোশের পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে, তা দিতে গিয়ে ১২ বছর কেটে গিয়েছিল অভিনেতার।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে অলীগঢ় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। ১৯৭১ সালে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। তবে ছাত্রাবস্থায় এক বিবাহবিচ্ছিন্না তরুণীর প্রেমে পড়়েছিলেন অভিনেতা। সেই তরুণী আবার ছিলেন এক সন্তানের মা-ও।
১৯৯০ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সরফরোশ’। এই ছবিতে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল নাসিরুদ্দিনকে। একই ছবিতে গৌণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বলি অভিনেত্রী সুরেখা সিক্রি। এই একটি ছবি ছাড়া অন্য কোনও ছবিতে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়নি নাসিরুদ্দিন এবং সুরেখাকে। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে সুরেখার সৎবোনের সঙ্গেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা।
অলীগঢ় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মানারা সিক্রি ওরফে পরভীন মুরাদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। তখন নাসিরুদ্দিনের বয়স মাত্র ১৯ বছর। পরভীনের বয়স ছিল ৩৪ বছর।
নাসিরুদ্দিনের চেয়ে ১৫ বছরের বড় পরভীন ছিলেন বিবাহবিচ্ছিন্না। আগের বিয়ে থেকে এক সন্তান ছিল তাঁর। ছাত্রাবস্থায় বিবাহবিচ্ছিন্না নারীর প্রেমে পড়েছিলেন বলে সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। কিন্তু সমাজের তোয়াক্কা করেননি তিনি।
পরভীনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। কিন্তু সে কথা বাড়িতে জানাতে দুই পরিবারই আপত্তি জানিয়েছিল। পরভীনের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের বয়সের পার্থক্য থাকার জন্য আপত্তি জানিয়েছিল অভিনেতার পরিবার।
অন্য দিকে নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে পরভীনের বিয়ে টিকবে না বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে ফেলেছিল পরভীনের পরিবার। তাই নাসিরুদ্দিনকে একটি শর্তে বাঁধতে চেয়েছিল তারা। পরভীনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হলে অভিনেতাকে মোটা খোরপোশ দিতে হবে— এমন শর্তই রাখা হয়েছিল।
পরভীনের পরিবার খোরপোশের পরিমাণ এতটাই বাড়িয়ে বলেছিল যে, তা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, পরভীনের সঙ্গে সংসারে চিড় ধরবে না তাঁর। কিন্তু তেমনটা ঘটেনি।
১৯৬৯ সালে বিবাহবিচ্ছিন্না পরভীনকে বিয়ে করেছিলেন নাসিরুদ্দিন। বিয়ের পর কন্যাসন্তান হীবার জন্ম দিয়েছিলেন পরভীন। কিন্তু তাঁদের সংসারের স্থায়িত্ব বেশি দিনের ছিল না। ঘন ঘন মনোমালিন্য এবং মতবিরোধের কারণে নাসিরুদ্দিন এবং পরভীনের সংসার ভেঙে যায়।
কন্যাকে নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন পরভীন। অন্য দিকে খোরপোশের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। কী ভাবে এত টাকা খোরপোশ দেবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। ঠিক সেই সময়েই তাঁর জীবনে দ্বিতীয় প্রেম আসে।
স্নাতক হওয়ার পর দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিতেন নাসিরুদ্দিন। সেই সময় মঞ্চে নাটকও করতেন তিনি। তখনই তাঁর আলাপ হয়েছিল রত্না পাঠকের সঙ্গে। ১৯৭৫ সালে নাটকের সূত্রে রত্নার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁর। দু’জনের বন্ধুত্ব প্রেমে গড়িয়ে যায়।
রত্নার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন নাসিরুদ্দিন। কিন্তু অভিনেতার হাত-পা বাঁধা ছিল। তাঁর উপর খোরপোশের এমন দায় ছিল যে, নতুন সংসার পাতার মতো মানসিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল না। সম্পর্কে জড়ানোর পর দীর্ঘ কাল একত্রবাসে ছিলেন দুই তারকা।
সাত বছর রত্নার সঙ্গে একত্রবাস করেছিলেন নাসিরুদ্দিন। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মাসুম’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই ছবিতে অভিনয় করে বিপুল পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। সেখান থেকেই বাকি খরচ মিটিয়ে কাঁধ থেকে খোরপোশের ভার নামিয়েছিলেন অভিনেতা।
১৯৮২ সালে মারা গিয়েছিলেন পরভীন। একই বছরে রত্নাকে বিয়ে করেছিলেন নাসিরুদ্দিন। বিয়ের পর দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন রত্না। অন্য দিকে, নাসিরুদ্দিন এবং পরভীনের কন্যা হীবা ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ইরানে।
৪০ বছরেরও বেশি দাম্পত্যজীবন নাসিরুদ্দিন এবং রত্নার। তবুও একটি বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে চিরকালীন মতবিরোধ লেগে রয়েছে বলে রত্নার দাবি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রত্না বলেন, ‘‘নাসিরুদ্দিনের মনে হয়, অভিনয় না করতে পারলে তৎক্ষণাৎ মারা যেতে পারে— এই বোধ এক জনের মধ্যে যত দিন কাজ না করে, তত দিন তিনি অভিনেতা হয়ে উঠতে পারেন না।’’
চার দশক সংসার করার পরেও নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে সহমত হতে পারেননি রত্না। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘আমি বুঝতে পারি না নাসিরুদ্দিন কেন এমন কথা বলে। আমি আমার কেরিয়ারকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কিন্তু কখনও এমন মনে হয় না যে, অভিনয় করতে না পারলে আমি মরে যাব। আমার কেরিয়ারই জীবনের সব কিছু নয়। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায় সব সময় ঝগড়া লাগে।’’
সব ছবি: সংগৃহীত।