Characteristics of Snakes

বিষধর বনাম নির্বিষ, চেনার ভুলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে নাগবংশ, কোন লক্ষণ দেখে চেনা যাবে সাপের প্রকৃতি!

ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ সাপের প্রজাতিই নির্বিষ। প্রতিটি প্রজাতিই পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ভয় পেয়ে আমরা সাপের প্রজাতি না জেনেই নির্বিচারে নিকেশ করে ফেলি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০৪
০১ ১৫
characteristics of Snake

সাপ দেখলেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড় হয় না, এমন মানুষ বোধহয় হাতেগোনা। গায়ের উপর সাপ উঠলে গা ঘিনঘিন করে ওঠে অনেকেরই। শীতল রক্তের প্রাণীদেহের স্পর্শে এসে শরীর হিম ও অসাড় হয়ে যেতে বাধ্য। গর্ত, মাঠ এবং জলাশয় থেকে সাপ বেরিয়ে পড়লে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন সাপ কামড়ালেই মৃত্যু অপরিহার্য।

০২ ১৫
characteristics of Snake

সাপের চেহারা নজরে পড়লে আমাদের মধ্যে সকলের আগে যে অনুভূতিটি কাজ করে সেটি হল ভয়। গ্রামাঞ্চলে, বিশেষ করে বর্ষাকালে বিষধর সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যান তার থেকে অনেক বেশি মানুষ মারা যান সীমাহীন আতঙ্কে। সাপের ছোবল মানেই তা প্রাণঘাতী— এই ধারণা বেশির ভাগ মানুষেরই। অনেকেই জানেন না বেশির ভাগ সাপই নির্বিষ। সেগুলি কামড়ালে প্রাণসংশয় হয় না।

০৩ ১৫
characteristics of Snake

প্রকৃতপক্ষে, ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ সাপের প্রজাতিই নির্বিষ। প্রতিটি প্রজাতিই পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ভয় পেয়ে আমরা সাপের প্রজাতি না জেনেই নির্বিচারে নিকেশ করে ফেলি। হারপেটোলজিস্ট বা সর্পবিশারদেরা জানিয়েছেন আমাদের চারপাশে এমন সমস্ত সাপ রয়েছে যারা মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়। বরং মানবসমাজই সাপেদের কাছে হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisement
০৪ ১৫
characteristics of Snake

ইঁদুর এবং পোকামাকড়ের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রেখে সাপেরা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অধিকাংশ সাপই নিরীহ প্রজাতির। নিজেদের প্রাণের ভয় তৈরি না হলে চট করে মানুষকে আক্রমণ করে বসে না। এই সাপগুলির মধ্যে অনেকগুলিই কৃষকদের সহযোগী। মেঠো ইঁদুর খেয়ে ফসল বাঁচাতে সাহায্য করে।

০৫ ১৫
characteristics of Snake

কিছু কিছু সাপ রয়েছে যাদের সামান্য বিষ শরীরে প্রবেশ করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণ কেড়ে নেয় বা পঙ্গু করে দেয়। তবে বিষাক্ত সাপ কামড়ালে দ্রুত চিকিত্‍সা করা সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। বিষধর সাপ কামড়ানোর পর চিকিত্‍সা যদি দেরি করে আরম্ভ হয় তা হলে রোগীর প্রাণের ঝুঁকি থাকতে পারে। সাপ দেখে কী ভাবে বুঝবেন কোন সাপ বিষাক্ত আর কোনটি নয়?

Advertisement
০৬ ১৫
characteristics of Snake

ভারতে প্রায় ৩২০ ধরনের সাপের দেখা মেলে। এর মধ্যে ৬০টি প্রজাতির সাপ বিষধর হয়, বাদবাকি ২৬০টি প্রজাতির সাপেরা বিষহীন হয়। সচেতনতা ও অজ্ঞানতার কারণে সাপ সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হই আমরা। কোন সাপ বিষধর, কোনটি নির্বিষ তা জানা থাকলে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয় সাপে কামড়ানো রোগীর। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর সাপের কামড়ে ৫৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে যান।

০৭ ১৫
characteristics of Snake

সাপের বিষের প্রধান উপাদান হল বিভিন্ন রকম প্রোটিন ও উৎসেচকের মিশ্রণ। সাপ যখন ছোবল মারে, তখন বিষ ওই বিষথলি থেকে বিষনালির মধ্যে দিয়ে বিষদাঁতে এসে পৌঁছোয়। এদের বিষদাঁতগুলি অনেকটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের মতো কাজ করে। এই বিষ তাড়াতাড়ি রক্তে মিশে যায়। সাপের বিষ সাধারণত চার রকমের হয়— নিউরোটক্সিক, হিমোটক্সিক, সাইটোটক্সিক ও মায়োটক্সিক।

Advertisement
০৮ ১৫
characteristics of Snake

কেউটে বা গোখরোর বিষ নিউরোটক্সিক জাতীয়। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে অকেজো করতে শুরু করে। মাংসপেশিকেও অসাড় করে দেয়। আবার শঙ্খচূড়ের বিষ হিমোটক্সিক। এই বিষ রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে। ফলে হয় অতিরিক্ত রক্তপাত ঘটে অথবা অস্বাভাবিক দ্রুত হারে রক্ত জমাট বাঁধে।

০৯ ১৫
characteristics of Snake

বিষধর সাপ চেনার উপায় হল তাদের দাঁত বা ফ্যাংস। গোখরো, কেউটে, কালাচ, শঙ্খচূড়ের বিষদাঁত বড় ও তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। কামড়ের সময় এই বিষদাঁত বসিয়ে দেয় সাপ। এদের দাঁত ফাঁপা বা খাঁজযুক্ত হয়, যাতে বিষ প্রবাহিত হয়ে শিকারের শরীরে ঢোকে। ফ্যাংস অনেকটা সূচের মতো কাজ করে। কামড়ের পরেও তার দাঁতের চিহ্ন দেখে বলা যেতে পারে সাপটি নির্বিষ না বিষধর। অন্য দিকে, নির্বিষ সাপের দাঁতের আকার বেশ ছোট হয়। বিষাক্ত গ্রন্থি বা কার্যকরী ফ্যাংস থাকে না।

১০ ১৫
characteristics of Snake

একটি সাপ বিষাক্ত কি না তার চোখ দেখেও কিছুটা ধারণা করা সম্ভব। বিষধর সাপের চোখের মণি লম্বাটে হয়। চোখের মণি প্রায়ই বিড়ালের চোখের মতো ও চেরা হয়। অন্য দিকে, বিষহীন সাপের মণি সাধারণত গোলাকার হয়। তবে এর কিছু ব্যতিক্রমও আছে।

১১ ১৫
characteristics of Snake

একটি সাপের মাথার আকারও বলে দেয় সেই সাপটি বিষধর না সেটি নির্বিষ। বিষাক্ত এবং নির্বিষ সাপের মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণীয় পার্থক্য হল তাদের মাথার আকৃতি। বিষাক্ত সাপের মাথা সাধারণত ত্রিকোণাকার হয়। পিছনের দিকে চওড়া এবং ঘাড়ের দিকে সরু হয়। বিশেষ করে পিট ভাইপার, যেমন র‍্যাটলস্নেক এবং কপারহেডস সাপের ক্ষেত্রে এই আকৃতিটি বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।

১২ ১৫
characteristics of Snake

এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কিছু বিষহীন সাপ আক্রমণের মুখোমুখি হলে তাদের মাথা চ্যাপ্টা করে ত্রিভুজাকার করে তুলতে পারে। ফলে বিষহীন সাপের ক্ষেত্রে খানিকটা ভুল হতে পারে। গোখরো এবং অন্যান্য বিষাক্ত সাপ তাদের ঘাড়ের চারপাশের চামড়া প্রসারিত করে একটি আবরণ তৈরি করে। এই আচরণের ফলে তাদের চেহারা আরও বড় দেখায় এবং শিকারিদের ভয় দেখাতে এই কৌশল ব্যবহার করে তারা।

১৩ ১৫
characteristics of Snake

বিষধর ও নির্বিষ সাপের পার্থক্য করা যায় তাদের রঙে। বিষধর সাপের উজ্জ্বল র‌ং দেখে চিহ্নিত করা সম্ভব। নির্বিষ সাপগুলি সাধারণত ফ্যাকাশে রঙের হয়ে থাকে। ভারতে পাওয়া বেশির ভাগ বিষাক্ত সাপ হলুদ, বাদামি এবং কালো রঙের। লেজ চ্যাপ্টা হলে সেটি বিষধর, ভোঁতা হলে সেটি নির্বিষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, দু’ধরনের সাপের ক্ষেত্রেই অনেক সময় লেজটি নলাকৃতিও হয়।

১৪ ১৫
characteristics of Snake

ভারতে দেখা মেলে এমন প্রধান চারটি বিষাক্ত সাপের তালিকায় নাম রয়েছে গোখরো, চন্দ্রবোড়া, কালাচ এবং কেউটের। নির্বিষ সাপের মধ্যে রয়েছে দাঁড়াশ, জলঢোঁড়া। লাউডগায় রয়েছে সামান্য বিষ। ৯০ শতাংশ সাপ বিষহীন হওয়ায় সাপে কামড়ালে রোগীরা বেঁচে যান। বিষযুক্ত সাপ দংশনের ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ মিলিলিটার অ্যান্টি ভেনম সিরাম রোগীর শরীরে দেওয়া গেলে তিনি বেঁচে যান।

১৫ ১৫
characteristics of Snakes

সাপের কামড়ে প্রতি বছর মৃত্যু হয় অগুনতি মানুষের। যাঁরা চিকিৎসকের সাহায্য নেন, তাঁদের সংখ্যাটা জানা গেলেও বহু ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবে ঘটে গুরুতর বিপত্তি। আবার যে সাপ কামড়ায় সেটি নির্বিষ হলেও অনেক সময় সন্দেহের বশেই তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এই সব কারণেই ধীরে ধীরে সাপের বংশ লোপ পাওয়ার দিকে এগোচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি