Mexican drug lord El Chapo

আটকাতে পারেনি ‘সবচেয়ে সুরক্ষিত’ জেল, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে উধাও হন আমেরিকার ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’! কোথায় আছেন এল চ্যাপো?

পুলিশের হাতে ধরা প়ড়েও অসম্ভব চতুরতায় জেল ভেঙে পালিয়েছিলেন এল চ্যাপো। তাঁর দ্বিতীয় বারের জেল পালানোর কাহিনি বিশ্বের সবচেয়ে দুঃসাহসিক জেল পালানো অভিযান বলে মনে করা হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:১৯
০১ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

এক বার নয়, দু’বার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে জেলের গরাদ ভেঙেছিল এই কুখ্যাত মাদক মাফিয়া। আন্তর্জাতিক মাদকচক্রে একমেবাদ্বিতীয়ম বলে মনে করা হত তাঁকে। দক্ষিণ আমেরিকার গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর ‘সুখ্যাতি’ ছড়িয়ে পড়েছিল আমেরিকায়। দুই দেশের পুলিশ ও ইন্টারপোলের নিশানায় ছিল মাদক সাম্রাজ্যের মুকুটহীন এই সম্রাট।

০২ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

শুধু মাদক কারবারই নয়। একের পর এক হত্যাকাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। তিনি হোয়াকিন আর্কিভ্যালদো গুজ়ম্যান লোয়েরা। তাঁকে অবশ্য সকলে চেনেন ‘এল চ্যাপো’ নামে। ছোটখাটো চেহারার এল চ্যাপোকে মাদক পাচারের দুনিয়ায় বাদশা বলে মেনে নিয়েছে অনেক দেশের পুলিশ-গোয়েন্দারা।

০৩ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

দু’দশকের মধ্যে দু’বার। পুলিশের হাতে ধরা প়ড়েও অসম্ভব চতুরতায় জেল ভেঙে পালিয়েছিলেন এল চ্যাপো। তাঁর দ্বিতীয় বারের জেল পালানোর কাহিনি বিশ্বের সবচেয়ে দুঃসাহসিক জেল পালানো অভিযান বলে মনে করা হয়। আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রে কোটি কোটি টাকার মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন এল চ্যাপো। এমনকি আন্তর্জাতিক পত্রিকা ‘ফোর্বস’-এর প্রচ্ছদে ঠাঁই হয়েছিল মাদকদুনিয়ার কিং-পিনের। তাঁকে বিশ্বের দুই ধনীর অন্যতম বলে ঘোষণা করে ‘ফোর্বস’।

Advertisement
০৪ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

খাড়াই দুর্ভেদ্য কংক্রিটের দেওয়াল। বিশেষ সেলে বন্দি করা হয়েছিল এল চ্যাপোকে। জেলের কক্ষে বসানো সেন্সর, সিসিটিভি ক্যামেরা। সপ্তাহে সাত দিন, চব্বিশ ঘণ্টা সেই ছবি ফ্রেমবন্দি হচ্ছে কারাগারের মনিটরে। মাছি গলার উপায় নেই। অথচ সেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জেল ভেঙেছিলেন। মেক্সিকো প্রশাসনের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছিলেন এল চ্যাপো। দেশের ‘সবচেয়ে সুরক্ষিত’ কারাগারের রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিলেন তিনি।

০৫ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

মেক্সিকোর উপকূলবর্তী রাজ্য সিনালোয়ার এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন এল চ্যাপো। রোজগারের তাগিদে মাত্র ছ’বছর বয়স থেকে ফল আর ঠান্ডা পানীয় বিক্রি দিয়ে শুরু করেছিলেন ব্যবসা। বাবার সঙ্গে সদ্ভাব ছিল না খুব একটা। বাবার হাত ধরেই অপরাধজগতে হাতেখড়ি হয় চ্যাপোর। বাবার ছিল অবৈধ আফিম ও গাঁজার চাষের খেত। ১৫ বছরে সেই ছোট্ট ছেলেটা গাঁজা চাষে হাত পাকাতে শুরু করেছিল।

Advertisement
০৬ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

সেখান থেকে পরবর্তী কালে বিশ্বের এক নম্বর মাদক মাফিয়া হয়ে ওঠার কাহিনিটা অনেকটা হলিউডের ছবির মতো। আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তের পুলিশকর্তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেন ‘এল চ্যাপো গুজ়ম্যান’। শ্বাপদের মতো ক্ষিপ্র, শব্দহীন। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে ওস্তাদ। চ্যাপোকে অবশ্য আগলে রাখত তাঁর ‘সিনালোয়া কার্টেল’। এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের সিন্ডিকেট।

০৭ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলি তো বটেই, আমেরিকাতেও ছড়ানো ছিল তাঁর মাদক চক্রের জাল। সীমান্ত শহরগুলিকে মাদক পাচারের জন্য এল চ্যাপো ও তাঁর বাহিনী মাটির নীচে খুঁড়ে ফেলছিল কয়েকশো মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ। তাতে ছিল আলোর ব্যবস্থা। করা হয়েছিল বায়ুনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও। মোটা অর্থের বিনিময়ে নিরাপত্তাকর্মীদের কার্যত কিনে নিয়ে মার্কিন সীমান্তে মাদক পৌঁছে দিত ‘সিনালোয়া কার্টেল’-এর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

Advertisement
০৮ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

ওই এলাকায় সীমান্তবর্তী যে সব সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সেগুলি সবই নাকি এল চ্যাপোর তত্ত্বাবধানে বানানো। তাঁকে বার বার গ্রেফতার করেছে মেক্সিকো এবং মার্কিন পুলিশ। কিন্তু, গোয়েন্দাদের ধোঁকা দিয়ে বার বার পালিয়েছেন তিনি।

০৯ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

মাদক বেচার কোটি কোটি ডলারে ‘রবিনহুডের’ শিরোপা কেনা এল চ্যাপোকে নিয়ে ছড়িয়ে ছিল নানা উপকথা। মাঝেমাঝেই নাকি রাতের দিকে মেক্সিকোর সীমান্ত টপকে আমেরিকার রেস্তরাঁয় হাজির হতেন এল চ্যাপো। তবে ছদ্মবেশে। সঙ্গে ডজনখানেক ছায়াসঙ্গী। খানাপিনা করে চলে যাওয়ার সময় উপস্থিত সবার খাদ্য ও পানীয়ের দাম মিটিয়ে যেতেন মেক্সিকোর রবিনহুড।

১০ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

২০০৩ সালে এল চ্যাপোর অন্যতম শত্রু, আর এক মাদক মাফিয়া অসিয়েল কার্দেনাস গ্রেফতার হন। তার পরে গোটা বিশ্বের মাদক মাফিয়ার এক নম্বর তকমা জোড়ে এল চ্যাপোর নামের সঙ্গে। মার্কিন প্রশাসনই তাঁকে সেই তকমা দিয়েছিল।

১১ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

১৯৯৩ সালে গুয়াতেমালায় প্রথম ধরা পড়েছিলেন এল চ্যাপো। সেখান থেকে তাঁকে মেক্সিকোয় প্রত্যর্পণ করা হয়। তার পর একাধিক বার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে জেল থেকে পালিয়েছেন এই মাদক মাফিয়া। সে বার মাদক পাচার এবং খুনের অভিযোগে এল চ্যাপোকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয় আদালত। কারাগারে থাকার সময়ই পালান এল চ্যাপো। এক উচ্চপদস্থ কারা আধিকারিক ও কারারক্ষীদের ঘুষ দিয়ে বশ করেন তিনি।

১২ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

২০০১ সালে কারাগার থেকে পালান তিনি। এর পর তাঁকে পলাতক হিসাবে ঘোষণা করা হয়। তাঁর নামে খুন, রাহাজানি, মাদক সরবরাহের মতো অপরাধের তালিকা দীর্ঘ। আমেরিকা এবং মেক্সিকোর তদন্তকারীদের ধারণা, ৭০ হাজার মানুষকে খুনের নেপথ্যে হাত রয়েছে এল চ্যাপোর সংগঠনের। প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে এল চ্যাপো দুই দেশের গোয়েন্দাদের নাজেহাল করে ছেড়েছিলেন।

১৩ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

গোপন সূত্রে খবর পাওয়ার পর যত বারই গ্রেফতার করতে যাওয়া হয়েছে তত বারই পুলিশের হাত থেকে পিছলে যেতে সমর্থ হয়েছিলেন এল চ্যাপো। তাঁর সন্ধানে মেক্সিকোর উত্তর থেকে দক্ষিণের আনাচকানাচ চষে ফেলেছিলেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা। সাহায্যে নিতেন সাংবাদিক, এমনকি স্থানীয় গুপ্তচরদেরও।

১৪ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

২০১৪ সালে মেক্সিকো পুলিশের জালে ধরা পড়েন এল চ্যাপো। হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁকে আমেরিকার হাতে প্রত্যর্পণ করার দাবি জানায় এফবিআই। সেই দাবিতে কর্ণপাত করেনি দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি। সে দেশের ‘সবচেয়ে সুরক্ষিত’ কারাগার আল্টিপ্লানোয় হাজতবাসের বন্দোবস্ত করে মেক্সিকো সরকার। একটি নির্জন কক্ষে রাখা হয়েছিল হাই প্রোফাইল এই বন্দিকে। ২৪ ঘণ্টা নজরবন্দি হয়ে থাকতেন এল চ্যাপো।

১৫ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ধৈর্য ধরে মুক্তির অপেক্ষা করেছিলেন মাদক মাফিয়া। প্রতি দিনই তাঁর সঙ্গে জেলে দেখা করতে আসতেন স্ত্রী এমা কোরোনেল আইপুরো। তাঁর মাধ্যমেই জেল থেকে পালানোর পরিকল্পনা ছকে ফেলেন এল চ্যাপো। ১৫০ মিটার লম্বা একটি গর্ত খোঁড়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। গর্তের মুখ শেষ হয়েছিল এল চ্যাপোর জেলের কুঠুরির শৌচাগারের ঠিক নীচে।

১৬ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

দীর্ঘ ছ’মাস ধরে পুলিশের নাকের ডগায় বসেই পালানোর পরিকল্পনা সারছিলেন কুখ্যাত এই বন্দি। জেলের কক্ষে সিসিটিভি নজরদারির আওতায় থাকলেও শৌচাগারে কোনও ক্যামেরা ছিল না। এটাই ছিল এল চ্যাপোর কাছে একমাত্র সুযোগ। শৌচাগার যাওয়ার নাম করে চৌকো সঙ্কীর্ণ ছোট্ট গর্ত দিয়ে সুড়ঙ্গে নেমে যান মাদক মাফিয়া। সেখানে শাগরেদরা সমস্ত বন্দোবস্ত করে রেখেছিল।

১৭ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

টানা সুড়ঙ্গপথ পাড়ি দেওয়ার জন্য চ্যাপোর জন্য রাখা ছিল একটি বাইক। ছিল আলোর ব্যবস্থাও। বাইকে চড়ে জেলের নীচের সুড়ঙ্গপথে পালিয়ে যান চ্যাপো। কারারক্ষীদের যখন টনক নড়ে তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। জেলের কক্ষ ফাঁকা। সুড়ঙ্গ দেখে মাথায় হাত পড়ে রক্ষীদের। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পোড়ে মেক্সিকোর।

১৮ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

২০১৫ সালের জুলাইয়ে দেশের ‘সবচেয়ে সুরক্ষিত’ কারাগারের রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বারের জন্য। ছ’মাস তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজেছিল মেক্সিকো প্রশাসন। এল চ্যাপোর কার্টেলেরই কয়েক জন সদস্যের তথ্যের ভিত্তিতে সিনালোয়া রাজ্যের কুলিক্যানের লস মোচিসের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ধরা হয় এই মাদক মাফিয়াকে।

১৯ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

পালানোর ছকও ভালমতো সাজিয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পাঁচ জনের মৃত্যুর বিনিময়ে এল চ্যাপোকে হাতে পায় মেক্সিকো সেনা। অনেক আইনি জটিলতার পরে তাঁকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণ করানো হয়। তিন মাসের বিচারপ্রক্রিয়ায় ৫৬ জন মাদক মাফিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এঁদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন তাঁরই একসময়ের ছায়াসঙ্গী।

২০ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

দীর্ঘ দিন এল চ্যাপোকে হেফাজতে চায় আমেরিকা। ২০১৪ সালে প্রথম গ্রেফতারির পরে সেই দাবি মানেনি মেক্সিকো প্রশাসন। বিশ্বের এই মাদক-ত্রাসকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে রাজি হয় তারা। নিউ ইয়র্কের জেলে নিয়ে আসা হয় এল চ্যাপোকে। কড়া পাহারায় শুরু হয় বিচার পর্ব।

২১ ২১
 Mexican drug lord El Chapo

৬১ বছরের এল চ্যাপোর বিরুদ্ধে দশ দফা অভিযোগ এনেছিল মার্কিন পুলিশ। প্রত্যেকটিতেই দোষী সাব্যস্ত করে কোর্ট। বিশ্বের একটা বড় অংশে মাদক চক্র চালানো, পাচার তো বটেই, খুন, ঘুষ নেওয়া, অস্ত্র কারবার, জেল ভাঙার মতো অপরাধও ছিল সেই তালিকায়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেওয়া হয় মেক্সিকোর ত্রাস এই মাদক মাফিয়াকে। জেলেই আপাতত সাজা ভোগ করছেন এল চ্যাপো।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি