Copa America 2021

Copa America 2021: তাঁর হাতই বাঁচিয়ে রাখল মেসির কোপা জয়ের স্বপ্ন, মার্টিনেজে মজে আর্জেন্টিনা

রাতের অন্ধকারে বাবাকে কাঁদতে দেখেছেন। অর্থাভাব ছোটবেলা থেকেই যেন তাঁর মধ্যে দিয়েছিল লড়াইয়ের মন্ত্র।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২১ ১১:১৮
কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে তিনটি কিক আটকে নায়ক মার্টিনেজই।

কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে তিনটি কিক আটকে নায়ক মার্টিনেজই। ছবি: টুইটার থেকে

আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিজ্ঞতা মাত্র সাতটি ম্যাচের। সেই গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের হাতই কোপার ফাইনালে নিয়ে গেল আর্জেন্টিনাকে। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে তিনটি কিক আটকে নায়ক মার্টিনেজই।

রাতের অন্ধকারে বাবাকে কাঁদতে দেখেছেন। অর্থাভাব ছোটবেলা থেকেই যেন তাঁর মধ্যে দিয়েছিল লড়াইয়ের মন্ত্র। ভুলতে পারেন না বাবার কান্না। তবে সেই অভাব দূর করেছিলেন তিনিই। নিজেকে ফুটবল মাঠে উজাড় করে দিতেন। সেই অর্থেই সংসার চলত তাঁদের।

Advertisement

১৬ বছর বয়সে ডাক পান আর্জেন্টিনার যুব দলে। সেখান থেকেই নজরে আসেন আর্সেনাল দলের স্কাউটদের। প্রশিক্ষণ পান আর্সেনালের যুব দলেও। সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেও খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি।

ইউরোপিয়ান পাসপোর্ট না থাকায় শুধুই ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে হত তাঁকে। ইংরেজি না জানায় বিপদে পড়েন ভাষা নিয়েও। পরিবারের থেকে দূরে এসে প্রথম বছর বেশ কষ্টেই কাটে মার্টিনেজের। তবে আর্সেনালের হয়ে প্রথম দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ আসছিল না কিছুতেই।

সুযোগ আসে আর্সেনালের প্রধান গোলরক্ষক বার্নড লেনো চোট পাওয়ায়। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজেকে প্রমাণ করেন মার্টিনেজ। আর্সেনালের ১৪তম এফএ কাপ জয়ে বড় ভূমিকা নেন তিনি। বুঝিয়ে দেন সুযোগ পেলে তৈরি মার্টিনেজও।

অ্যাস্টন ভিলায় যোগ দেন ২০২০ সালে। আর্সেনালের হয়ে কেরিয়ার শুরু করলেও লোনে ঘুরতে হয়ে এ ক্লাব থেকে ওই ক্লাব। শেষ পর্যন্ত গত বছর তাঁকে দলে নেয় অ্যাস্টন ভিলা। ৩৮টি ম্যাচের মধ্যে ১৫টি ম্যাচে গোল খাননি তিনি। সেই মার্টিনেজের ওপরই সেমিফাইনালে ভরসা রেখেছিলেন প্রশিক্ষক লিয়োনেল স্কালোনি।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ৯০ মিনিট শেষে ১-১ শেষ হয় আর্জেন্টিনা বনাম কলম্বিয়া ম্যাচ। এক দিকে কলম্বিয়ার গোলের নীচে উরুগুয়ে ম্যাচের নায়ক অভিজ্ঞ ডেভিড অস্পিনা। অন্য দিকে মার্টিনেজ।

কলম্বিয়ার হয়ে দ্বিতীয় পেনাল্টি কিকটি নিতে এসেছিলেন ডেভিনসন স্যাঞ্চেজ। কথা বলে তাঁর মনঃসংযোগ ভাঙতে থাকেন মার্টিনেজ। শুধু কথায় নয়, তিনি যে কাজেও পারদর্শী বুঝিয়ে দেন ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিকটি আটকে।

আর্জেন্টিনার হয়ে পরের কিকটি বাইরে মারেন রড্রিগো ডি পল। সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। তবে মার্টিনেজ নিজের লক্ষ্যে অবিচল। কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার ইয়েরি মিনা কিক করতে এলে ফের তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন মার্টিনেজ। মিনাকে যেন এক প্রকার বাধ্য করলেন ওঁর কথা শুনতে। একই ভাবে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে গোল বাঁচালেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক। হাসি ফুটল মেসির মুখে।

করডোনার কিক আটকে দিলেন মার্টিনেজ।

করডোনার কিক আটকে দিলেন মার্টিনেজ। ছবি: রয়টার্স

সেই হাসি আরও চওড়া হল এডউইন করডোনার কিক আটকে দিতে। এ বার বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে বল আটকালেন মার্টিনেজ। কোপার ফাইনালে উঠল আর্জেন্টিনা। এ বার সামনে ব্রাজিল।

দলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় গোলরক্ষক হয়ে থাকাই যেন অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল মার্টিনেজের। ২০১২ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে আর্সেনালের সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেও সেই ভাবে নজর কাড়তে পারেননি। বিভিন্ন দলে লোনে পাঠানো হয় তাঁকে। তবে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতেন না কোনও দলেই।

অ্যাস্টন ভিলায় এসে ভাগ্য বদলায়। তাঁকেই প্রথম গোলরক্ষকের দায়িত্ব দেয় প্রিমিয়ার লিগের এই ক্লাব। ১৫টি ম্যাচে নিজের জালে বল ঢুকতে দেননি তিনি। ডাক আসে জাতীয় দলেও।

চিলির বিরুদ্ধে প্রথম খেলতে নামেন বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে। ১-১ ড্র হয় সেই ম্যাচ। এ বারের কোপায় পাঁচটি ম্যাচে খেলেন মার্টিনেজ। তিনটি ম্যাচে কোনও গোল খাননি। ১০টি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন