ভারতীয় সঙ্গীতজগতে নতুন প্রজন্মের ‘বস্ লেডি’ হিসাবে পরিচিত। গানের পাশাপাশি অভিনয়জগতেও সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ইউটিউবের পাতায় গানের ভিডিয়ো আপলোড করে। কিন্তু ইউটিউব থেকে জনপ্রিয় গায়িকা হওয়ার যাত্রা খুব সহজ ছিল না তাঁর। এক সময় থাকা-খাওয়ার পয়সা ছিল না। মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতেও হিমশিম খেতেন পঞ্জাবি গায়িকা সুনন্দা শর্মা।
১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি পঞ্জাবের গুরদাসপুরে জন্ম সুনন্দার। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠা অমৃতসরে। বাবা-মা এবং ভাইবোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। অমৃতসরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজি নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন সুনন্দা।
স্কুল এবং কলেজে থাকাকালীন বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানে গান গাইতেন সুনন্দা। কিন্তু সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে কেরিয়ার গড়ার কথা আলাদা করে ভাবতেন না। নিজের শখে গান গেয়ে সেই ভিডিয়োগুলি ইউটিউবের পাতায় চ্যানেল খুলে পোস্ট করতে শুরু করেন তিনি।
হঠাৎ করেই সুনন্দার একটি গানের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমের পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। রাতারাতি তাঁর অনুরাগীমহল তৈরি হয়ে যায়। এমনকি, একাধিক সুরকারের কাছ থেকে গান গাওয়ার প্রস্তাবও পেতে শুরু করেন সুনন্দা।
গায়িকা হিসাবে কেরিয়ারের যাত্রা শুরু করা কঠিন ছিল সুনন্দার। কানাঘুষো শোনা যায়, একসময় প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভা়ড়াবাড়িতে থাকতেন, প্রতি দিন খাবার কেনার মতো টাকাও থাকত না তাঁর কাছে। মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে নাজেহাল হয়ে পড়তেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পঞ্জাব সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন সুনন্দা।
পঞ্জাবি সঙ্গীতজগতের সঙ্গে জড়িত এক প্রযোজকের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সুনন্দা। সেই সঙ্গীত প্রযোজকের নাম পিঙ্কি ধালিওয়াল।
সুনন্দার অভিযোগ, পিঙ্কি তাঁকে সময়মতো পারিশ্রমিক দেননি। বেআইনি ভাবে সব টাকা নিজের কাছে রাখতেন পিঙ্কি। সঙ্গীত প্রযোজকের কাছে কোটি কোটি টাকা পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা ছিল সুনন্দার। কিন্তু তার এক অংশও পাননি তিনি। বরং দিনের পর দিন মানসিক হেনস্থার শিকার হচ্ছিলেন সুনন্দা।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সুনন্দা বলেছিলেন, ‘‘গান নিয়ে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে অনেকে ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। কিন্তু সেখানে যদি এ ভাবে লোকঠকানো চলতে থাকে, তা হলে মন ভেঙে যায়। আমার মানসিক অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যে, দিনের পর দিন আমি কান্নাকাটি করতাম। কোনও উপায় না পেয়ে নিজের জীবনও শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম আমি।’’ সুনন্দার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে পিঙ্কিকে গ্রেফতার করে মোহালি থানার পুলিশ।
২০১৬ সাল থেকে একক ভাবে গান মুক্তি পেতে শুরু করে সুনন্দার। জনপ্রিয় গায়ক বি প্রাকের একটি গানের ভিডিয়োয় বলি অভিনেতা নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন তিনি।
পঞ্জাবি ভাষার গান ছাড়াও বলিউডে গান গাওয়ার সুযোগ পান সুনন্দা। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নবাবজ়াদে’ ছবিতে একটি গান গাইতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১৮ সালে অভিনয়জগতেও পা রাখেন সুনন্দা। ‘সজ্জন সিংহ রঙ্গরূট’ নামে একটি পঞ্জাবি ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পঞ্জাবের জনপ্রিয় গায়ক-অভিনেতা দিলজিৎ দোশাঞ্জের সহ-অভিনেত্রী ছিলেন সুনন্দা।
টেলিভিশনের পর্দায় পঞ্জাবি গানের রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন সুনন্দা। তা ছাড়া ২০২৪ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমের পাতায় একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হতে চর্চায় আসেন সুনন্দা। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে পঞ্জাবের মোহালিতে একটি কনসার্ট ছিল তাঁর। দর্শকাসন থেকে এক তরুণ চিৎকার করে সুনন্দার প্রশংসা করছিলেন। সুনন্দা সেই অনুরাগীকে মঞ্চে আসার অনুরোধ করেন এবং সকলের সামনে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন।
নিজের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেও প্রেমিকের পরিচয় প্রকাশ করেননি সুনন্দা। প্রেমিকের সঙ্গে এমন ছবি সমাজমাধ্যমের পাতায় তিনি পোস্ট করেছেন, যে ছবিগুলিতে তরুণের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
সুনন্দার অধিকাংশ অনুগামীর দাবি, সুনন্দার প্রেমিক জোশুয়া স্টারলিং। লন্ডনে থাকেন জোশুয়া। পেশায় মডেল। সুনন্দার চেয়ে ছ’বছরের ছোট তিনি।
সমাজমাধ্যমে সুনন্দার অনুগামীর সংখ্যা নজরে পড়ার মতো। ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রামের পাতায় গায়িকার অনুগামীর সংখ্যা ১ কোটির গণ্ডি পার করে ফেলেছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।