সাগরের মতো নীল চোখ। স্বর্ণকেশী। মাত্র তিন বছর বয়সেই সমাজমাধ্যমে নজর কেড়ে নিয়েছিল একরত্তি মেয়েটি। ন’বছর বয়সেই নামের পাশে জুড়েছিল বিশ্বের ‘সেরা সুন্দরী’র খেতাব। মলদ্বীপের সমুদ্রসৈকতে ছোট্ট মেয়েটির ছবি পোস্ট করেছিলেন তাঁর মা। ছবিতে সে তার তিনটি খেলনা জড়িয়ে ধরে হাসছিল। মুহূর্তের মধ্যে সমাজমাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল সেই ছবি।
বিতর্কও অবশ্য কম হয়নি সেই ছবি ঘিরে। বিতর্ক ও জনপ্রিয়তা হাত ধরাধরি করে নীলনয়না ও সোনালি চুলের এই নাবালিকাকে খ্যাতির আলোকবৃত্তের মধ্যে এনে ফেলে। সারল্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক ক্রিস্টিনা পিমেনোভা। শৈশবেই সবচেয়ে সুন্দরী বলে বিবেচিত হন এই মডেল। ২০১৪ সালে, ‘উইমেন ডেলি ম্যাগাজ়িন’ তাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে’ বলে ঘোষণা করে।
২০০৫ সালে মস্কোয় জন্ম হয় ক্রিস্টিনার। ক্রিস্টিনা যখন মাত্র তিন বছরের, তাঁর মা গ্লিকেরিয়া পিমেনোভা সমাজমাধ্যমে মেয়ের ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছিলেন। নিষ্পাপ শিশুর ছবিগুলি দ্রুত ভাইরাল হতে শুরু করে। শীঘ্রই এই ছবিগুলি বিতর্কের জন্ম দেয়। সমুদ্রসৈকতে তোলা ছবিগুলি যৌন আবেদনমূলক বলে দাবি উঠতে শুরু করে।
অভিযোগের আঙুল ওঠে মা গ্লিকেরিয়ার দিকে। ইচ্ছাকৃত ভাবেই ছবিগুলিকে বিকৃত ভাবে তোলা হয়েছিল বলে সমালোচনা শুরু হয়। দাবি করা হয়, সেই সমস্ত ভঙ্গিমা শিশুর জন্য অনুপযুক্ত। স্বাভাবিক ভাবেই নিন্দকদের অভিযোগ অস্বীকার করেন গ্লিকেরিয়া।
২০১৪ সালে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিনার মা জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ে কারও নির্দেশ মেনে পোজ় দেয়নি। আপনমনে সমুদ্রসৈকতে খেলছিল। সেই স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিমাই ধরা পড়েছিল ক্যামেরার লেন্সে।
যদিও এই ধরনের সমালোচনার কোনও প্রভাব পড়েনি ক্রিস্টিনার কেরিয়ারে। বিতর্ককে সঙ্গী করেই ক্রিস্টিনা মডেলিংয়ের দুনিয়ায় পা রাখেন। ‘ভোগ’, ‘আরমানি’, ‘বারবেরি’ এবং ‘ডলচে অ্যান্ড গাবানা’ মতো শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের হয়ে মার্জার সরণিতে স্বচ্ছন্দ বিচরণ শুরু হয় এই রুশ বালিকার। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ও পণ্যের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের সঙ্গে গাঁটছ়ড়া বাঁধেন তিনি।
ক্রিস্টিনা তাঁর জীবনের প্রথম কয়েক মাস ফ্রান্সে কাটিয়েছিলেন। এফসি মেটজের হয়ে ফুটবল খেলতেন তাঁর বাবা। মডেলিংয়ের দুনিয়ার সঙ্গে ক্রিস্টিনার পরিচিতি পারিবারিক সূত্রে। তাঁর মা গ্লিকেরিয়াও প্রাক্তন মডেল। ফ্যাশন দুনিয়ার বৃত্তে পা রাখতে তাই তাঁর খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কৈশোরে পা দেওয়ার আগেই বাঘা বাঘা ব্র্যান্ডের হয়ে র্যাম্পে হেঁটে ফেলেছিলেন ক্রিস্টিনা।
মাত্র ১০ বছর বয়সেই তাঁর সঙ্গে আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসের একটি মডেলিং এজেন্সির চুক্তি হয়। তাতে বিভিন্ন নামজাদা সংস্থার মডেলিংয়ের মুখ হয়ে উঠেছিলেন ক্রিস্টিনা। বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলির শিশুদের পোশাকের জন্য যে বিভাগ রয়েছে তার অধিকাংশতেই ক্রিস্টিনাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। শিশুতারকা ও সুপারমডেলকে পেয়ে যারপরনাই সন্তুষ্ট হয়েছিল মডেলিং এজেন্সিগুলিও।
সমসাময়িক প্রজন্মের সবচেয়ে স্বীকৃত শিশু মডেলদের এক জন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ক্রিস্টিনা। সুপারমডেলের খ্যাতি পাওয়ার পর ধীরে ধীরে ফ্যাশন দুনিয়া থেকে সরে এসেছেন ক্রিস্টিনা। বর্তমানে ১৯ বছর বয়সি এই তরুণী মস্কোতেই থাকেন। মডেলিং থেকে সরে অভিনয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছেন তিনি।
বেশ কিছু দিন হল নাটকের দিকে ঝোঁক বেড়েছে তাঁর। ধারাবাহিক ভাবে চুটিয়ে রুশ চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। ‘দ্য রাশিয়ান ব্রাইড’, ‘সিক্রেট নেবার’ এবং ‘ক্রিয়েটরস: দ্য পাস্ট’ নামের ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ডাকসাইটে সুন্দরীকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সৌন্দর্যেও বদল ঘটেছে।
বেশ কয়েক বছর আগে ‘ডেলি মেল’-এর এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মডেলিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন ক্রিস্টিনা। শৈশবে মডেলিং তাঁর কাছে একটি খেলার মতো ছিল। পেশা বলে কখনওই মনে করেননি। বরং দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোকে খুব মজাদার মনে করতেন। র্যাম্পের মতো কেরিয়ারের গতিও মসৃণ ছিল ক্রিস্টিনার।
চিরকাল সৌন্দর্যের খ্যাতি ও প্রশংসা পেলেও ক্রিস্টিনা বরাবরই মাটিতে পা রেখে চলতে ভালবাসেন। খ্যাতি, অর্থ, যশ খুব অল্প বয়সে করায়ত্ত হলেও কখনও সেগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি তিনি। সুপারমডেলের মুকুট মাথায় উঠলেও তারকাখ্যাতি সম্পর্কে উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাঁর।
নিজের ইনস্টাগ্রাম বায়োতে ক্রিস্টিনা লিখেছেন, ‘‘মনে রাখবেন সৌন্দর্য মনের ভিতরেই থাকে।’’ ফ্যাশনের দুনিয়া কাঁপানো এই মডেল-অভিনেত্রী সমাজমাধ্যমেও একই ভাবে নজর কেড়েছেন। ২০ লক্ষ অনুগামী রয়েছে ইনস্টাগ্রামে। এ ছাড়াও ফেসবুকে দশ লক্ষ ভক্ত রয়েছে তাঁর।
ক্রিস্টিনার মতো আরও এক নাবালিকা মডেলকে ‘ভোগ’-এর শুটিংয়ের জন্য সমালোচিত হতে হয়েছিল। সমালোচকদের কটাক্ষ ধেয়ে এসেছিল টিল্যান ব্লন্ড নামের ফরাসি মডেলের দিকেও। যদিও নিশানার মূল লক্ষ্য ছিলেন তাঁর মা ও ‘ভোগ’। মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি নজরে পড়েন খ্যাতনামী পোশাকশিল্পী জঁ পল গলতিয়ারের।
রুশ কন্যা ক্রিস্টিনার মতো ফরাসি মডেল টিল্যানও ছিলেন নীলাক্ষি সোনালি চুল ও পুরু মোহময় ঠোঁটের অধিকারিণী। ২০০৭ সালে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন টিল্যান। তাঁর ৬ বছর বয়সি একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। ১০ বছর বয়সে ‘ভোগ এনফ্যান্টসে’র জন্য পোজ় দেওয়ার সময়ও তিনি বিতর্কের মুখে পড়েন। সোনালি পোশাক এবং উঁচু হিল পরা ছোট্ট মেয়েটিকে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো মেকআপ করে দেওয়া হয়েছিল।
‘টিসি ক্যান্ডলারের’ ‘বছরের ১০০ জন সুন্দরী’র তালিকায় বেশ কয়েক বার নাম উঠেছে টিল্যানের। ২০১৮ সালে তিনি প্রথম স্থান পেয়েছিলেন। ২৪ বছরের টিল্যান আজ কেবল জনপ্রিয় মডেলই নন, এক জন দক্ষ ব্যবসায়ীও বটে। তিনি সফল ভাবে তাঁর নিজস্ব পোশাকের ব্র্যান্ড চালু করেছেন। তাঁর ৭০ লক্ষ অনুগামী রয়েছেন শুধুমাত্র ইনস্টাগ্রামেই।
সব ছবি:সংগৃহীত।