C Sankaran Nair

ব্রিটিশদের দেওয়া চাকরি ছেড়ে গর্জে ওঠেন ব্রিটিশদেরই বিরুদ্ধে! রক্ত গরম করবে ‘কেসরী ২’-এর শঙ্করনের কাহিনি

১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ সরকারের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন শঙ্করন। সত্য প্রকাশ্যে আনার জন্য ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:০২
০১ ১৬
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড পরাধীন ভারতের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে গুলি চালায় সেনা। প্রাণ হারান বহু মানুষ। রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল অমৃতসরের ভূমি। ব্রিটিশ সরকার সেই বিভীষিকা আড়ালে রাখার শত চেষ্টা করলেও তাদের মুখোশ টেনে খুলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন পরাধীন ভারতের আইনজীবী চেত্তুর শঙ্করন নায়ার।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড পরাধীন ভারতের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে গুলি চালায় সেনা। প্রাণ হারান বহু মানুষ। রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল অমৃতসরের ভূমি। ব্রিটিশ সরকার সেই বিভীষিকা আড়ালে রাখার শত চেষ্টা করলেও তাদের মুখোশ টেনে খুলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন পরাধীন ভারতের আইনজীবী চেত্তুর শঙ্করন নায়ার।

০২ ১৬
প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘কেসরী চ্যাপ্টার ২’। অক্ষয় কুমার, আর মাধবন এবং অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত ইতিহাসনির্ভর এই ছবিতে আলাদা ভাবে নজর কেড়েছেন অক্ষয়। বলিউডের ‘খিলাড়ি’-সত্তা ভেঙেচুরে বড় পর্দায় এক বাস্তব চরিত্রকে নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘কেসরী চ্যাপ্টার ২’। অক্ষয় কুমার, আর মাধবন এবং অনন্যা পাণ্ডে অভিনীত ইতিহাসনির্ভর এই ছবিতে আলাদা ভাবে নজর কেড়েছেন অক্ষয়। বলিউডের ‘খিলাড়ি’-সত্তা ভেঙেচুরে বড় পর্দায় এক বাস্তব চরিত্রকে নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

০৩ ১৬
‘কেসরী চ্যাপ্টার ২’ ছবিতে চেত্তুর শঙ্করন নায়ারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অক্ষয়। ব্রিটিশ সরকারকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে বাস্তবেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। বরাবর সত্যের পথে চলা এই আইনজীবীর নেপথ্যকাহিনি কী?

‘কেসরী চ্যাপ্টার ২’ ছবিতে চেত্তুর শঙ্করন নায়ারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অক্ষয়। ব্রিটিশ সরকারকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে বাস্তবেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। বরাবর সত্যের পথে চলা এই আইনজীবীর নেপথ্যকাহিনি কী?

Advertisement
০৪ ১৬
১৮৫৭ সালের জুলাই মাসে কেরলে জন্ম শঙ্করনের। তাঁর পরিবার সমাজে বেশ পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে তহসিলদার হিসাবে কাজ করতেন শঙ্করনের পিতা। আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল ছিল তাঁর পরিবার।

১৮৫৭ সালের জুলাই মাসে কেরলে জন্ম শঙ্করনের। তাঁর পরিবার সমাজে বেশ পরিচিত ছিল। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে তহসিলদার হিসাবে কাজ করতেন শঙ্করনের পিতা। আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল ছিল তাঁর পরিবার।

০৫ ১৬
গোড়ার দিকে বাড়িতে পড়াশোনা করলেও পরে মালাবারের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন শঙ্করন। কলাবিভাগ নিয়ে ভাল ফল করে স্কুলের গণ্ডি পার করেছিলেন তিনি। তার পর তৎকালীন মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।

গোড়ার দিকে বাড়িতে পড়াশোনা করলেও পরে মালাবারের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন শঙ্করন। কলাবিভাগ নিয়ে ভাল ফল করে স্কুলের গণ্ডি পার করেছিলেন তিনি। তার পর তৎকালীন মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন।

Advertisement
০৬ ১৬
১৮৭৭ সালে কলেজ পাশ করে দু’বছর পর মাদ্রাজের একটি কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন শঙ্করন। ১৮৮০ সাল থেকে মাদ্রাজের হাই কোর্টে আইনজীবী হিসাবে কাজ করা শুরু করেছিলেন তিনি।

১৮৭৭ সালে কলেজ পাশ করে দু’বছর পর মাদ্রাজের একটি কলেজ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন শঙ্করন। ১৮৮০ সাল থেকে মাদ্রাজের হাই কোর্টে আইনজীবী হিসাবে কাজ করা শুরু করেছিলেন তিনি।

০৭ ১৬
১৮৮৪ সালে মালাবার জেলার একটি তদন্ত কমিটির সদস্য হিসাবে শঙ্করনকে মনোনীত করেছিল মাদ্রাজ সরকার। অস্থায়ী বিচারক হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সরকারের অ্যাডভোকেট জেনেরালের দায়িত্বও সামলেছিলেন।

১৮৮৪ সালে মালাবার জেলার একটি তদন্ত কমিটির সদস্য হিসাবে শঙ্করনকে মনোনীত করেছিল মাদ্রাজ সরকার। অস্থায়ী বিচারক হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ১৯০৮ সাল পর্যন্ত সরকারের অ্যাডভোকেট জেনেরালের দায়িত্বও সামলেছিলেন।

Advertisement
০৮ ১৬
১৯০৮ সাল থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর মাদ্রাজ হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ কালেক্টর অ্যাশের হত্যাকাণ্ড মামলায় অন্যান্য ব্রিটিশ বিচারকের সঙ্গে বেঞ্চের সদস্য ছিলেন শঙ্করনও। ‘মাদ্রাজ রিভিউ’ এবং ‘মাদ্রাজ ল জার্নাল’ নামের দু’টি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

১৯০৮ সাল থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর মাদ্রাজ হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারক পদে নিযুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ কালেক্টর অ্যাশের হত্যাকাণ্ড মামলায় অন্যান্য ব্রিটিশ বিচারকের সঙ্গে বেঞ্চের সদস্য ছিলেন শঙ্করনও। ‘মাদ্রাজ রিভিউ’ এবং ‘মাদ্রাজ ল জার্নাল’ নামের দু’টি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

০৯ ১৬
১৯০২ সালে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের মনোনয়নে শঙ্করনকে ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। দশ বছর পর ১৯১২ সালে তাঁকে ‘নাইট’ উপাধিও দেওয়া হয়েছিল। ১৯১৫ সালে ভাইসরয় কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯০২ সালে ভাইসরয় লর্ড কার্জনের মনোনয়নে শঙ্করনকে ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করা হয়েছিল। দশ বছর পর ১৯১২ সালে তাঁকে ‘নাইট’ উপাধিও দেওয়া হয়েছিল। ১৯১৫ সালে ভাইসরয় কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন তিনি।

১০ ১৬
১৮৯৭ সালে কংগ্রেস দলে যুক্ত হয়েছিলেন শঙ্করন। মাদ্রাজের একাধিক বৈঠকে সভাপতিত্বের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ইতিহাসবিদদের অধিকাংশের দাবি, ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ সরকারের প্রতি খেপে গিয়েছিলেন শঙ্করন। সত্য প্রকাশ্যে আনার জন্য ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তিনি।

১৮৯৭ সালে কংগ্রেস দলে যুক্ত হয়েছিলেন শঙ্করন। মাদ্রাজের একাধিক বৈঠকে সভাপতিত্বের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ইতিহাসবিদদের অধিকাংশের দাবি, ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ সরকারের প্রতি খেপে গিয়েছিলেন শঙ্করন। সত্য প্রকাশ্যে আনার জন্য ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তিনি।

১১ ১৬
ব্রিটিশ সরকারকে ধিক্কার জানাতে ভাইসরয় কাউন্সিলের সদস্যপদও ত্যাগ করেছিলেন শঙ্করন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের দায় তৎকালীন পঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডায়ারকে গ্রহণ করতে বলেছিলেন শঙ্করন।

ব্রিটিশ সরকারকে ধিক্কার জানাতে ভাইসরয় কাউন্সিলের সদস্যপদও ত্যাগ করেছিলেন শঙ্করন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের দায় তৎকালীন পঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ডায়ারকে গ্রহণ করতে বলেছিলেন শঙ্করন।

১২ ১৬
১৯২২ সালে ‘গান্ধী অ্যান্ড অ্যানার্কি’ নামের একটি বই লিখেছিলেন শঙ্করন। সেই বইয়ে ব্রিটিশ সরকারের তীব্র নিন্দা করেছিলেন তিনি। মাইকেল ও’ডায়ারকে সরাসরি অভিযুক্ত হিসাবে দাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

১৯২২ সালে ‘গান্ধী অ্যান্ড অ্যানার্কি’ নামের একটি বই লিখেছিলেন শঙ্করন। সেই বইয়ে ব্রিটিশ সরকারের তীব্র নিন্দা করেছিলেন তিনি। মাইকেল ও’ডায়ারকে সরাসরি অভিযুক্ত হিসাবে দাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

১৩ ১৬
শঙ্করনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের আদালতে মানহানির মামলা করেছিলেন মাইকেল ও’ডায়ার। সাড়ে পাঁচ সপ্তাহ ধরে লন্ডনের সেই মামলা চলেছিল। সেই সময়ের নিরিখে এটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা দায়রা মামলা।

শঙ্করনের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের আদালতে মানহানির মামলা করেছিলেন মাইকেল ও’ডায়ার। সাড়ে পাঁচ সপ্তাহ ধরে লন্ডনের সেই মামলা চলেছিল। সেই সময়ের নিরিখে এটি ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চলা দায়রা মামলা।

১৪ ১৬
বেঞ্চে থাকা ১২ জন জুরির মধ্যে ১১ জন শঙ্করনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। আদালতের তরফে শঙ্করনকে দু’টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল— শঙ্করনকে প্রকাশ্যে মাইকেল ও’ডায়ারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, নচেৎ তাঁকে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হবে।

বেঞ্চে থাকা ১২ জন জুরির মধ্যে ১১ জন শঙ্করনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। আদালতের তরফে শঙ্করনকে দু’টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল— শঙ্করনকে প্রকাশ্যে মাইকেল ও’ডায়ারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, নচেৎ তাঁকে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হবে।

১৫ ১৬
ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাথা হেঁট করেননি শঙ্করন। ক্ষমা না চেয়ে জরিমানা দিয়েছিলেন তিনি। পরে সক্রিয় রাজনীতি থেকেও নিজেকে সরিয়ে ফেলেছিলেন শঙ্করন।

ব্রিটিশ সরকারের কাছে মাথা হেঁট করেননি শঙ্করন। ক্ষমা না চেয়ে জরিমানা দিয়েছিলেন তিনি। পরে সক্রিয় রাজনীতি থেকেও নিজেকে সরিয়ে ফেলেছিলেন শঙ্করন।

১৬ ১৬
কম বয়সে মামাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন শঙ্করন। ছয় সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে সংসার ছিল তাঁর। ১৯২৬ সালে বদ্রিনাথে তীর্থযাত্রা করার পথে মারা গিয়েছিলেন শঙ্করনের স্ত্রী। ১৯৩৪ সালে ৭৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন পরাধীন ভারতের এই সাহসী নায়ক।

কম বয়সে মামাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন শঙ্করন। ছয় সন্তান এবং স্ত্রী নিয়ে সংসার ছিল তাঁর। ১৯২৬ সালে বদ্রিনাথে তীর্থযাত্রা করার পথে মারা গিয়েছিলেন শঙ্করনের স্ত্রী। ১৯৩৪ সালে ৭৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন পরাধীন ভারতের এই সাহসী নায়ক।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি