Pakistan Turkey Drone Deal

আত্মঘাতী ‘বের‌্যাক্টার’ থেকে মৌমাছির মতো ঝাঁকে ঝাঁকে হামলা! ভারতকে চাপে ফেলতে তুর্কি ড্রোনের কারখানা খুলছে পাকিস্তান

সামরিক ড্রোন নির্মাণের জন্য এ বার পাকিস্তানের জমি ব্যবহার করবে তুরস্ক। ইসলামাবাদে তৈরি হবে আঙ্কারার পাইলটবিহীন বিমানের অ্যাসেম্বলিং কারখানা, জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৫
০১ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ছ’মাস কাটতে না কাটতেই ফের ড্রোন-শক্তি বৃদ্ধির দিকে নজর দিল পাকিস্তান। এ ব্যাপারে তুরস্ককে পাশে পাচ্ছে ইসলামাবাদ। ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটিতে নাকি সামরিক ড্রোনের কারখানা খোলার পরিকল্পনা করছে আঙ্কারা। মার্কিন গণমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই নয়াদিল্লির কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। দুই ইসলামীয় রাষ্ট্র যৌথ ভাবে কী ধরনের পাইলটবিহীন বিমান তৈরি করতে চলেছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

০২ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর তুর্কি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সমঝোতা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘ব্লুমবার্গ’। সেখানে একটি সূত্রকে উল্লেখ করে মার্কিন গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত অক্টোবর থেকে যৌথ ভাবে ড্রোন নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে ইসলামাবাদ ও আঙ্কারার মধ্যে চলছে আলোচনা। আর সেখানেই সাফল্য পেয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা। ফলে পশ্চিমের প্রতিবেশীর জমিতে পাইলটবিহীন বিমানের কারখানা তৈরি এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে।

০৩ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্রটি ‘ব্লুমবার্গ’কে জানিয়েছে, পাক জমিতে ‘স্টেলথ’ শ্রেণির দূরপাল্লার ড্রোন তৈরি করবে তুরস্ক। তবে সম্ভবত পাইলটবিহীন বিমানের প্রযুক্তি আঙ্কারার থেকে পাচ্ছে না ইসলামাবাদ। ভূমধ্যসাগরের কোলের ইউরোপীয় দেশটি থেকে ড্রোনের বিভিন্ন অংশ হাতে পাবেন রাওয়ালপিন্ডির জেনারেলরা। পরে সেগুলিকে জুড়ে মানববিহীন উড়ুক্কু যান নির্মাণ করবেন তাঁরা। অর্থাৎ, ড্রোন ‘অ্যাসেম্বলিং’ কারখানা খুলতে চলেছে ভারতের পশ্চিমের প্রতিবেশী।

Advertisement
০৪ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

সাম্প্রতিক সময়ে ড্রোনের বাজারে বড় খেলোয়াড় হিসাবে উঠে এসেছে আঙ্কারা। পাইলটবিহীন ‘আত্মঘাতী’ বিমান তৈরি করছেন খোদ তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের জামাই। ওই ড্রোনের পোশাকি নাম ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’। ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে দুনিয়ার তাবড় সেনাকর্তাদের নজর কাড়ে এই মানববিহীন উড়ুক্কু যান। ফলে পাকিস্তান, সৌদি আরব থেকে সিরিয়ার মতো দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে এর চাহিদা।

০৫ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

পশ্চিমি গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বাজার মিলিয়ে মোট ৩০টি দেশের থেকে বিপুল পরিমাণে সামরিক ড্রোনের বরাত পেয়েছে তুরস্ক। আঙ্কারার পক্ষে ঘরের মাটিতে যাবতীয় পাইলটবিহীন বিমান তৈরি এবং গ্রাহকদের তা সময়ে সরবরাহ করা বেশ কঠিন। সেই কারণেই পাকিস্তানে ড্রোন ‘অ্যাসেম্বলিং’ কারখানা খুলতে চাইছে ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’, খবর সূত্রের।

Advertisement
০৬ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন প্রেসিডেন্ট এর্ডোয়ানের প্রতিরক্ষা শিল্পসংস্থার প্রধান হালুক গরগুন। তাঁর কথায়, ‘‘চলতি বছরের (পড়ুন ২০২৫) প্রথম ১১ মাসে তুরস্কের সামরিক সরঞ্জামের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অস্ত্র ব্যবসাকে ৭৫০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া গিয়েছে, যা রেকর্ড।’’ ড্রোন ‘অ্যাসেম্বলিং’ কারখানার জন্য আঙ্কারার পছন্দের তালিকায় ইসলামাবাদ চলে আসার নেপথ্যে অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে।

০৭ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

প্রথমত, দীর্ঘ দিন ধরেই পাকিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বার বার ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আঙ্কারা। দ্বিতীয়ত, যৌথ উৎপাদন চুক্তির আওতায় বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির জন্য করভেট শ্রেণির রণতরী তৈরি করছে প্রেসিডেন্ট এর্ডোয়ানের সরকার। শুধু তা-ই নয়, পাক বিমানবাহিনীর বহরে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ লড়াকু জেটকে অত্যাধুনিক করে তোলার বরাতও পেয়েছে ইস্তানবুল।

Advertisement
০৮ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

তৃতীয়ত, ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় বিপুল পরিমাণে তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করে পাক ফৌজ। ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’ ছাড়াও সেই তালিকায় ছিল ‘সোঙ্গার’ নামের একটি পাইলটবিহীন বিমান। যদিও ড্রোন হামলায় তেমন সুবিধা করতে পারেনি ইসলামাবাদ। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা এয়ার ডিফেন্স ব্যবহার করে সেগুলিকে মাঝ-আকাশেই ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা।

০৯ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

গত ৮ এবং ৯ মে জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব, রাজস্থান এবং গুজরাতের একাধিক জায়গায় ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন পাঠিয়ে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় পাক সেনা। সঙ্গে সঙ্গেই সক্রিয় হয়ে ওঠে ভারতীয় সেনার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। মৌমাছির মতো ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ চালাতে পারে বলে এই মানববিহীন উড়ুক্কু যানগুলিকে বলে ‘সোয়ার্ম ড্রোন’। সেখানে সাফল্য না পেলেও তুর্কির পাইলটবিহীন বিমানের পারফরম্যান্সে খুশি ছিলেন পাক জেনারেলরা। এর জেরে পরবর্তী কালে ড্রোন কারখানা তৈরিতে উদ্যোগী হন তাঁরা।

১০ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

২০১৯ সালের এপ্রিলে ‘সোঙ্গার’ ড্রোনের প্রথম উৎক্ষেপণ করে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সংস্থা অ্যাসিসগার্ড। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এটিকে বহরে শামিল করে তুর্কি সশস্ত্র বাহিনী। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘সোঙ্গার’ই ছিল আঙ্কারার প্রথম সশস্ত্র ড্রোন। ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মুখে বিপুল সংখ্যায় ওই পাইলটবিহীন বিমান ইসলামাবাদের হাতে তুলে দেয় আঙ্কারা। যদিও নয়াদিল্লির এই অভিযোগ পরবর্তী কালে অস্বীকার করে এর্ডোয়ান সরকার।

১১ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

‘সোঙ্গার’ ড্রোন মোটামুটি ভাবে ১৪০ সেন্টিমিটার চওড়া। সর্বোচ্চ ৪৫ কেজি ওজন নিয়ে ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এর। এতে কোনও ওজন না চাপালে আধ ঘণ্টা থেকে ৩৫ মিনিট টানা উড়তে পারে। পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এর রিয়্যাল টাইম ভিডিয়ো সম্প্রচারের সক্ষমতা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মিটার উচ্চতায় যেতে পারে এই তুর্কি ড্রোন।

১২ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

ফৌজি অপারেশনের সময় নিজের লক্ষ্য খুঁজে নিতে গ্লোবাল পজ়িশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এবং রাশিয়ার নেভিগেশন পদ্ধতি জিএলওএনএএসএস ব্যবহার করে তুরস্কের তৈরি এই ড্রোন। হাতিয়ারের উপর ভিত্তি করে এই মানববিহীন যানের পাঁচ ধরনের শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। এর সম্পূর্ণ তালিকা রয়েছে অ্যাসিসগার্ডের ওয়েবসাইটে। সেগুলি হল সোঙ্গার ৫.৫৬ x ৪৫ মিমি অ্যাসল্ট রাইফেল, সোঙ্গার ২×৪০ মিমি গ্রেনেড লঞ্চার, সোঙ্গার ৬×৪০ মিমি ড্রাম টাইপ গ্রেনেড লঞ্চার, সোঙ্গার ৩×৮১ মিমি মর্টার গ্রিপার এবং সোঙ্গার ৮x টিয়ার/স্মোক গ্রেনেড লঞ্চার।

১৩ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

অন্য দিকে, তুরস্কের আত্মঘাতী ‘বের‌্যাক্টার টিবি-২’ ড্রোনে থাকে লেজ়ার গাইডেড বোমা। শত্রুপক্ষের হাতিয়ার বা তেলের ডিপো, ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি বা ট্রাক ওড়ানোর জন্য একে ব্যবহার করা যায়। ‘সোঙ্গার’-এর থেকে ‘বের‌্যাক্টার’কে অনেক বেশি ঘাতক এবং শক্তিশালী বলে মনে করেন সাবেক সেনাকর্তাদের একাংশ। তবে মৌমাছির মতো ঝাঁক বেঁধে হামলা চালানোর সক্ষমতা এর নেই।

১৪ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

সম্প্রতি সামরিক ড্রোনের ক্ষেত্রে বিরল কৃতিত্ব অর্জন করে তুরস্ক। বিশ্বে প্রথম বার চালকবিহীন জেট ইঞ্জিনচালিত যুদ্ধবিমান (ফাইটার ড্রোন) দিয়ে ‘আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র’ (‘এয়ার টু এয়ার মিসাইল’) ছুড়ে উড়ন্ত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে সক্ষম হয়েছে আঙ্কারা। এর জেরে আগামী দিনে আকাশের লড়াইয়ের সংজ্ঞা বদলে যাবে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

১৫ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

যুদ্ধবিমান-ড্রোন সাফল্যের পর এই নিয়ে বিবৃতি দেয় তুর্কি সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, চালকবিহীন লড়াকু জেট ‘কিজ়িলেলমা’ থেকে ছোড়া ‘আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র’ নিখুঁত লক্ষ্যে জেট ইঞ্জিনচালিত লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। পরীক্ষার সময় নজরদারির জন্য এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল তুরস্ক।

১৬ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

এই তিন ধরনের ড্রোনের মধ্যে কোনটিকে আগামী দিনে পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলিং কারখানায় তৈরি করার পরিকল্পনা তুরস্কের রয়েছে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, সেটা ‘বের‌্যাক্টার’ এবং ‘সোঙ্গার’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, এই দুই পাইলটবিহীন বিমানের অন্যতম ক্রেতা ইসলামাবাদ। এর্ডোয়ান সরকারের পক্ষে সদ্য পরীক্ষা করা ‘কিজ়িলেলমা’র নির্মাণকৌশল এখনই দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন।

১৭ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

গত কয়েক বছর ধরেই আর্থিক দিক থেকে দেউলিয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান। কিন্তু তার পরেও ড্রোন কারখানা তৈরি করতে রাওয়ালপিন্ডির খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, ইসলামাবাদের ফৌজকে দুনিয়ার অন্যতম ধনী বাহিনী বললে অত্যুক্তি হবে না। পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া সার থেকে শুরু করে বস্ত্র, রিয়্যাল এস্টেট বা ভারী যন্ত্রপাতি বিক্রির ব্যবসা রয়েছে পাক সেনার নিয়ন্ত্রণাধীনে একাধিক কোম্পানির হাতে।

১৮ ১৮
Pakistan is going to open assembly plant for attack drones of Turkey, a big concern for India

সামরিক ড্রোন বাদ দিলে পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ শ্রেণির লড়াকু জেট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে আঙ্কারার। গত বছর এই নিয়ে কথাবার্তা প্রায় পাকা করে ফেলে দুই দেশ। যদিও তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর পড়েছে কি না, তা জানা যায়নি। ড্রোন কারখানার ব্যাপারেও সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি ইসলামাবাদ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি