Operation Sindoor

ত্রিফলায় এ ফোঁড়-ও ফোঁড় জঙ্গিঘাঁটি! ‘অপারেশনে সিঁদুর’-এর সাফল্যের নেপথ্যে সেনার কোন কোন অস্ত্র?

তিন বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে সফলতা এসেছে উন্নত নির্ভুল অস্ত্রশস্ত্র এবং রিয়্যাল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে। এই ঘাঁটিগুলির উল্লেখ বহু বার গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে। সেই তথ্য অনুসন্ধান করে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে একযোগে হামলা চালানো হয় মঙ্গলবার মধ্যরাতে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৫ ১৪:২৫
০১ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার ঠিক ১৪ দিন পর প্রত্যাঘাত হানল ভারত। মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ন’টি এলাকায় জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করল ভারতীয় সেনা। সেই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। একের পর এক জঙ্গিঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত।

০২ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাক সেনাঘাঁটি বা সাধারণ কোনও নাগরিককে নিশানা করা হয়নি। নির্দিষ্ট ভাবে কিছু ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নিশানা স্থির করেই ভবনগুলি ধ্বংস করা হয়েছে বলে ভারতীয় সেনার সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়।

০৩ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

রাত ১টা বেজে পাঁচ মিনিটে শুরু হওয়া এই অভিযানের সময়সীমা ছিল ২৫ মিনিট। লশকর-এ-ত্যায়বা ও জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলিই ছিল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর লক্ষ্য। কোথায় কোথায়, কেন হামলা চালানো হয়েছে সেই তালিকাও সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি।

Advertisement
০৪ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

প্রথম নিশানা ছিল শুভান আল্লা মসজিদ, সেখানে লশকর-এ-ত্যায়বার ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। বিলাল মসজিদে ছিল জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র। কোটলিতে যে মসজিদে হামলা হয়েছে, তা লশকরের ঘাঁটি। এই ঘাঁটি পুঞ্চে সক্রিয়। এগুলি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে রয়েছে। ৯টি জায়গায় জঙ্গিঘাঁটি চিহ্নিত করে, ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে সেগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

০৫ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

অভিযানে সফলতা এসেছে উন্নত নির্ভুল অস্ত্রশস্ত্র এবং রিয়্যাল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে। এই ঘাঁটিগুলির উল্লেখ বহু বার গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে। সেই তথ্য অনুসন্ধান করে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করে একযোগে হামলা চালানো হয় মধ্যরাতে। আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম না করেই বহাওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বর, চক আমরু, বাগ, কোটলি, সিয়ালকোট এবং মুজফ্ফরাবাদের ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করা হয়।

Advertisement
০৬ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

এই ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে সাধারণত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। একেবারে নির্ভুল ভাবে দূরপাল্লার লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্ক্যাল্প ক্রুজ় এবং হ্যামার। স্ক্যাল্প ক্রুজ় ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামেও পরিচিত।

০৭ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

স্ক্যাল্প হল দূরপাল্লার আকাশ থেকে মাটিতে আঘাত হানার ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা ৪০০ কিমি পর্যন্ত। ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪০০ কেজি বিস্ফোরক বহন করে। ৫.১ মিটার লম্বা এবং ৬৩০ মিলিমিটার পুরু এই ক্ষেপণাস্ত্রে মাইক্রোটার্বো ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি রাফাল এবং মিগের মতো যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে।

Advertisement
০৮ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

ক্ষেপণাস্ত্রটিতে নিখুঁত ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে হানার জন্য তিন ধরনের নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে। এতে থাকা ইমেজিং ইনফ্রারেড সিকারের কারণে অস্ত্রটি নিজে থেকেই লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রকে জ্যামারের সাহায্যে ফাঁকি দেওয়া অত্যন্ত কঠিন।

০৯ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

অভেদ্য বাঙ্কার এবং গোলাবারুদের ভান্ডার ধ্বংস করার কাজে অদ্বিতীয় এই ক্ষেপণাস্ত্রটি। রাশিয়ার মাটিতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য ইউক্রেনও একই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল।

১০ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

এই অভিযানে দ্বিতীয় যে অস্ত্রটি জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে খুঁজে বার করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হল হাইলি অ্যাজাইল মডুলার মিউনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ বা হ্যামার। ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা সাফরান ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ডিফেন্স দ্বারা তৈরি মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত করার ক্ষেপণাস্ত্র।

১১ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত শক্তিশালী বাঙ্কার ও বহুতল ভবনগুলিতে আঘাত করেছে নির্ভুল ভাবে নির্দেশিত এই হ্যামারগুলি। উৎক্ষেপণের উচ্চতার উপর নির্ভর করে ৫০-৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম এই হ্যামার। স্থির এবং চলমান উভয় লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধেই নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম এই অত্যাধুনিক অস্ত্রটি।

১২ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

জিপিএস, ইনফ্রারেড ইমেজিং এবং লেজার টার্গেটিং থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর লক্ষ্যবস্তুতে আছড়ে পড়ে এই হ্যামার। এর ওজন ১২৫ কেজি থেকে ১ হাজার কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্রের মতো একেও জ্যামার দিয়ে রোখা কঠিন। রুক্ষ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে কম উচ্চতা থেকে নিক্ষেপ করার সুবিধা রয়েছে এই অস্ত্রটির ক্ষেত্রে। এটিকে আটকানো কঠিন এবং সুরক্ষিত কাঠামো ভেদ করতে পারে বলেই অস্ত্রটির সফলতা ও কার্যকারিতা অত্যন্ত বেশি।

১৩ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

দু’টি ক্ষেপণাস্ত্রই এই অভিযানে ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে তুরুপের তাস হয়ে ওঠে এমনটাই ধারণা করা হয়েছে। স্ক্যাল্প ক্রুজ় এবং হ্যামার নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার আঘাতের জন্য বেছে নেওয়ার কারণ হল পাকিস্তানি ভূখণ্ডের ভিতরে ঢুকে গভীর, সুনির্দিষ্ট আক্রমণ চালানো। স্থলসেনাকে যাতে অভিযান চালানোর ঝুঁকি না নিতে হয় সে কারণে মাঝারি ও দূরপাল্লার দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রকে বেছে নেওয়া হয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৪ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

মূলত লুকিয়ে এলাকার উপর নজরদারি চালানোর জন্য একটি বিশেষ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে এই অভিযানে। কোথায় জঙ্গিঘাঁটি রয়েছে, তাতে কী কী রয়েছে, কারা রয়েছে এবং কত জন রয়েছে, তা জানতে ‘কামিকাজে ড্রোন’ ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। ড্রোনের মাধ্যমে ফুটেজ দেখে হামলার নির্দিষ্ট ছক করতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনা।

১৫ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

অন্তরালে থেকে নজরদারি, লক্ষ্যে নির্ভুল আঘাত এবং মারণ-আঘাতের জন্য এটি মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রথমে ড্রোন সিস্টেমগুলি লক্ষ্য চিহ্নিত করে। এর পর লক্ষ্যের আশপাশে, উপরে উড়ে বেড়ায়। লক্ষ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ওই ড্রোন সরাসরি আছড়ে পড়ে আঘাত হানে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে বা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে লক্ষ্যে আঘাত করে তাকে মাটিতে মিশিয়ে দেয় এই অস্ত্রটি।

১৬ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

সেনার পক্ষ থেকে সাংবাদিক বৈঠকে পাকিস্তানের ভিতরে সিয়ালকোটের সার্জাল ক্যাম্পে হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে তা ছ’কিলোমিটার দূরে। এ ছাড়া হামলা হয়েছে মেহমুনা জোয়া ক্যাম্পে। সেখানে হিজ়বুলের ক্যাম্প ছিল। পঠানকোটে এখান থেকেই হামলা চালানো হয়।

১৭ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

এ ছাড়াও মুরিদকের মারকাজ় তৈবায় হামলা চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ২৬/১১ মুম্বই হামলার জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এখান থেকেই। আজ়মল কসাবও উঠে আসেন এখান থেকেই। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে একটি ইমারতের সঙ্গিন অবস্থা ধরা পড়েছে। দাবি করা হয়েছে, ইমারতটি বহওয়ালপুরে অবস্থিত ‘মারকাজ় শুভান আল্লা’। এটি জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম) জঙ্গিদের অন্যতম ঘাঁটি এবং প্রশিক্ষণ শিবির ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।

১৮ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বহাওয়ালপুরের উপকণ্ঠে পাঁচ নম্বর জাতীয় সড়ক যেখান দিয়ে গিয়েছে, সেখানে প্রায় ১৫ একর জমি জুড়ে জইশ-ই-মহম্মদ (জেইএম)-এর প্রধান প্রশিক্ষণ এবং প্রচারকেন্দ্র। বলা হয় এটাই জইশের হেডকোয়ার্টার।

১৯ ১৯
Variety of precision weapons used in Operation Sindoor

হাওয়ালপুর, মুরিদকে এবং সিয়ালকোট— মূলত এই তিন জায়গাই ছিল লক্ষ্যবস্তু। এ ছাড়া রয়েছে মুজফ্‌ফরাবাদ, গুলপুর, ভীমবের, চাক আমরু, বাগ এবং কোটলি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রচুর সূত্র কাজে লাগিয়ে ন’টি জায়গা চিহ্নিত করেছিল ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা। তার পরেই মঙ্গলবার আসে প্রত্যাঘাতের রাত।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি