Father-Daughter Incest

পিতা-কন্যার মিলনে সন্তান! মানুষের ইতিহাসে প্রাচীনতম নিদর্শন মিলল ইটালির ৩৭০০ বছরের পুরনো কবরে

সমাধিস্থ মানুষজনের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল, বা আদৌ কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখেছেন, সমাধিস্থ অনেকেরই জিনগত সংযোগ ছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
দক্ষিণ ইটালির সেই সমাধিস্থল।

দক্ষিণ ইটালির সেই সমাধিস্থল। ছবি: সংগৃহীত।

হাজার হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষের ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক ছিল, সেই হদিস আগেই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি তখন খুব একটা অস্বাভাবিক বলেও ভাবা হত না। তারও প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ বার, ৩,৭০০ বছর আগে এক বাবা এবং কন্যার মধ্যে যৌনসম্পর্কের প্রমাণ পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। সেই বাবা এবং কন্যার মিলনে জন্ম নিয়েছিল এক সন্তানও। তার ডিএনএ পরীক্ষা করেই বিজ্ঞানীরা সেই সম্পর্কের হদিস পেয়েছেন, যা এখন পর্যন্ত এই ধরনের সম্পর্কের প্রাচীনতম নথিপ্রমাণ।

Advertisement

ইটালির ক্যালাব্রিয়ায় গ্রোট্টা ডেল্লা মোনাকা সমাধিস্থলে কিছু দেহাবশেষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন জার্মানির এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ। খ্রিস্ট জন্মের ১৩৮০ বছর আগে থেকে সেখানে কবর দেওয়া হত মানুষ জনকে। ১৭৮০ সাল পর্যন্ত ওই সমাধিস্থলে কবর দেওয়া হয়েছে। ওই সমাধিস্থলে এক কিশোরের হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করে তারা ইঙ্গিত পেয়েছেন, ৩,৭০০ বছর আগে বাবা এবং কন্যার মধ্যে যৌনমিলনে তার জন্ম। সেই নিয়ে একটি প্রতিবেদন ‘কমিউনিকেশনস বায়োলজি’-তে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই সমাধিস্থলে প্রায় ২৩ জনের হাড়গোড়ের ডিএনএ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তাঁদের জিনগত উৎস, প্রেক্ষাপট খোঁজার জন্য পরীক্ষাটি করা হয়। দক্ষিণ ইটালির সেই সমাধিস্থল এতটাই পুরনো, যে কবরের ভিতরে কঙ্কালগুলি ভেঙে গিয়েছে। এক জনের হাড়ের সঙ্গে অন্যের হাড় মিশে গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা যে ২৩ জনের হাড় পরীক্ষা করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের লিঙ্গও চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন মহিলা, আট জন পুরুষ। তাদের ডিএনএ-র মাইটোকনড্রিয়াল এবং ওয়াই-ক্রোমোজম ভিন্ন। এই জিনগত বৈশিষ্ট্য মানুষ পায় তার বাবা-মায়ের থেকে। এই দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যে ২৩ জনের হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে, তাঁরা একই গোষ্ঠীর নয়। তাদের জিনগত প্রেক্ষাপটও ভিন্ন।

সমাধিস্থ মানুষজনের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল, বা আদৌ কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখেছেন, সমাধিস্থ অনেকেরই জিনগত সংযোগ ছিল। দু’জনের ক্ষেত্রে তাঁদের অভিভাবকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক থাকার হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এ-ও লক্ষ্য করেছেন, দক্ষিণ ইটালির ওই সমাধিস্থলে অনেককেই তাঁর প্রিয়জনের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়েছে। তাঁদের মতে, সেটাই হয়তো তখন রীতি ছিল। এক মায়ের সমাধির কাছে মিলেছে তাঁর কন্যার সমাধি।

ওই সমাধিতেই এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কবরের পাশে মিলেছে এক কিশোরের দেহাবশেষ। তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষা করেই বিজ্ঞানীদের সামনে এসেছে এক তথ্য। ওই বাবা এবং পুত্রের ডিএনএ-র ‘রানস অফ হোমোজ়াইগোসিটি’ (আরওএইচ) পরিমাপ করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।

এই আরওএইচ কী? অভিভাবকের থেকে সন্তানের শরীরে যে জিন বাহিত হয়, তাকে বলে আরওএইচ। পরিবারের বাইরে কারও সঙ্গে যৌনমিলনের মাধ্যমে সন্তান জন্মালে, সেই অপত্যের শরীরে জিনের মিশ্রণ ঘটে। সে ক্ষেত্রে আরওএইচ অনেক কমে যায়। আবার একই পরিবারের দুই সদস্যের মধ্যে যৌনমিলনের ফলে সন্তান জন্মালে সেই সন্তানের মধ্যে আরওএইচ অনেক বেশি মাত্রায় থাকে।

গ্রোট্টা ডেল্লা মোনাকা সমাধিস্থলে যাদের হাড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে, তাঁদের সকলের মধ্যে আরওএইচ-এর মাত্রা বেশি দেখা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই অভিভাবক পরস্পরের নিকট বা দূরের আত্মীয় ছিলেন। কিন্তু ওই কিশোরের ডিএনএ-তে সবচেয়ে বেশি আরওএইচ মিলেছে। গবেষকেরা এর পর আরও পরীক্ষা করে দেখেছেন, ওই কিশোরের বাবা তার মায়েরও বাবা। তার বাবার সমাধিও ছিল তারই পাশে। তবে কিশোরের মায়ের সমাধির হদিস মেলেনি।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক, সন্তান উৎপাদন অতীতে আধুনিক মানুষের মধ্যে যে ছিল না, তা নয়। বিজ্ঞানীরা তার প্রমাণ পেয়েছেন ভূরি ভূরি। প্রাচীন মিশরে রাজ পরিবারে ভাই-বোনের বিয়ে হত। আয়ার্ল্যান্ডে প্রস্তর যুগের এক ব্যক্তি দেহাবশেষ মিলেছিল। তা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, তাঁর বাবা-মা সম্পর্কে ভাই-বোন ছিলেন। তারও আগে নিয়ানডারথালদের মধ্যে এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। বহু নিয়ানডারথালদের জিন পরখ করে দেখা গিয়েছে, তাদের বাবা-মা একই বাবা-মায়ের সন্তান। বিজ্ঞানীরা সেই মিলনকে বলছেন ‘দ্বিতীয় ডিগ্রি’। তবে অভিভাবক এবং সন্তানের মধ্যে যৌনমিলন এবং সন্তান উৎপাদনের প্রমাণ খুব একটা বিজ্ঞানীদের হাতে আসেনি।

অভিভাবক এবং সন্তানের মধ্যে যৌন সংসর্গকে বিজ্ঞানীরা ‘প্রথম ডিগ্রি মিলন’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে যে অপত্য জন্মায়, তার জিনগত সমস্যা থাকতে পারে। দক্ষিণ ইটালির সমাধিস্থলে মেলা সেই কিশোরের মধ্যে যদিও জিনগত সমস্যা ধরা পড়েনি। কেন গ্রোট্টা ডেল্লা মোনাকায় হাজার হাজার বছর আগে কন্যার সঙ্গে যৌনমিলন হয়েছিল বাবার, তা যদিও এখনও স্পষ্ট নয় বিজ্ঞানীদের কাছে। বিষয়টি ‘বিরল’ বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। ওই কবরগুলি দেখে তাঁরা নিশ্চিত, যে সেগুলি সাধারণ মানুষের। রাজবংশের ক্ষেত্রে সম্পত্তি কুক্ষিগত করে রাখার জন্য অতীতে ভাই-বোন বা পরিবারের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার চল ছিল। কিন্তু গ্রোট্টা ডেল্লা মোনাকায় কেন তা হয়েছিল, তা ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের। সেই ঘটনা কি সমাজে ব্যতিক্রম ছিল, না কি কোনও হিংসার ফল, তা অধরা বলে জানিয়েছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভলিউশনারি অ্যানথ্রোপলজি-র অধ্যাপিকা অ্যালিস মিটনিক।

Advertisement
আরও পড়ুন