Traditional Bengali Sweets

চৈত্র সংক্রান্তিতে শেষ পাতে থাক বাংলার হারিয়ে যাওয়া মিষ্টি, বানাতে পারেন খইয়ের লাবন

রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ। নববর্ষে তো ভূরিভোজ হবেই। কিন্তু তার আগে চৈত্র সংক্রান্তির দিন ও পার বাংলার হারিয়ে যাওয়া মিষ্টির স্বাদ নিলে মন্দ কী? বানাতে পারেন খইয়ের লাবন। রইল রেসিপি।

Advertisement
সায়ন্তনী মহাপাত্র
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫৭
  How to Make a Traditional Sweet Khoier Labon on Chaitra Sankranti 2023

কনকচূড় ধানের খইয়ের ছাতু, চিনি আর সুগন্ধি মশলা দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির অদ্ভুত নামের পিছনেও আছে এক ভারী মজার গল্প। ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।

দেশ, গাঁ-গঞ্জ, জাতপাত, ধর্ম , বর্ণ— মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করার কত ফন্দিই না আঁটা হয়। ভাবে, বেশ আইন করে, খাতায়কলমে, একখানা জব্বর পাঁচিল তুলে দিলেই বুঝি সব ভুলে যাবে মানুষ। কিন্তু তা আবার হয় নাকি!

এই ও পাড়ার পিন্টু জেঠুর মাকেই দেখা যাক না। সেই দেশভাগের সময় রাতারাতি ঘরবাড়ি ছেড়ে একরত্তি জেঠুকে কোলে নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন এ দেশে। কিন্তু এখনও, এই আশি বছর পার করেও, মনখানা তাঁর পড়ে আছে কাঁটাতারের ও পারে। সেই গরম ভাতের গন্ধমাখা নিকোনো মাটির উঠোন, খালবিলে কলাপাতার ভেলা করে এ বাড়ি-ও বাড়ি ভেসে যাওয়া, পৌষের ঢেঁকিতে পাড় দেওয়ার ঢিপঢিপ শব্দ আর চৈত্র সংক্রান্তিতে চৌরাস্তার মোড়ে ভাইবোন মিলে ছাতু ওড়ানো— এ সব কিছু দিয়ে তিনি নিজের মনের মধ্যে আর একটা দেশ বানিয়ে বসে আছেন। লোকে হাসে বলে কিছু বলেন না বটে, কিন্তু খানিক একলা হলেই মনের মধ্যে ডুব দিয়ে একটুখানি ঘুরে আসেন ও দেশ থেকে।

Advertisement

পিন্টু জ্যাঠা শত রাগ করেও তাঁর মাকে আটকাতে পারেন না বারব্রতর দিনে ভাল-মন্দ রাঁধা থেকে। চৈত্র সংক্রান্তির ভোর হতেই স্নান সেরে বুড়ি গুচ্ছের সব্জি কেটে পাঁচন রান্নার জোগাড় করে ফেলবেন। সে যতই বৌমারা রাগ দেখাক, বুড়ির খালি এক কথা, বছরকার দিনে এ সব খেলে শরীর মজবুত হয়, অসুখ দূরে থাকে। শুধু কি পাঁচন, নিভু-নিভু আঁচে তার পরে ভাজা হবে এক কড়াই খই। হামানদিস্তায় কুটে, সুগন্ধি মশলা আর গুড়ে মাখিয়ে, সন্দেশের ছাঁচে ছাপ তুলে, তৈরি হবে লাবন। সেই লাবন বয়ামে রেখে তিনি বিড়বিড় করেন আর বলেন ‘‘আর একটি বারও যদি যাইতে পারতাম।’’ সেই আক্ষেপ শুনে তখন মনে হয়, সত্যি যদি এই কাঁটাতারের বেড়া পারত তাঁর কষ্টের স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে।

  How to Make a Traditional Sweet Khoier Labon

কী ভাবে বানাবেন খইয়ের লাবন? ছবি: সায়ন্তনী মহাপাত্র।

আসলে কোনও কিছুই এই বর্ডারের কম্ম নয়। খাতায়কলমে বাংলাকে ভাগ করলেও, বাঙালির স্বাদের স্মৃতির বর্ণ,গন্ধ কি ভাগ করতে পেরেছে কাঁটাতার? শুধু নাম আলাদা হলেই বুঝি লাবন আর কারকাণ্ডা আলাদা হয়ে যাবে?

বিশ্বাস না হলে এক বার রাজা রামমোহন রায়ের জন্মস্থান খানাকুল ঘুরে আসা যেতে পারে। সেখানে দোকানে দোকানে লাবনের মতো দেখতে এক মিষ্টি থরে থরে সাজানো। ওর নাম ‘কারকাণ্ডা’। কনকচূড় ধানের খইয়ের ছাতু, চিনি আর সুগন্ধি মশলা দিয়ে তৈরি এই মিষ্টির অদ্ভুত নামের পিছনেও আছে এক ভারী মজার গল্প।

উনিশ শতকে স্থানীয় জমিদার ধরণীমোহনের জন্য কৃষ্ণনগরের এক মোদক কুঞ্জবিহারী এই মিষ্টি বানিয়েছিলেন। বিনা দুধের এই মিষ্টি খেয়ে আপ্লুত হয়ে ‘‘এ কার কাণ্ড, এ কার কাণ্ড’’ বলে জমিদারবাবু সেই মোদকের খোঁজ করেছিলেন। সেই থেকেই এই অদ্ভুত নাম। লাবনের মতো এই কারকাণ্ডাও এখন বিস্মৃতপ্রায়।

সে বুড়ি যতই জ্যাঠার বকা খেয়ে মাথা নেড়ে বলুক, ‘‘ভোলা কি সহজ?’’ তবে আমি বেশ জানি, সারা জীবন মনের মধ্যে আরও একটি দেশ নিয়ে বাস করা এই মানুষগুলোর সঙ্গে সঙ্গে, অচিরেই এই স্বাদস্মৃতি কালের গহ্বরে তলিয়ে যাবে।

খইয়ের লাবন

উপকরণ:

খই: ২৫০ গ্রাম

গুড়: ১/৪ কাপ

মৌরি: ১ চা চামচ

গোলমরিচ: ৫-৬ টি

ছোট এলাচ: ৩ টি

ঘি: ১ চামচ

প্রণালী:

একটি বড় কড়াইতে খুব কম আঁচে খইগুলিকে ভেজে নিন। ক্রমাগত নাড়তে থাকবেন যাতে খইয়ে কোনও রং না ধরে। মচমচে ভাজা হলে ঠান্ডা করে এর ছাতু বানান। পাশাপাশি শুকনো খোলায় বাকি মশলাগুলি ভেজে গুঁড়িয়ে রাখুন।

এ বার একটি পাত্রে গুড় আর ১ চামচ জল দিয়ে ফুটিয়ে ঘন রস তৈরি করুন। একটু বড় ছড়ানো পাত্রে খইয়ের ছাতু আর মশলা মেশান। একটু একটু করে গরম রস নিয়ে একটা কাঠের হাতা দিয়ে মেশান। এই মেশানোটা খুব ভাল হওয়া জরুরি।

ছাতুর এই মিশ্রণটি নাড়ুর মতো পাকানো গেলে, সন্দেশের ছাঁচে ঘি মাখিয়ে মিশ্রণটি দিয়ে লাবন বানিয়ে নিন। ছাঁচে না ফেলতে চাইলে নাড়ুর মতো গোল করেও লাবন বানানো যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন