The Death of Dollar

‘পাগলা রাজা’র খামখেয়ালিতে ‘খাবি খাচ্ছে’ ডলার! ১০ বিদ্রোহীর খাঁড়ার কোপে শেষ হবে মার্কিন অর্থনীতির দাদাগিরি?

ব্রাজ়িল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং সাউথ আফ্রিকার মতো ‘ব্রিকস’ দেশগুলির ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। আমেরিকার বিদেশনীতির বিরুদ্ধে ব্রিকসের দেশগুলি যে ভাবে জোট বাঁধছে তাতে ভবিষ্যতে ডলারের আধিপত্য কায়েম রাখতে বেগ পেতে হবে আমেরিকাকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৫
০১ ১৯
The Death of Dollar

ডলারের আধিপত্যের শেষের সে দিন কি আসন্ন? আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের ‘দাদাগিরি’ এ বার বন্ধ হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করছেন আমেরিকারই অর্থনীতিবিদেরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে, এমনটাই মত তাঁদের।

০২ ১৯
The Death of Dollar

ভারত ও চিনের মতো দেশগুলির ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমেরিকার ডলার নিয়ে একচ্ছত্র অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মত আমেরিকার অর্থনৈতিক বিশারদদের একাংশের। তাঁদেরই এক জন হলেন জেরাল্ড সেলেন্ট। আগামী দিনে বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি কোন খাতে বইবে তার আগাম সম্ভাবনা বা পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন ইনি।

০৩ ১৯
The Death of Dollar

সম্প্রতি একটি পডকাস্টে এসে ডলারের দাপাদাপি শেষ হওয়ার বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ করেছেন জেরাল্ড। তাঁর মতে, ‘ব্রিকস’ দেশগুলি, বিশেষ করে ব্রাজ়িল, রাশিয়া, ভারত, চিন এবং সাউথ আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার। আমেরিকার বিদেশনীতির বিরুদ্ধে ব্রিকসের দেশগুলি যে ভাবে জোট বাঁধছে তাতে ভবিষ্যতে ডলারের আধিপত্য কায়েম রাখতে বেগ পেতে হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

Advertisement
০৪ ১৯
The Death of Dollar

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ওয়াশিংটনের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়া ভারতের সঙ্গে মার্কিন কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন জেরাল্ড। সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কতটা বাণিজ্যিক ক্ষতি হবে সে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। এর উত্তরে তিনি জানান, ভারতের জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে।

০৫ ১৯
The Death of Dollar

ভারত ধীরে ধীরে আরও স্বাবলম্বী এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে। তারা তাদের নিজস্ব পণ্য কিনছে এবং তৈরি করছে। আমেরিকাতেও একই অবস্থা ছিল। রাশিয়া-চিনের মতো দেশ অনেক দিন আগেই ব্যবসার ক্ষেত্রে ডলার নির্ভরতা কমিয়ে ফেলেছে। ভারতের মতো দেশেরও ডলারের নির্ভরতা কমানো উচিত বলে মনে করছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ।

Advertisement
০৬ ১৯
The Death of Dollar

জেরাল্ডের সুরে সুর মিলিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মুণ্ডপাত করেছেন আর এক মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্সও। ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর অতিরিক্ত বাণিজ্যে নির্ভরতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে, ভারতের উচিত ব্রিকসের সঙ্গে যতটা সম্ভব নৈকট্য বৃদ্ধি করা। কারণ ভবিষ্যতে আমেরিকা চিন থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করবে ভারতের সঙ্গে সেই পরিমাণ আমদানিতে রাজি হবে না।

০৭ ১৯
The Death of Dollar

ভারত থেকে রাশিয়ান তেল আমদানির উপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়ে স্যাক্স বলেন, ‘‘ট্রাম্প খুব একটা যুক্তিসঙ্গত ভাবে ভাবতে বা চলতে পছন্দ করেন না। তাঁর আবেগী পরিকল্পনা কোনও দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে শ্লথ করে তুলতে পারে।’’ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে যুক্তির চেয়ে আবেগের প্রভাবই বেশি বলে মত ওই মার্কিন অর্থনীতিবিদের। তাঁর মতে, ট্রাম্প ভেবেছিলেন, শুল্কযুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে ভারত তাঁর দাবিতে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হবে। কিন্তু চাপের মুখে ভারত নতিস্বীকার করেনি। রাশিয়া থেকে তেল কিনেই চলেছে নয়াদিল্লি।

Advertisement
০৮ ১৯
The Death of Dollar

বিদেশি দেশগুলির সিদ্ধান্তে ট্রাম্প সরকারের হস্তক্ষেপের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জেরাল্ড রাখঢাক না করেই ট্রাম্পের ‘খবরদারি’ মনোভাবের তুলোধনা করেছেন। ভারত এবং রাশিয়া একে অপরের সঙ্গে কোন চুক্তি করবে তা বলা আমেরিকার কাজ নয়। দু’টি দেশের কী করা উচিত তা বলার সাহস ট্রাম্পের মতো খামখেয়ালি লোকেরই সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এশিয়ার দেশগুলির অর্থনৈতিক পছন্দ নির্দেশ করার কোনও অধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেই বলে মত তাঁর।

০৯ ১৯
The Death of Dollar

আমেরিকা আগেই ভারতের উপরে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য ভারতকে ‘শিক্ষা দিতে’ জরিমানাস্বরূপ আরও ২৫ শতাংশ কর আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতের মতো ব্রাজ়িলের উপরেও ৫০ শতাংশ কর ধার্য করেছেন তিনি। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুইজ় ইনাসিও লুলা দা সিলভা ডলারের উপর নির্ভরতা কমাতে ব্রিকস বাণিজ্য মুদ্রা চালু করার পক্ষে সওয়াল করেছেন।

১০ ১৯
The Death of Dollar

‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীর দেশগুলি নিজেদের মধ্যে লেনদেনে ডলারের বদলে অন্য মুদ্রাকে বাছলে বা নতুন মুদ্রা তৈরি করলে আমেরিকায় ঢোকা তাদের সব পণ্যে অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েই রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ব্রিকস’-এ ভারত ছাড়াও রয়েছে ব্রাজ়িল, চিন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ ন’টি দেশ। এই দেশগুলির একাংশ ডলারের বদলে ব্রিকস বা অন্য মুদ্রায় লেনদেনের দাবি করছে। বিশেষত রাশিয়া, চিন ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীর মধ্যে লেনদেনের জন্যই আলাদা মুদ্রা তৈরির পক্ষপাতী। তাতে যোগ হয়েছে ব্রাজ়িলের নামও।

১১ ১৯
The Death of Dollar

সমাজমাধ্যমে ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, একতরফা শুল্ক আরোপের পর ব্রাজ়িল আর শুধুমাত্র ডলারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে রাজি নয়। তবে তিনি ডলারের সঙ্গে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হতে চান না। তিনি জানান, ‘‘আমরা ডলারের সঙ্গে ঝামেলা করতে চাই না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা। তবে ব্রিকসে বাণিজ্যের জন্য আমাদের নিজস্ব একটি মুদ্রা চালুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেই পারি।’’

১২ ১৯
The Death of Dollar

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ব্রিকস’ গোষ্ঠীর দেশগুলিকে হুমকি দিয়েছেন, ডলার বাদে অন্য কোনও মুদ্রায় বাণিজ্য চালালে সকলের উপর অতিরিক্ত ১০% আমদানি শুল্ক বসাবেন। এই গোষ্ঠীর সদস্য ভারতও। মার্কিন আর্থিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, দীর্ঘ দিন ধরে আমেরিকা ও ডলারের আধিপত্য মাথা পেতে নিয়েছে গোটা বিশ্ব। এ বার ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক নীতির বিরোধিতা ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

১৩ ১৯
The Death of Dollar

মার্কিন ডলারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সেলেন্ট। মার্কিন মুদ্রার পতনকে ‘ডলারের মৃত্যু’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘যা ঘটছে তা আমেরিকার অর্থনীতির পতন। ডলারের মৃত্যুর কাল ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ মার্কিন মুদ্রানীতি, বিশেষ করে ২০১৮ সালে ট্রাম্পের অধীনে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তকে এর জন্য দায়ী করেছেন তিনি।

১৪ ১৯
The Death of Dollar

আমেরিকার অর্থনৈতিক উপদেষ্টাদের একাংশ মনে করছেন, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প চোটপাট করার সময় মাথায় রাখেননি তাঁর দেশের আর্থিক ও ভূ-রাজনৈতিক পদক্ষেপই কিছু দেশকে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনে বাধ্য করছে। আমেরিকা রাশিয়া, ইরান, ভেনেজুয়েলার মতো দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এবং তাদের ‘সুইফ্‌ট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ওই দেশগুলির ডলারে দাম মেটানোর পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

১৫ ১৯
The Death of Dollar

ভারত এবং চিন বাধ্য হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রায় রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন করতে। চিন ও রাশিয়ার মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি বাণিজ্য হয় রাশিয়ার মুদ্রা রুবল কিংবা চিনের ইউয়ানে। ভারত রুশ তেল কেনে টাকায় বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দিরহামে। সৌদি আরবও তেলের দাম স্থানীয় মুদ্রায় নিতে রাজি।

১৬ ১৯
The Death of Dollar

২০২৪ সালে কাজ়ান শহরে হওয়া সম্মেলনে প্রথম বার ‘ব্রিকস’-এর মুদ্রা তৈরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আমেরিকার ‘চিরশত্রু’ রাশিয়ার এই ঘোষণার পরেই ওয়াশিংটনের মাথাব্যথা শুরু হয়। বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) অনেকটাই দখলে রয়েছে ‘ব্রিকস’-ভুক্ত দেশগুলির কাছে। সেই কারণে এই গোষ্ঠীর মুদ্রা তৈরি নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিমধ্যেই এই মুদ্রা-যুদ্ধকে বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

১৭ ১৯
The Death of Dollar

শুল্কের জুজু দেখিয়ে অন্য দেশের উপর জোরজবরদস্তি মানতে রাজি নয় বেজিংও। মার্কিন শুল্কনীতির সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানিয়েছিলেন, শুল্ক ব্যবস্থাকে এ ভাবে ব্যবহার করলে আসলে কারও কোনও উপকার হবে না। শুল্ক হঁশিয়ারি মানতে রাজি না হওয়ায় বেজিংকে ভাতে মারার চেষ্টা করেছিল ওয়াশিংটন। অনমনীয় থেকে চিন তাৎক্ষণিক ভাবে প্রতিশোধ নেয়। মার্কিন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য উপাদানের রফতানি বন্ধ করে দেয়।

১৮ ১৯
The Death of Dollar

তাই মার্কিন-ভারত সম্পর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ জেফ্রি ব্যাখ্যা করেছেন ট্রাম্প কোনও কৌশলগত নীতির ধার ধারেন না, যুক্তিবাদী চিন্তাবিদও নন। তাঁর চিন্তাভাবনার ধারাবাহিকতা বা দূরদর্শিতার অভাব বহু ক্ষেত্রেই প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর মতে, বর্তমানে আমেরিকার বিদেশনীতি আবেগের উপর ভর করে নির্ধারিত হয়।

১৯ ১৯
The Death of Dollar

এর ফল স্বল্পমেয়াদি। ট্রাম্প মনে করেন, তাঁর আস্তিনের নীচে সব দেশের জন্য সমস্ত ধরনের ‘ট্রাম্পকার্ড’ লুকোনো রয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হল ধারাবাহিক নীতির চেয়ে ক্ষমতা প্রদর্শন করা। তাই ভারতের উচিত আমেরিকার মুখাপেক্ষী না থেকে স্বাধীন বিদেশনীতি অবলম্বন করা। একই সঙ্গে ব্রিকসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা ও ডলারের উপর নির্ভর না করে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের পথ খোলা রাখা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি