ডিম্বাণু সংরক্ষণের বিষয়ে তরুণীদের পরামর্শ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন উপাসনা কামিনেনী। তিনি দক্ষিণী সুপারস্টার রাম চরণের স্ত্রী। সম্প্রতি আইআইটি হায়দরাবাদে একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন উপাসনা। সেখানে গিয়ে তিনি তরুণ প্রজন্মের মেয়েদের বেশি করে ডিম্বাণু সংরক্ষণের পরামর্শ দেন।
তাঁর এই এক পরামর্শে ঝড় বয়ে যায় নেটমাধ্যমে। সমালোচনা ও ট্রোলের বন্যা বইয়ে দেন নেটমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। উপাসনা ব্যবসা ছাড়া কিছুই বোঝেন না, দাবি নেটপাড়ার একাংশের। পারিবারিক ‘আইভিএফ ক্লিনিক’-এর ব্যবসাবৃদ্ধির জন্যই নাকি এই পরামর্শ দিয়ে বেড়াচ্ছেন তারকা-পত্নী, এমন দাবিও উঠে আসে।
সমাজমাধ্যম সেই সমস্ত কটাক্ষের জবাব দিয়েছিলেন উপাসনা। স্পষ্ট ভাষায় তাঁর সমালোচকদের জানিয়ে দেন, তিনি ভালবাসার জন্য মনের মানুষকে ২৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন। তিনি এই সিদ্ধান্ত নিজের ইচ্ছায় নিয়েছিলেন বলেও জানান। এর পর ২৯ বছর বয়সে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ডিম্বাণু সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আর এই বিষয়ে তিনি খোলাখুলি ভাবে কথা বলেছেন বাকি মহিলাদের উৎসাহিত করার জন্য। সেখানে ব্যবসায়িক কোনও অভিসন্ধি ছিল না তাঁর।
তেলুগু চলচ্চিত্রের মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর পুত্রবধূ এবং অভিনেতা রাম চরণের স্ত্রী উপাসনা। রাম চরণ রুপোলি পর্দার রাজা হলে ব্যবসার রানি উপাসনা। তারকা-পত্নী হওয়ার পাশাপাশি তাঁর নিজস্ব একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি একটি বিখ্যাত বেসরকারি হাসপাতালের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির ভাইস চেয়ারপার্সন। উপাসনা বরাবরই বিভিন্ন সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত। নারী ও শিশুদের জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজ তিনি করে থাকেন।
স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে উপাসনার যোগসূত্র পারিবারিক। তিনি ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রতাপচন্দ্র রেড্ডির নাতনি। ৭৭ হাজার কোটি টাকার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী উপাসনা। তাঁর মা শোভনা কামিনেনী হলেন সংস্থার এক্জ়িকিউটিভ ভাইস চেয়ারপার্সন। সংস্থার তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা হলেন উপাসনা।
উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যাওয়ার আগে হায়দরাবাদে স্কুলের শিক্ষা সমাপ্ত হয় উপাসনার। লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি অর্জন করে তিনি। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন মেধাবী এই ছাত্রী। তার পর দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন উপাসনা।
পারিবারিক ব্যবসার বৃত্ত ছেড়েও উপাসনার প্রভাব গণমাধ্যমে বিস্তৃত। একটি ম্যাগাজ়িনের প্রধান সম্পাদক তিনি। মহিলাদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কলম ধরেন।
এ ছাড়াও তিনি একটি বিমা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। উপাসনার বাবা অনিল কামিনেনীর সংস্থারও দায়িত্ব রয়েছে তাঁর কাঁধে। এমনকি তাঁর শাশুড়ি, রাম চরণের মা সুরেখা কোনিদেলার খাবারের ব্যবসাতেও পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন উপাসনা। অর্থাৎ হেঁশেল থেকে স্বাস্থ্য, সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ উপাসনার।
বিশেষ একটি উদ্যোগের সঙ্গেও জুড়েছে উপাসনার নাম। এই পরিষেবার মাধ্যমে ভারত জুড়ে ১৫০টিরও বেশি বৃদ্ধাশ্রম দত্তক নিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিবারের কন্যা। শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, সেই সব বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকেরা প্রত্যেকে যাতে সঠিক আদর-যত্ন পান সে দিকে খেয়াল রাখেন তিনি নিজে। জীবনের প্রান্তে পৌঁছে এই মানুষগুলি যাতে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ভাল থাকেন তাই এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন উপাসনা।
উপাসনার দাদু প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি এক জন ধনকুবের। ১৯৮৩ সালে হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ৫০ বছরের প্রতাপচন্দ্রের হাত ধরে। ভারতের প্রথম ৫০ জন শিল্পপতির তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছেন প্রতাপচন্দ্র। হাসপাতাল ছাড়াও ২১টি ভিন্ন সংস্থা রয়েছে তাঁর সংস্থার ছাতার নীচে। পাঁচ হাজার ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে ২৯১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, ডিজিটাল হেল্থ পোর্টালও রয়েছে এই স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থাটির।
বেসরকারি হাসপাতাল খোলার আগে পেশায় চিকিৎসক ছিলেন প্রতাপচন্দ্র। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নিজের কন্যাদেরও ব্যবসার কাজ বুঝিয়েছেন প্রতাপচন্দ্র। চার কন্যাই সংস্থার উঁচু পদে রয়েছেন। প্রতাপচন্দ্রের এক কন্যা শোভনার মেয়ে উপাসনা এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।
তেলুগু ফিল্মজগতের জনপ্রিয় অভিনেতা রাম চরণ ২০১২ সালে উপাসনার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। ‘আর আর আর’-এর সাফল্যের পর থেকে দক্ষিণী অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয় দর্শকের। সেই কারণে অভিনেতার স্ত্রী উপাসনাও চর্চায় উঠে আসেন।
উপাসনা জানিয়েছেন, রাম চরণের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে কোনও ভাবেই তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর বাড়ির সকলেই চিকিৎসক কিংবা ব্যবসায়ী। সেই পারিবারিক মণ্ডল ছেড়ে বিয়ের পর একেবারে নতুন একটি পরিবেশে এসে পড়েছিলেন তিনি। সব কিছুই বেমানান লাগত। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে এই পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছিলেন বলে জানান উপাসনা।
বিবাহিত জীবনের প্রায় এক যুগ কাটিয়ে ফেলেছেন রাম চরণ-উপাসনা। সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে উপাসনা জানিয়েছেন, রাম চরণকে নিয়ে তিনি এতটাই ‘পজ়েসিভ’ যে, অন্য নায়িকাদের সঙ্গে তাঁকে দেখলে মনখারাপ হয়ে যায়। ১০ বছরের মাথায় কন্যাসন্তানের বাবা-মা হন রাম চরণ ও উপাসনা। মেয়ের নাম রেখেছেন ক্লিন কারা কোনিডেলা। সম্প্রতি এই জুটি তাঁদের সংসারে দ্বিতীয় সন্তান আগমনের সংবাদ প্রকাশ্যে আনেন। এ বার এই তারকা দম্পতি যমজ সন্তানের প্রত্যাশা করছেন।
ধনী ভারতীয় অভিনেতাদের তালিকার প্রথম দশে থাকা দ্বিতীয় দক্ষিণী তারকা রাম চরণ। অষ্টম স্থানে রয়েছেন তিনি। প্রধানত তেলুগু ভাষার ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন রাম চরণ। রাম চরণের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৩৭০ কোটি টাকা।
উপাসনার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১,১৩০ কোটি টাকা। সম্পদের দিক থেকে রাম চরণ এবং উপাসনার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই দম্পতির হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসে একটি বাংলো রয়েছে, যার দাম ৩০ কোটি টাকা। বিলাসবহুল বাংলোয় রয়েছে সুইমিং পুল, একটি টেনিস কোর্ট, একটি বিশাল মন্দির, একটি জিমনাশিয়াম। এ ছাড়া মুম্বইয়ে একটি পেন্টহাউসের মালিকানাও রয়েছে রাম চরণ-উপাসনার।
দম্পতি বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে পছন্দ করেন। সেই কারণে তাঁদের গ্যারেজ সাজানো অডি মার্টিন ভি ৮ ভিনটেজ, রোলস রয়েস ফ্যান্টম, রেঞ্জ রোভার, অ্যাস্টন মার্টিন, ফেরারি পোর্টোফিনোর মতো বিদেশি গাড়িতে। চার কোটি টাকা দিয়ে কেনা একটি কাস্টমাইজ়ড মার্সিডিজ়ও রয়েছে সেখানে।
সব ছবি: সংগৃহীত।