Mathematical Ability in Boys and Girls

মেয়েদের কি অঙ্কে ‘মাথা’ কম? প্রাথমিক স্কুলে বড় আকারের সমীক্ষা চলল ফ্রান্সে, রিপোর্ট কী

বছর সাতেক আগে ফ্রান্সের স্কুলস্তরের প্রায় ২৫ লক্ষ ছেলে ও মেয়ের গাণিতিক দক্ষতা নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু করেছিল সে দেশের সরকার। সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে নতুন গবেষণা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৫
New study adds to mounting case against age-old notion that boys are naturally born better at Math

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অনেকেই মনে করেন, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অঙ্কে ‘কাঁচা’! সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি লিঙ্গভেদে অঙ্কের বোঝাপড়াও ভিন্ন হয়? নতুন গবেষণা বলল— না, শৈশবের মস্তিষ্ক ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে অঙ্কে একই রকমের পারদর্শী বা একই রকম দুর্বল। লিঙ্গের নিরিখে কোনও প্রভেদ নেই অঙ্ক বোঝার ক্ষেত্রে।

Advertisement

বছর ২০ বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এলিজ়াবেথ স্পেল্ক ঠিক এই কথাটাই জোরের সঙ্গে বলেছিলেন কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞান ও অঙ্কের প্রতি ঝোঁক কিংবা বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক বা লিঙ্গগত কারণে কোনও পার্থক্য নেই। থাকলে তা শৈশবেই স্পষ্ট হয়ে যেত। ২০০৫ সালে ‘আমেরিকান সাইকোলজিস্ট’ নামে এক জার্নালে সেই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে আবারও এক নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন স্পেল্ক এবং ইউরোপীয় গবেষকদের একটি দল, যেখানে আগের সিদ্ধান্তের সপক্ষে আরও শক্তিশালী যুক্তি খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। বছর সাতেক আগে ফ্রান্সের স্কুলস্তরের প্রায় ২৫ লক্ষ ছেলে ও মেয়ের গাণিতিক দক্ষতা নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু করেছিল সে দেশের সরকার। সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে স্পেল্কদের নতুন গবেষণা।

২০১৮ সালের ওই সমীক্ষা বলছে, প্রাক্‌প্রাথমিক স্তরের ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে গাণিতিক দক্ষতায় বিশেষ ফারাক নেই। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়ার মাত্র চার মাস পর থেকেই দেখা গিয়েছে, অঙ্কে মেয়েদের পিছনে ফেলে সামান্য এগিয়ে গিয়েছে ছেলেরা। ছেলেদের অঙ্কের প্রতি ঝোঁকও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। উঁচু শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যত সময় পেরিয়েছে, ততই মেয়েদের তুলনায় গণিতে আরও এগিয়ে গিয়েছে সহপাঠী ছেলের দল। কাজেই এর থেকে অনেকেই মনে করতে পারেন, ছেলেদের অঙ্কের ‘মাথা’ মেয়েদের তুলনায় ভাল। অনেকে তেমনটা বিশ্বাসও করেন। কিন্তু স্পেল্কের যুক্তি, তা-ই যদি হয়, তা হলে শিশুকাল কিংবা প্রাক্‌প্রাথমিক স্তর থেকেই এই ফারাক চোখে পড়া উচিত ছিল। অথচ সমীক্ষা বলছে অন্য কথা! ২৫ লক্ষ শিশুর উপর দীর্ঘ সময় ধরে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রাক্‌প্রাথমিক স্তরে অঙ্কে ছেলে-মেয়ে উভয়েই সমান দক্ষ।

এর আগে ২০০৩ সালে ৪০টি দেশের ২,৭০,০০০ এরও বেশি কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে একই ধাঁচের একটি পৃথক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা করেছিলেন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কেলগ স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক পাওলা স্যাপিয়েঞ্জা ও তাঁর সহকর্মীরা। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, মেয়েরা যখন শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রে ছেলেদের সমান সুযোগসুবিধা পায়, তখন তাদের অঙ্কে প্রাপ্ত নম্বরে তথাকথিত ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ও থাকে না। এর থেকেই গবেষকেরা সিদ্ধান্তে পৌঁছোন, অঙ্কে কার মাথা কেমন হবে, তা লিঙ্গের উপর নয়, বরং পারিপার্শ্বিক আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সম্পর্কিত। আশ্চর্যজনক ভাবে, যে সব দেশে ছেলে-মেয়েদের সমান সুযোগসুবিধা রয়েছে, সেই দেশগুলিতে এই বৈষম্য নেই। বরং সে সব দেশে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অঙ্ক ও বিজ্ঞানে মেয়েরাই ছেলেদেরকে ছাপিয়ে গিয়েছে!

তা হলে পরিসংখ্যান বলছে, শিশুকালে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে গাণিতিক দক্ষতায় কোনও পার্থক্য থাকে না। ফ্রান্সের মতো দেশে একজন ছেলে ও মেয়ের আর্থসামাজিক অবস্থাতেও বড়সড় বৈষম্য নেই। তা সত্ত্বেও সমীক্ষায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা অঙ্কে পিছিয়ে পড়ল কেন? এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। এই ফারাক সামাজিক কারণে, মেয়েদের শৈশব থেকে যে ভাবে বড় করে তোলা হয় সেই কারণে, না কি দীর্ঘ সামাজিক ইতিহাস এর পিছনে রয়েছে, তা নিয়ে মতভেদও রয়েছে। পরিবার তথা সমাজ গোড়া থেকেই ছেলে-মেয়ের মধ্যে যে বৈষম্য তৈরি করে দেয়, তারই প্রভাব শিশুর গাণিতিক দক্ষতায় পড়ে কি না, সে সবও দেখার রয়েছে। তবে তা আপাতত স্পেল্কদের আলোচনার বিষয় নয়। আপাতত শুধু জেনে নেওয়ার ছিল, মেয়েরা ছেলেদের থেকে লিঙ্গগত কারণেই অঙ্কে কাঁচা কি না! উভয়ের মস্তিষ্কে এমন কোনও ফারাক রয়েছে কি না, যা অঙ্ক বোঝায় ফারাক গড়ে দেয়। সেই সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিল সমীক্ষা।

Advertisement
আরও পড়ুন