অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উল্লাস। মেলবোর্নে প্রথম দিনের খেলায়। ছবি: রয়টার্স।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় জিতে যাওয়ার পরেও শুক্রবার মেলবোর্নে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের প্রথম দিন ভিড় জমিয়েছিলেন ৯৪,১৯৯ জন দর্শক। অ্যাশেজ়ের ইতিহাসে কোনও টেস্টে এক দিন এত দর্শক খেলা দেখতে আসেননি। সেই ৯৪,১৯৯ দর্শকের সামনে দাপট দেখালেন দু’দলের বোলারেরা। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৫২ রানে অল আউট হয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়াকে বাগে পেয়েও সুবিধা করতে পারল না ইংল্যান্ড। ব্যাটিং ব্যর্থতায় তারাও ১১০ রানে অল আউট হয়ে গেল। প্রথম দিনে শেষে ইংল্যান্ডের থেকে ৪৬ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দিনের খেলা দেখে আলোচনা শুরু হয়েছে যে, এই টেস্টও না দু’দিনে শেষ হয়ে যায়।
পার্থকেও ছাপিয়ে গেল মেলবোর্ন। চলতি অ্যাশেজ়ের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন পার্থে দু’দল মিলিয়ে ১৯ উইকেট পড়েছিল। মেলবোর্নে পড়ল ২০ উইকেট। দু’দলই অল আউট হল। এর আগে ১৯০৯ সালে অ্যাশেজ়ে এই মেলবোর্নেই এক দিনে ২০ উইকেট পড়েছিল। ১১৬ বছর পর আবার নজির হল সেই মাঠেই।
মেলবোর্নে টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত করেন বোলারেরা। এই সিরিজ়ে ইংল্যান্ডকে বার বার সমস্যায় ফেলা ট্রেভিস হেড আউট হন ১২ রানে। প্রথম চার ব্যাটারের কেউ রান পাননি। পঞ্চম উইকেটে উসমান খোয়াজা ও অ্যালেক্স ক্যারে ছোট জুটি বাঁধেন। কিন্তু তাঁরাও বড় রান করতে পারেননি। খোয়াজা ২৯ ও ক্যারে ২০ রান করেন।
অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন আরও একটি ম্যাচে ব্যর্থ। আইপিএলের নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স ২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় তাঁকে কেনার পর থেকে ব্যাটে রান নেই গ্রিনের। এই ম্যাচে ১৭ রান করেন তিনি। পেসার মাইকেল নেসের দলের হয়ে সর্বাধিক ৩৫ রান করেন। তাঁর ব্যাটে দেড়শো পার হয় অস্ট্রেলিয়ার। শেষ পর্যন্ত ৪৫.২ ওভারে ১৫২ রানে অল আউট হয়ে যান স্টিভ স্মিথেরা।
ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল জশ টং। ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। গাস অ্যাটকিনসন নিলেন ২ উইকেট। ব্রাইডন কার্স ও অধিনায়ক স্টোকসের ঝুলিতে ১ করে উইকেট।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ইংল্যান্ডেরও খেলতে সমস্যা হবে। তার পরেও আশায় বুক বেঁধেছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু শুরুতেই মিচেল স্টার্ক বুঝিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ডের পেসারেরা যে কাজটা করেছেন, সেটা আরও ভাল ভাবে করতে পারেন তাঁরা। বেন ডাকেটকে (২) আউট করে প্রথম ধাক্কা দেন তিনি। তার পর থেকে টপ অর্ডারের আয়ারাম-গয়ারাম দশা। জ্যাক ক্রলি (৫), জেকব বেথেল (১) ও জো রুট (০) ব্যর্থ। ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ঘরের মাঠে এত ভাল খেলে। রুট একের পর এক শতরান করেন। কিন্তু বিদেশের মাঠে তাঁদের ব্যাটিং অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। ঘরের মাঠে পাটা উইকেট বানিয়ে রানের পাহাড় গড়ে কি আখেরে নিজেদেরই ক্ষতি করেছে তারা? চলতি অ্যাশেজ় সিরিজ় তো সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।
১৬ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটেন হ্যারি ব্রুক। উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা না করে বড় শট খেলা শুরু করেন তিনি। স্টার্ক হোক বা স্কট বোলান্ড, কাউকে রেয়াত করছিলেন না। কিন্তু কত ক্ষণ টানবেন তিনি। ৪১ রান করে বোলান্ডের বলে আউট হয়ে ফেরেন ব্রুক। অধিনায়ক স্টোকস ১৬ রান করে নেসেরের শিকার হন।
গাস অ্যাটকিনসন না থাকলে ইংল্যান্ড ১০০ রানও করতে পারত না। ন’নম্বরে নেমে ২৮ রান করেন তিনি। ফলে শেষ পর্যন্ত ১০০-র গণ্ডি টপকায় দল। মাত্র ২৯.৫ ওভারে ১১০ রানে অল আউট হয়ে গেল ইংল্যান্ড। ৩০ ওভারও যদি একটা দল খেলতে না পারে, তা হলে তারা টেস্ট জিতবে কী ভাবে? তা-ও আবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে? এই ইনিংস অধিনায়ক স্টোকস ও কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দিল।
অস্ট্রেলিয়ার পেসারেরাও নিজেদের মধ্যে ১০ উইকেট ভাগ করে নিলেন। নেসের ৪, বোলান্ড ৩, স্টার্ক ২ ও ক্রিন ১ উইকেট নিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া মাত্র এক ওভার ব্যাট করেছে। ৪ রান করেছে তারা। অর্থাৎ, প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ৪৬ রানে।